মুনজের অাহমদ চৌধুরী : বৈশ্বিক উষ্ণতা,জলবায়ুর ব্যাতিক্রম। মানুষের হৃদয়ের অাবহাওয়াতেও পরিবর্তন। দুটোরই গতিপথ অন্তত অভ্যাস বা স্বভাব পাল্টাচ্ছে। পরিবর্তনের মতোন পজেটিভ শব্দটি এখানে উহ্য রাখাই বোধকরি সঙ্গত।
◼বুকের জমিন বিলীন হচ্ছে স্রোতময় অথচ অশ্রুত নদীতে; কিন্তু বাইরে কী ব্যতিক্রম তাপদাহ।
ষড়ঋতুর সৌন্দর্যের বৈচিত্র এখন অতীত। ভাবনার বা ভেতরের অাকাশগুলোও এখন কেবল দীর্ঘ খরা, নয়তো প্রবল বর্ষা হতে জানে। সুন্দর সুন্দরীর সংজ্ঞা খুজেঁছে ঝাঁজে, ভালবাসা অাশ্রয় পেতে অভ্যস্ততা খুঁজেছে কেবল শয্যায়, উষ্ণতায়। বিশ্বায়নের উষ্ণতার একমুখীতার উত্তর মেরুর মতোন করে বৈপরীত্যের স্বাভাবিকতায় সংখ্যাগরিষ্ট হৃদয় দুঃখ এখন অশ্রু হতে ভুলে গেছে। দুঃখগুলোও এখন সম্পর্কের শীতলতার তীব্রতায় শুধু বরফ হতে জানে। হৃদয়গুলি যেমন সহনশীলতা ভুলেছে, কী অাশ্চর্য- পৃথিবীও তেমন। যখন রোদ, তখন কেবলই রোদ। যখন বর্ষা, তখন অগত্যা গন্তব্য যেন বন্যায়। সম্পর্কেরও দমকা হাওয়াও এখন বৃষ্টি হয়ে না ঝরে কেবলই রাস্তা হাটে সাইক্লোনের। পৃথিবীর তাপমাত্রাও সম্পর্কের ঝড়ের মতো সতর্ক সংকেত না দেখিয়েই নয় নাম্বার বিপদ সংকেতে সাবলীল।
◼পৃথিবী নাকি হৃদয়, তাপমাত্রার স্বাভাবিকতার স্বভাব সত্বায় কে দেখিয়েছে ব্যাতিক্রমের পথ? সে প্রশ্নের উত্তরেও এক অর্থে অপরাধীর কাঠগড়ায় ‘মানুষ’। বিশ্ব জলবায়ূর ব্যাপকতর ভিন্নতা দৃশ্যমান হয়েছে গেল দু-তিন কয়েক দশক ধরে।
অার পুরুষবাদী সভ্যতা উনিশ শতকের শুরু থেকেই সাইক্লোন- ঘুূর্ণিঝড়ের নামগুলো নারীর নামে নামকরণ করে অাসছে। নার্গিস, ক্যাটরিনা, হেলেন, লায়লা, নিশা, বিজলী, প্রিয়া, চপলা, মালা, তিতলী, মোরা, কোমেন, আইলা, নিশা; সব প্রেমিকার নামে নাম রাখবার হা-হুতাশের কী ছ্যাকা সুনিবিড় পুরুষময়তা! অবশ্য সত্তরের দশকে বিভিন্ন নারীবাদী সংঘঠনের ধারাবাহিক প্রতিবাদের মুখে ১৯৭৮ সালে ঝড়ের নামকরনে প্রথমবার পুরুষদের নাম যুক্ত করা হয়। যদিও, এখনো ঘুূর্ণিঝড়ের নামের উদাহরনে পুরুষবাচক নাম নিতান্তই অপ্রতুল।
লেখাটির মূল গন্তব্য থেকে উপরের অনুচ্ছেদে বিষয় থেকে সচেতনভাবেই চ্যুত হয়ে লেখার দৈর্ঘ্য বাড়ানোয় ক্ষমাপ্রার্থী পাঠক।
◼তবে পৃথিবীর তাপমাত্রায় তারতম্যের তারে হৃদয়ের অাবহাওয়ার বাকবদল; নাকি হৃদয়গুলোর তাপমাত্রা শুধু তারতম্যে ব্যবধানের দ্বিধা খুজঁবার…। অাশা করছি, পাঠক তার পছন্দের উত্তরটি এখান থেকে খুঁজে নিতে না পারলেও, যুক্তি এবং অাবেগের যথাক্রমে সমীকরণ অার সমীরণ এখান থেকে পাবেন।
তবে, নাতিশীতোষ্ণতার দৃশ্যমানতা হৃদয় এবং পৃথিবীর পরিমন্ডল দুটো জায়গা থেকেই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে।
◼বহু যুক্তির অসঙ্গত এবং সঙ্গতার পরও হৃদয়গুলি সকালের কাঁচা-মিঠে রোদে অাঙ্গুল ছুঁয়ে হাটবার অপেক্ষায় থাকবেই; বহুকাল । বিকেলে বর্ষায় ছাতা হারানো মনগুলি একসাথে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরবার তাড়না থাকবেই, কোন না কোন জনপদে। অদ্ভুত সব শীতলতা মিলিয়ে যাবে ধূমায়িত চায়ের কাপে। হয়ত কাছের, নয়তো দুূরের কোন গাঁয়, অভিমান ঘনায়মান সন্ধ্যায়।
তেমনি বিভৎস উষ্ণতা জুড়িয়ে যাবে ভাল করে বাসবার, বাসাবার ষড়ঋতুর রঙ্গে রঙ্গিন অাইসক্রিমে। ভালবাসার যোজনায় শীত এবং
