শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৪০ দুপুর
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৪০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফের জয় চায় আওয়ামী লীগ পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট : বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৫ সংসদীয় আসন। বুড়িচং উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন আর ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮টি। একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রচারে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ আসনে তাদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া। জাতীয় পার্টি চায় আসনটি তাদের দখলে নিতে। মাঠে আছেন সাবেক আইনমন্ত্রী বর্তমান এমপি আবদুল মতিন খসরু এবং বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।

এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ, ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান মজু এমপি হন।

এছাড়া ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আবদুল মতিন খসরু দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আবদুল মতিন খসরু ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে আছেন একাধিক নেতা।

কুমিল্লা বারের সভাপতি ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবদুছ ছালাম বেগ নির্বাচনী মাঠে জনসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বিএনপি ২০০৮ সালে এ আসনে মনোনয়ন দেয় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি এএসএম আলাউদ্দিনকে। ওই নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাকে আর এলাকায় তেমন দেখা যায়নি বলে দলের নেতাকর্মীরা জানান।

এরপর দলকে সুসংগঠিত করতে দুই উপজেলার (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) সাংগঠনিক দায়িত্বে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ। এখানে তার নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ এবং তিনি দলের সম্ভাব্য একক প্রার্থী বলে স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন।

তবে বিএনপির সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ ও এএসএম আলাউদ্দিন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান মজু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. জসিম উদ্দিন জসিম, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মো. মিজানুর রহমান।

বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর সমর্থকরা জানান, এ আসনের দুটি উপজেলায় মতিন খসরুর প্রচেষ্টায় এ যাবৎ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকণ্ড হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।

আবদুল মতিন খসরু মনোনয়ন পেলে এ আসনে আওয়ামী লীগই জয়ী হবে। আবদুল মতিন খসরু এমপি বলেন, ভবিষ্যতে অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে এলাকার উন্নয়ন করতে হবে না, আমার রেখে যাওয়া রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের মেরামত করলেই চলবে। আমি নির্বাচিত হয়ে ৯ বছরে শেখ হাসিনার সহযোগিতায় বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি।

প্রত্যেক এলাকায় প্রতিটি গ্রামে, স্কুল-কলেজে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণপাড়ায় সড়ক উন্নয়ন, মেরামত, ব্রিজ নির্মাণ, ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে ৬০৫ কোটি ৫৪ লাখ ৪৯২ টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে।

বুড়িচং উপজেলায় ব্রাহ্মণপাড়ার চেয়ে বেশি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। দুই উপজেলায় প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এলাকার হাজার হাজার বেকার যুবক-তরুণীকে চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে দুই উপজেলাকে আমি শহরে পরিণত করব।

কুমিল্লা বারের সভাপতি, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান বলেন, দলীয় মনোনয়ন চাইব। নৌকা প্রতীকের তথা আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের জন্য দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে কাজ করব।

আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন স্বপন প্রচার প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনী মাঠে আছি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। এবার আমি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, শহর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবদুছ ছালাম বেগ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগের পাশাপাশি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রুপিং রাজনীতির বিরোধিতা করে তিনি এর আগে নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

২০০৮ সাল থেকে এ আসনের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টানিয়ে এবং মহাসড়কের পাশে বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থিতা জানান দিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ঢাকা বিভাগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী।

তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া যিনি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাবেন, তার পক্ষে কাজ করবেন বলেও জানান। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ডিজিটাল প্রার্থী দরকার। এনালগ প্রার্থী দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল, এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে হয়তো মান-অভিমান থাকতে পারে, কিন্তু এখন কোনো কোন্দল নেই, সবাই ঐক্যবব্ধ।

আগামী নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থক ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনবে, ইনশাল্লাহ। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ পরিবর্তন চায়, নতুন নেতৃত্ব চায়। তরুণরাই অধিকাংশ ভোটার।

তাদের স্বপ্ন ছিল কর্মসংস্থান ও সুন্দর ভবিষ্যৎ। তাদের স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তারা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমার পাশে দাঁড়াবে। যারা মুরব্বি রয়েছেন, বিষাক্ত রাজনীতির নামে তাদের অসম্মান করা হয়েছে।

তারাও আমাকে চায়। তিনি আরও বলেন, যারা মনোনয়ন পাবেন অপপ্রচার করছেন, তারা গত ১০ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন না। আমাকে ২০১০ সাল থেকে এ দুই উপজেলার সাংগঠনিক সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি এএসএম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমি আশাবাদী মনোনয়ন পাব। তবে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. জসিম উদ্দিন জসিম বলেন, দলীয় মনোনয়ন চাইব। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নির্বাচনী বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করে তাকে মনোনয়ন দেবে।

যোগ্য যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা ধানের শীষের বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা যেহেতু দল করি, তৃণমূলে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে, তাই নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার অধিকারও রয়েছে।

এরই মধ্যে দলকে আমি সুসংগঠিত করেছি। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আগামী নির্বাচনে দলের পক্ষে এ আসনটি উদ্ধার করা সম্ভব বলে আশা করছি। এছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা ধানের শীষের বিজয়ের জন্য কাজ করব।

অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া জাতীয় পার্টির সমন্বয়ক, বুড়িচং উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. তাজুল ইসলাম। তিনি এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি চাইবে। মহাজোট থেকে আমি মনোনয়ন পেলে নিশ্চিত জয়লাভ করব। তিনি আরও বলেন, এছাড়া এরশাদ সরকারের আমলে এ অঞ্চলে (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায়) ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সূত্র : যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়