শুভম গাঙ্গুলী: "এই মৃত্যুর উপত্যকা আমার দেশ না" - নবারুণ ভট্টাচার্য রচিত মিলনসাগর কবিতার এই উজ্জ্বল উদ্ধৃতি আজ বড়ই প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। কোনোদিন ভাবিনি, আমার দেশ, আমার জন্মভূমিতে আমার জাতির বিরুদ্ধে এরকম করা হবে। কোনোদিন দেখিনি আমার জাতিকে এতটা অবহেলিত আর লাঞ্ছিত হতে।
আসামের বিজেপি সরকার বাঙালিদের বিরুদ্ধে যা করছে তা একেবারে অভাবনীয়। যেখানে সারা দেশকে পথ দেখিয়েছে, দেখাচ্ছে বাঙালি, সেখানে আসাম নিবাসী প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালির নাম এনআরসি থেকে বেমালুম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে! এতে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কয়েক লক্ষ পরিবারের। সরকারের যুক্তি, তারা নাকি অযাচিত অতিথি। যারা এক জায়গায় ৩-৪ পুরুষ ধরে বসবাস করছে, যারা আগের সেনসাস অবধিও ভারতবর্ষের নাগরিক ছিলেন তারা আজ অতিথি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে কারোর যদি বঞ্চিত বোধহয়, তারা নাকি "আবেদন" করতে পারে নাগরিকত্বের জন্য। এই দাম দিয়েছে বিজেপি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমদের পরিবারকে, তারা এই দাম দিয়েছে সেই প্রাক্তন সৈনিককে যিনি ৩০ বছর দেশের সেবা করেছেন এবং এখন জানতে পারছেন যে তিনি ভারতীয়ই নন। তারা এই দাম দিয়েছে সেই সকল মানুষকে যারা বিশ্বাস করে তাদের ভোট দিয়েছেন, এই ভেবে যে সরকার তাদের রক্ষা করবে! এই নমুনা বিজেপির "জাতীয়তাবাদের"। নিজেরাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে বারংবার দেখিয়ে দিচ্ছে যে তাদের রাজনীতি, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদের ডঙ্কা শুধু গরু আর মিথ্যবাদের মধ্যে সংকুচিত।
রাজনীতিকদের মধ্যে সরাসরি শুধু বাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কিন্তু বাঙালির দ্বিতীয় রাজনৈতিক দলের, সিপিএম, কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়নি। বিশিষ্ট যুক্তরাস্ত্রবাদী গর্গ চ্যাটার্জির নেতৃত্বে "বাংলা পক্ষ" বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, সম্প্রতি আসাম ভবনেও দেখানো হয়েছে। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ সভাপতির বক্তব্য, এখানে ক্ষমতায় এলে বিজেপি বাংলার মাটিকেও কলুষিত করে এনআরসি প্রয়োগ করবে। তিনি হয়তো এই ভাবেন যে বাংলার মানুষ ওনার মতো সল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, আমরা কিছুই বুঝিনা।
জয় বাংলা
জয় বাঙালি
সূত্র: Hatchword
আপনার মতামত লিখুন :