শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৯:৫৩ সকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৯:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৮৫ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অজানা!

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ মানুষ মারা যায়, যাদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। বাকি ৮৫ শতাংশ নিজ নিজ বাসাবাড়িতে বিভিন্নভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। হাসপাতালে মৃত্যুর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সনদ দেন কারণের কথা উল্লেখ করে। বাসাবাড়িতে মৃত্যুতে তেমন কোনো কারণও জানা যায় না। বিষয়টি অনেকটাই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সাধারণ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া ব্যক্তির পরবর্তী প্রজন্ম মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে মৃত ব্যক্তির কী রোগ ছিল, সেই রোগের কোনো প্রভাব তার পরিবারের অন্যদের মধ্যে কিংবা সন্তানদের মধ্যে থেকে যাচ্ছে কি না তা অজানা বা আড়ালে থেকে যায়। দেশে রোগের গতি-প্রকৃতির ধারায়ই এসব মৃত ব্যক্তির রোগের তথ্য ঠাঁই পায় না বলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ওই রোগের সঠিক চিকিৎসার সুযোগ নষ্ট হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে এখন দেশের সব মানুষেরই সঠিক মৃত্যুর কারণ নিরূপণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

সরকারের ডাটা ফর হেলথ-সিআরভিএসের কান্ট্রি কনসালট্যান্ট ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. মঈন উদ্দিন  বলেন, ‘সাধারণত হাসপাতালে মৃত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ, স্ট্রোক, ব্রেন ডেথ ইত্যাদি লেখা হয়। এগুলো আসলে কোনো কার্যকর কারণ নয়। আমরা সবাই জানি—শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র অর্থাৎ ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্র অর্থাৎ হার্ট বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয় না। কিন্তু এর আগে অবশ্যই অন্য কোনো কারণ নিহিত থাকে। এর প্রভাবে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়। ফলে সঠিকভাবে কারণ নিরূপণ করতে হবে—কেন হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হলো।’

মঈন উদ্দিন জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৬৭ সালে হাসপাতালে মৃত্যুর কারণ নিরূপণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে অনুসারে পরে গাইডলাইন তৈরি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত উন্নত সব দেশ আমলে নিলেও বাংলাদেশসহ এশিয়া-আফ্রিকার কিছু দেশে তা কার্যকর হয়নি। এমনকি বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে বিজি ফরম নম্বর ৮০৪ অনুযায়ী যে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে ইন্টারন্যাশনাল ফরম অব মেডিক্যাল সার্টিফিকেশন অব কজ অব ডেথ (আইএমসিসিওডি) প্রয়োগ করে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করছে। তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মৃত্যুর কারণ বিষয়ক মানচিত্রে আমাদের অবস্থান ‘নো ডাটা গ্রুপ’ ক্যাটাগরিতে।”

এদিকে দেশে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিরূপণে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতায় টেকনিক্যাল সাপোর্ট ফর সিআরভিএস সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট অব বাংলাদেশ নামের এক প্রকল্প শুরু হয়। ব্লুমবার্গ ডাটা ফর হেলথ ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যার মাধ্যমে একদিকে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ১১টি বড় হাসপাতালের প্রায় ১৫ হাজার মৃত্যুর কারণ নিরূপণ করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের বাসাবাড়িতে মৃত্যুর কারণ বের করতে ‘বাচনিক ময়নাতদন্ত’ বা ভারবাল অটোপসি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ওই কার্যক্রমের আওতায় গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীরা প্রথমে বাচনিক ময়নাতদন্তের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। পরে তাঁরা ওই এলাকায় মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়র কাছে গিয়ে স্মার্ট ট্যাবের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব সংগ্রহ করেন, যা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সার্ভারে পৌঁছে মৃত্যুর কারণ তুলে ধরে। এ পদ্ধতিতে ০-২৮ দিনের শিশু, ২৯ মাস থেকে ১২ বছর পর্যন্ত শিশু এবং ১৩ বছর থেকে বয়স্ক মৃত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ আলাদাভাবে উঠে আসে।

ডাটা ফর হেলথ-সিআরভিএসের কান্ট্রি কনসালট্যান্ট মো. মঈন উদ্দিন বলেন, অজ্ঞাত কারণ বা আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে মৃত্যুর কারণ শনাক্তের চেয়ে নতুন পদ্ধতি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তুলনামূলক বেশি কার্যকর।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট ফর সিআরভিএস সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট অব বাংলাদেশ প্রকল্প সূত্র জানায়, নতুন পদ্ধতি সফল হওয়ায় কার্যক্রমটি গাজীপুরের সব উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যেই ১২ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ বাচনিক ময়নাতদন্তের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। এখন তা দেশের আরো সাতটি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

একই সূত্র জানায়, আগের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে ধারণা করা হতো দেশে শিশুদের মৃত্যু প্রধান কারণ নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত প্রদাহ। কিন্তু বাচনিক ময়নাতদন্তে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর ওই প্রতিবেদন দেখে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আইএমসিসিওডি ব্যবহার করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য ন্যাশনাল মর্টালিটি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করেছে। চলতি অর্থবছরে জেলা পর্যায়ের ৫৭টি সরকারি হাসপাতালে এ কার্যক্রম চালু হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা বলেন, আগে হাসপাতালে কেউ মারা গেলে যে পন্থায় ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হতো তা অনেকটাই দায়সারা ধরনের বা তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে হতো না। ফলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিত। কিন্তু সিআরভিএস প্রকল্পের আওতায় একজন রোগীর মৃত্যু কারণ সঠিকভাবে নিরূপণ করে তবেই সার্টিফিকেট দেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১১টি হাসপাতালে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা জেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতায় টেকনিক্যাল সাপোর্ট ফর সিআরভিএস সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট অব বাংলাদেশ প্রকল্পের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সেমিনারে জানানো হয়, দেশের ১১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আইএমসিসিওডি ব্যবহার করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ১৫ হাজার মৃত্যুর কারণ নিরূপণ করা হয়েছে। সেখানে নানা ধরনের কারণ উঠে এসেছে, যা আগে নিরূপণ করা হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৃত্যুর কারণ নিরূপণ করা না গেলে তা ওই মৃত ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য যেমন ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে, তেমনি দেশের চিকিৎসা গবেষণায়ও এক ধরনের ঘাটতি থেকে যায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে এখন যে কাজ শুরু হয়েছে সেটা খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি। সূত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়