মতিনুজ্জামান মিটু: বাণিজ্যিক চাষাবাদের চাপে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছে অসাধারণ স্বাদের আঙ্গুরপেয়ারার মতো স্মৃতিময় অনেক ফল। আঙ্গুরের মতো থোকায় থোকায় ধরে বলে হয়তো এর নাম আঙ্গুরপেয়ারা। অনেকে একে পলি বা হাজারিপেয়ারাও বলে থাকেন। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষ ছাড়াও অনেক ফলবিদ, কৃষি গবেষক এবং কর্মকর্তারাও জানেননা এইসব ফলের নাম।
ময়নামতি পাহাড়ে আগে পেয়ারার মতো দেখতে একধরনের ফল পাওয়া যেত। মিষ্টি স্বাদের এই ফল পাকলে ভিতরটা লাল হয়ে যেত। মানুষ মজা করে এই ফল খেত।
এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট, কৃষি উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচীর প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, স্থানীয় ভাষায় এই ফলটিকে ‘গয়াম’ বলা হতো। ছোট ঝোপালো আকারের ছোট পাতার এই গাছে আলাদা আলাদাভাবে ফল ধরে। এটিও পেয়ারার একটি জাত। ফলের আকার আঙ্গুরের চেয়ে একটু বড়।
এছাড়া আরও একটি পেয়ারা দেখা যেত। যা আঙ্গুরপেয়ারা নামে পরিচিত। পাকলে আঙ্গুরের সাইজের এই ফল টক মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। তবে কমার্শিয়ালি প্রোফিটেবল না হওয়ায় কেউ আর এই পেয়ারার চাষ করেনা। আগে কেউ কেউ সাদ বাগানের টপে গাছটি লাগাতো, এখন তাও কমে গেছে। হর্টিকালচার সেন্টার (ক্যাটাগরি-১) কুমিল্লা শাসনগাছার উপপরিচালক কৃষিবিদ সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, গাছটি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, রাজধানীর আসাদগেটের হর্টিকালচার সেন্টারে এধরণের একটি পেয়ারার গাছ আছে। যাকে আঙ্গুরপেয়ারা বলে। এই গাছে আঙ্গরের মতো থোকায় থোকায় ফল ধরে। এবিষয়ে হর্টিকালচার উইং এর উপপরিচালক (ফল ও ফুল) কৃষিবিদ এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, আসাদ গেট ফলবিথি হর্টিকালচার সেন্টারের গেটের ধারে একটি হাজারি বা আঙ্গুরপেয়ারার গাছ আছে। আঙ্গুরের আকারের চমৎকার স্বাদের এই পেয়ারার গাছে চিকন পাতা হয়ে থাকে। এটি টবেও লাগানো যায়। সবুজ রং এর ফল পাকলে হালকা হলুদ হয়ে থাকে। পাকলে ভিতরটা নরম হয়ে থাকে। সবুজাভ হলুদ রং এর ডাসা পেয়ারাই সবচেয়ে বেশি মজার। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে চাষের উপযোগি হলেও বাণিজ্যিকভাবে এটি লাভজনক নয়। বণিজ্যিক পেয়ারা চাপে এটি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে সৌখিনভাবে কেউ কেউ চাষ করে থাকেন। আসাদ গেটের ফলবিথি হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ সাবিহা আফরোজ চৈতি বলেন, আমাদের সেন্টারের ১৮/১৯ বছর বয়সের আঙ্গুরপেয়ারা গাছটিতে সারা বছরই ফল ধরে। জাতীয় পরামর্শক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম. এনামুল হক গাছটি এই সেন্টারে আনেন। গুলশান হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ ফাল্গুনী আফরিন বলেন, আমাদের সেন্টারে আঙ্গুরপেয়ারা চারা তৈরী করেছি।