শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৫৬ দুপুর
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৩০ হাজার টাকা পুঁজিতে এখন আয় লাখ টাকা (ভিডিও)

টিভিএনএ রিপোর্ট: রিকশার ব্যবহার দেশের সব জায়গাই। রিকশাকে দেশের প্রধান বাহনও বলা যেতে পারে। কারণ দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ এই বাহনটিই ব্যবহার করে থাকে। জনপ্রিয় এই বাহনটিকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতেই হয়তো শত বছর আগে থেকেই রিকশায় তুলির আঁচড় দিয়ে বাঙলার রূপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু ডিজিটালের ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্য এখন অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। তুলির আঁচড়ের জায়গাটি দখল করেছে ডিজিটাল পেইন্ট। উপজাতি নারী ড চিং চিং। তিনি হারিয়ে যেতে বসা সেই রিকশা পেইন্ট ও উপজাতিদের গহনা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

২০১৪ সালে মাস্টার্স শেষ করে চাকরি না খুঁজে নিজে একটা কিছু করার জন্য ভাবছিলেন, তখন মাথায় আসে প্রায় হারিয়ে যাওয়া রিকশা পেইন্ট ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গহনা নিয়ে কাজ করার বিষয়টি। তিনি বলেন, হস্তশিল্প নিয়ে অনেকেই কাজ করেন। আর গহনারও অনেক দোকান আছে। কিন্তু কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কেউ কাজ করছেন না। যেহেতু রিকশা পেইন্ট দেশীয় ঐতিহ্য আর উপজাতি গহনাও বিলুপ্তির পথে, তাই এ দুটি জিনিস নিয়ে কাজ করলে একদিকে যেমন দেশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করা যাবে, অন্যদিকে ব্যবসাও হবে।

সেই ভাবনা থেকেই ২০১৬ সালের প্রথমদিকে পানির বোতলে রিকসা পেইন্ট দিয়ে শুরু হয় তার প্রতিষ্ঠান ফিনারি’র যাত্রা। শুরুতে পুঁজি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ালেও তার ব্যবসায়িক কৌশল ও ক্রেতাদের আগ্রহের কারণে সেই সমস্যা সফলভাবেই উতরে যান তিনি। নিজের জমানো ও গৃহকর্তার দেয়া সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে এখন তার প্রতি মাসে দুই লাখ টাকার লেনদেন হয়।

ড চিং চিং বলেন, প্রথমে পানির বোতলে রিকসা পেইন্ট দিয়ে অনলাইনে বাজারজাত শুরু করি। বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু একটি পণ্যে না থেকে আরও পণ্য তৈরি করার জন্য ক্রেতাদের থেকে অর্ডার আসতে থাকলো। এক পর্যায়ে চায়ের কেটলি, টি-পট, চায়ের কাপ, কুপি বাতি ও মাউস প্যাডে রিকশা পেইন্ট দিতে শুরু করি। গেল রোজার ঈদে শাড়িতে রিকসা পেইন্ট করে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। এছাড়া অফিস ফাইল, চাবির রিং সহ কৃত্রিম লেদারের ওপর এখন রিকশা পেইন্ট দেয়া হচ্ছে। সামনে শীতে খাদি কাপড় ও শালে এই পেইন্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

ড চিং চিং বলেন, আমি চাই আমার দেশীয় বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে। তাই তাতের শাড়ি, খাদি কাপড় বা দেশীয় অন্য কোনো জিনিস নিয়েই কাজ করবো। আর দেশীয় কোনো পণ্য নিয়ে কাজ করলে তাতে সফল হওয়া সম্ভব। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। এরই মধ্যে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ড চিং চিং ২০১৭ সালে বিডি ওপেন সোর্সের পক্ষ থেকে পেয়েছেন উদ্যোক্তা সম্মাননা।

ফিনারির দুই বছরের এই যাত্রায় অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে হয়েছে। প্রথমে পুঁজির সমস্যা, পরে ঘর থেকে পুরোপুরি সহযোগিতা পেলেও বাইরে থেকে আসে নানান প্রতিবন্ধকতা। এসব কারণে কিছুদিন ফিনারির যাত্রা থেমে থাকলেও গৃহকর্তার অনুপ্রেরণায় আবারও শুরু করে ড চিং চিং।

ফিনারির দুই বছরের এই যাত্রার সাথে এখন জড়িয়ে আছে আরও ১৫ থেকে ২০ জনের উপর্জন। দশ জন শিক্ষার্থীর একটি টিম আছে, যারা শুরু থেকে ফিনারির পণ্য নিয়ে কমিশন ভিত্তিক কাজ করছেন। আর কয়েকজন বেকার মহিলা আছেন যারা পাইকারী মূল্যে মালামাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন।

এরই মধ্যে ফিনারি তিনটি জেলায় ডিলারশিপ দিয়েছে। আরও কয়েকটি জেলায় দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ড চিং চিং বলেন, ফিনারি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে চায়। ফিনারির রিকসা পেইন্ট ও উপজাতি গহনা অনেকের হাতে হাতে করে বিদেশে যাচ্ছে। তবে সরাসরি বাইরে থেকে ব্যবসায়িক অর্ডার না আসলেও তা শিগগিরি হবে বলে আশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়