শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৩ সকাল
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একটি চিঠি এবং না দেখা এক বন্ধুর গল্প

লুৎফর রহমান রিটন : গতকাল ইনবক্সে একটা চিঠি এলো। ছোট্ট একটা চিঠি। কিন্তু চিঠিটা পড়ে অদ্ভুত একটা শিহরণ অনুভব করলাম। চিঠিটা এসেছে চেক রিপাবলিক থেকে। প্রেরকের নাম লিটন। আবুল বাসার লিটন।

লিটন লিখেছে...

‘মাঝ রাতে ঘুম ভেংগেছে। স্বপ্ন দেখে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে একটা ট্রেন। ট্রেনে বাংলাদেশের প্রায় সব কবি সাহিত্যিক যাচ্ছে। আমি যেতে পারছিনা।

প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে একে একে দেখছিলাম আমায় পেরিয়ে যাওয়া মানুষদের মুখগুলো। শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণদা, মহাদেব সাহা, নাট্যকার আতিকুল হক, ইউসুফ বাচ্চু ভাই, বন্যাদি প্রমুখ।

স্বপ্নে সবই দেখা সম্ভব জানি, একটা জানালায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকেও দেখলাম।

একদম পরিস্কার দেখলাম শেষ জানালায় আপনি। আপনার যুবক বয়সের আপনাকে। ঋদ্ধ মোচের আড়ালে দুখি মুখ। এতো পরিস্কার দেখলাম স্বপ্নটা যেন আপনার শ্বাস, গায়ের উত্তাপ এখনো আমি অনুভব করছি।

ভাল থাকবেন ভাই আমার। এই জীবনে আপনার পথে হয়তো হাঁটতে পারার যোগ্যতা আমার হবেনা, তবু আমি হেঁটে চলবো আপনার আদর্শের পথে।’

বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে ভালো না বাসলে এরকম স্বপ্ন দেখার গৌরব কারো জীবনে আসে না।

লিটনের স্বপ্নে আমার উপস্থিতির দৃশ্যটা কল্পনা করে আমি একইসঙ্গে গৌরব ও বেদনায় সিক্ত হয়েছি। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমুতে পারিনি। ওর বর্ণিত দৃশ্যসমূহ বারবার চলচ্চিত্রের প্যানিং শটের মতো আমার চোখের সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলো দ্রুত।

অবশেষে ঘুমুতে ঘুমুতে ঘড়ির কাঁটায় ভোর নেমে এলো।

লিটন আমার না দেখা এক অনুজপ্রতীম বন্ধু। এই জীবনে একবারও দেখা হয়নি আমাদের। অথচ কতো কথাই না হয় আমার, তার সঙ্গে। লিটন আমার বিশেষ প্রীতিভাজন একজন। কেনো সে আমার বিশেষ প্রীতিভাজন? ক্রমে ক্রমে সেই ফিরিস্তি।

আমার নামের একটি অংশের সঙ্গে ওর নামের মিল রয়েছে। আমি রিটন হলেও, আমার লেখা একশোরও বেশি বই প্রকাশিত হলেও, অজস্রবার পত্রিকায় আমার নামটি মুদ্রিত হলেও, অসংখ্যবার টিভি পর্দায় বড় হরফে আমার নামটি ভেসে উঠলেও, কেউ কেউ আমাকে লিটন বলতে ও লিখতে পছন্দ করে! এই কিছুকাল আগেও ফেসবুকে আমাকে কেউ লিটন সম্বোধন করলে আমি কিছুটা ক্ষুব্ধ হতাম। কয়েক মাস আগে ‘নদীর বেড়াল কিটক্যাট’কে নিয়ে আমার একটা পোস্টে লেখকবন্ধু সিরু বাঙালি আমাকে ফের ‘লিটন ভাই’ বলেছেন! আর সেটা দেখে চেক রিপাবলিক থেকে আবুল বাসার লিটন এসে হাসির ইমোসহ ওখানে মন্তব্য জুড়েছে...‘নামটাতো আমারই হইলো...!’

আমার সঙ্গে নামের এই ধ্বনিগত মিল ছাড়াও আরেকটা মিল আছে লিটনের। ফেসবুকে আমি স্মৃতিগদ্য লিখি নিয়মিত। সেখানে পুরান ঢাকার নানান অলিগলির কথা থাকে। পার্ক মাঠ বিল্ডিং আর সিনেমা হলের কথা থাকে। বিসিসি রোড, ঠাঁটারি বাজার, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান, বংশাল, বনগ্রাম, যোগীনগর,  র‌্যাংকিন স্ট্রিট, টিপু সুলতান রোড কিংবা মুচিপাড়ার কথা থাকে। আমার লেখাগুলোর মন্তব্যের ঘরে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে লিটন মন্তব্য করে, আপনার এইসব হাঁটা পথে আমিও যে কতোবার হেঁটেছি!  আমি পুরান ঢাকার বানরদের কথা লিখি। দেখি সেই বানরদের কর্মকা-ও ওর জানা! অসম্ভব স্মৃতিকাতর আমি এক পর্যায়ে লিখতে শুরু করি ‘প্রিয় আমার পাঠশালা’ নামে শৈশবের স্কুলের গল্প। নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গল্প। দেখি এই স্কুলের টুল বেঞ্চি খেলার মাঠ, স্কুল ভবন লাগোয়া কাপ্তান বাজার-ঠাটারি বাজারের গমগমে ভিড়, থকথকে কাদা আর ভনভনে মাছি কিংবা মিষ্টির দোকান নিত্যলাল সুইটমিট, হোটেল স্টার কিংবা সোসাইটি...সবই ওর চেনা জানা!

