যুগান্তর : বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নতুন আরেক পানিপথ করিডোর নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ভারত সরকার। এর নির্মাণ ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি রুপি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮ রাজ্যে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ দুটোই কমবে। সোমবার ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর দেয়া হয়েছে। কবে থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে প্রতিবেদনে তা জানানো হয়নি।
ইকোনমিক টাইমস জানায়, নতুন এ পানিপথ করিডোরের দৈর্ঘ্য হবে ৯০০ কিলোমিটার। এই পথ ব্যবহার করে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে মালবাহী জাহাজ পাঠানো হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হলদিয়া থেকে শুরু হবে। সুন্দরবন হয়ে সেটি বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে মিশবে। সেখান থেকে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে পানিপথ শেষ হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ যুগান্তরকে জানিয়েছে, ভারতের এ প্রকল্প নিয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ নৌ-প্রোটোকল চুক্তি অনুযায়ী, দু’দেশের মধ্যে এখনও নৌ যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। চুক্তি অনুসারে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মালবাহী জাহাজ চলাচল করে আসছে।
ভারতের শিপিং সেক্রেটারি গোপাল কৃষ্ণ বলেন, ‘এ প্রকল্পের বিস্তারিত নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে তা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সংযুক্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। আর মালবাহী জাহাজ পরিবহন খরচও বহু কমে যাবে।’ বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের মহাসড়কের যোগাযোগ একেবারে অনুপযোগী। এছাড়া সড়কের কারণে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক বেশি পড়ে। সময়ও লাগে বেশি। ভারতের মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, পানিপথটি বাস্তবায়িত হলে পণ্য পরিবহন খরচ কমে যাবে ৭০ ভাগ। এরই মধ্যে হলদিয়া ও এলাহাবাদের মধ্যে গঙ্গা নদীতে সরকার একটি পানিপথ উন্নয়নে কাজ করছে। এর দৈর্ঘ্য ১৬২০ কিলোমিটার। খরচ পড়ছে ৪৫০০ কোটি রুপি। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রেও এ পানিপথ ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে ৪,০৯৫ কিলোমিটার সীমান্ত। এর মধ্যে ১১১৬ কিলোমিটার নদীবিধৌত। সচিব কৃষ্ণা বলেন, ‘বাংলাদেশ শিপিংয়ের ক্ষেত্রে ভারতের বন্দরগুলো ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কলম্বো বা সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে বাংলাদেশ এখন ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছে। কলম্বোতে আমাদের কন্টেইনার চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কারণ, এখন এসব কাজ আমাদের বন্দরগুলোতেই হচ্ছে।’ সম্প্রতি ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিদেশি জাহাজগুলোকে দেশটির বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুর ও কলম্বোকে যাতে তারা কার্গো চলাচলের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে সে চেষ্টাই করা হচ্ছে। সচিব কৃষ্ণা বলেন, দীর্ঘমেয়াদে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলে দুটি বন্দর উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারত।
আপনার মতামত লিখুন :