গ্রীস্ম দুজনে দুজনার না হোক, অন্তত চেষ্টায় থাকুক।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই ভাল করে বাসবার অদ্ভুত সুন্দর ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। কিছু হৃদয় শুধু একটি হৃদয়কে বাসবার গন্তব্য খুজেঁ। কিছু থাকে একমুখীতার ব্যতিক্রমকে অতিক্রমের ভালবাসায়।
◼শেষের লাইন অাটেক অাসলে রোদ বর্ষার দ্যোতনায় বাংলায় বাঙালীর শিল্পবোধের বহুকালীন বেদনার বহমান শীর্ণ ধারাটি উহ্য যাবার অভিপ্রায়ে বলা। কারন, বাংলায় শিল্পবোধ বহুকাল দাড়িঁয়ে অাছে বালিকাকে হৃদয় নিবেদন ‘করিয়াও না করিবার’ চর্বিত ব্যার্থ প্রেম কাহিনী জনিত একমুখী বহুরৈখিকতায়। জাতিগতভাবে নায়ককে অামরা দেবরূপে
কুর্নিশ করতে অভ্যস্ত । তেমনি নায়িকা কখনো নিজের না থাকলেই তার চরিত্র হননে উন্মুখ।
অামাদের সমালোচকেরা এখনো প্রায়শই শিল্পীত শানিত যুক্তি বা শিল্পের স্বার্থকতার বিচারের চেয়ে বিষাদের বিচারে উত্তীর্ন হতাশাকে ‘শিল্প’ রূপে গন্য করেন। পদ্যের পাঠকবিহীন বাজারে অগত্যা গদ্যকে তাই রোদ-বৃষ্টি, অানন্দ হাসি, হিউমার-ট্রাজেডিসমেত কিছু রাবিন্দ্রিক ভাবাবলীর অদ্ভুত এক সংমিশ্রনে পাঠকের কাছে যেতে হয়।
অবশ্য সব খানেই এক অবস্থা।দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা অাইন পাশের পর, অামাদের সাংবাদিকতাকেও ঘুরপাক খেতে হবে ফুল-পাখি-নদী অার ক্ষমতার বন্দনার পুর্ন নিয়ন্ত্রিত খাচাঁয়।
নেহায়েত গৎবাঁধা গদ্যের মত স্পন্সর লিংকে পঠিতব্য বা ছাপা-ছাপির প্রচারনার প্রয়োজনে।
◼ফেসবুক গনতন্ত্র অার বাকস্বাধীনতার উঠোন কিছুটা মুক্ত রাখতে পারলেও ইমোশনগুলোকে ইমোজি বন্দি করেছে সাবলীলভাবে। সব ‘মহা পবিত্র সব কাব্য’ -ঝুলে অাছে ষ্টাটাসে,দেয়ালে। অথচ কী বিপরীত নীচতা তারই ইনবক্সে।
অবশ্য পবিত্রতার মতোন শ্বেত-শুভ্র-শক্তিময় শব্দগুলোও এক অর্থে অাপেক্ষিক। তবে, একজন লেখকের জন্য পবিত্রতম পুরস্কার হলো, এমন একটি লেখা সম্পূর্ণ করা, যে লেখাটি অন্তত তার সময়ে তার মতোন করে অার কেউ পাঠযোগ্য করতে অক্ষম।
◼শুক্রবারের ভোরের বুকচিরে লেখাটি যখন লিখছি, তখন লন্ডনে অাবহাওয়ার ইয়েলো এলার্ট জারি রয়েছে। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ধেয়ে এসেছে ঘুূর্ণিঝড় ব্রনা ( Bronagh)। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে অাশুরার সেহরীর ভাতমাখা হাতে চায়ের মগ হাতে বসে অাছি কাজের জায়গায়। ব্রনা নামের দুঃখময় শব্দটির উৎপত্তি অাইরিশ ভাষা থেকে। প্রার্থনা করি, ব্রনার অাজকের ঝড়ের গতি উড়িয়ে নিয়ে যাক সব বিষাদ। ঝড় ব্রনা বৃষ্টির অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ুক অারো কিছুক্ষণ। বহু হৃদয় যে কাদঁতেও ভুলে গেছে।
অনেকগুলি ‘তবে’র সীমারেখা সত্বেও ভালবাসা নিয়ে অাশায় থাকি শুক্রবারের রোদেলা সকালের। কাল না হোক, পরশু ঠিক সুন্দরের সকালের দেখা মিলবে-ই। এ অাশাবাদটা কখনো হারায় না বলেই বেঁচে থাকা প্রশান্তিময়। শুভ শুক্রবার।
জলবায়ুর জলধারা, ছুটির সন্ধ্যায় অাবহাওয়ার বুকের জমিনে বর্ষা হোক। মুছায়ে দেবে চোখ-জানালার ওয়াইপার।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক, সদস্য রাইটার্স গ্রীল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন
আপনার মতামত লিখুন :