কেনো? কারণ সে-ও আমার মতোই নবাবপুর স্কুলের ছাত্র!

কী কান্ড!!

আমি আমার কলেজ জীবনের কথা লিখি। গৌরবের ঢাকা কলেজের গল্প লিখি। ঢাকা কলেজের ১৭০ বছর পূর্তি উৎসবে প্রাক্তণ ছাত্র হিশেবে আমাকে বিশেষ সম্মাননা জানানোর গল্পটা লিখি। ওখানেও লিটনের লাফিয়ে পড়া...‘রিটন ভাই আমিও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলাম!’

আমার লেখাসমূহে ওর মন্তব্যগুলো পড়ে আমি বুঝতে পারি খুবই সংবেদনশীল একটা হৃদয়ের অধিকারী সে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মোড়া ওর জীবন। আর খুবই মানবিক একটা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ সে। মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে অনঢ় অটল এই বন্ধুটি। সাংবাদিক ফিউরি খোন্দকারের কবিতার একটা পঙ্ক্তি ছিলো এরকম...‘তুমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসো, আমি তোমাকে ভালোবাসবো।’ আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আর তাই লিটন ভালোবাসে আমাকে।

আমি প্রেম করে বিয়ে করে বাড়ি ছাড়া হয়েছি। থাকি পরবাসে, স্ত্রী শার্লি আর কন্যা নদীকে নিয়ে, কানাডার রাজধানী অটোয়ায়। লিটন বাড়ি ছাড়া হয়ে তারপর প্রেম করে বিয়ে করে এখন পরবাসী, থাকে চেক রিপাবলিকে। প্রেমময়ী স্ত্রী পেট্রা আর আদুরে এক বালকপুত্র রায়ানকে নিয়ে ওর ছোট্ট সুন্দর পৃথিবী। এখানেও আমাদের মিল। আমার জন্ম পুরান ঢাকায়, গোপীবাগে। লিটনের জন্ম কে এম দাশ লেনে, টিকাটুলিতে। এখানেও মিল! আমার ছায়াপথে আমার হাঁটা পথ ধরেই সে হাঁটছে! আমার প্রিয় বিষয়-আশয়গুলোর সঙ্গেও অবলীলায় মিলে যায় ওর প্রিয় বিষয়-আশয়সমূহ! নিজে তৈরি করতে পারি না কিন্তু খানাখাদ্যের বিষয়ে আমার আগ্রহের শেষ নেই। এই বিষয়ে ওর শুধু আগ্রহ আছে তা নয়, লিটন একজন বিখ্যাত শেফও!

দেশ-বিদেশ ঘুরতে আমি ভালোবাসি আর সে রীতিমতো ভ্রমণ বিশারদ! আমি ঘুরেছি তিনটি মহাদেশ এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা। লিটন আমার থেকে এক কাঠি ওপরে। এই তিনটি মহাদেশ ছাড়াও আরেকটি মহাদেশ অস্ট্রেলিয়াও তার ভ্রমণ ও বসবাস তালিকায়!

আমার পেছন পেছন হাঁটা এই বিস্ময়কর তরুণের সঙ্গে এই জীবনে একবারও দেখা হয়নি আমার! একটা গোপন অভিলাষের কথা সে জানিয়ে রেখেছে বহুদিন আগে...‘আপনার চরণ ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেবার ইচ্ছা আমার আশৈশব।’

নিশ্চয়ই একদিন দেখা হবে আমাদের। চরণ ছুঁতে হবে না, তুমি আমার হৃদয় ছুঁয়েছো লিটন। একটা আলিঙ্গন তোমার প্রাপ্য।

বাংলাদেশে তোমার সঙ্গে একবারও আমার দেখা হয়নি তো কী হয়েছে! পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো একদিন তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবেই হবে। কানাডা থেকে চেক রিপাবলিকে যাওয়াটাও অসম্ভব কোনো ব্যাপার তো নয়। কে জানে, সামারের সবুজ পাতাগুলো রঙিন হতে থাকলে পাতা ঝরার দিনগুলোতে, মন খারাপ করা কোনো এক বিষণœ সকালে হয়তো আমি উড়াল দেবো তোমার দেশে...

অটোয়া ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়