শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:৫৬ সকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:৫৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘বর্তমান সরকারের কারণে দেশত্যাগ, পদত্যাগ ও নির্বাসিত হয়েছি’

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সদ্য প্রকাশিত ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’, অর্থাৎ ‘স্বপ্নভঙ্গ: আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ বইটি সর্বত্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সেটি রচনার ইঙ্গিত বা আঁচটি প্রথম প্রকাশ পেয়েছে এই প্রতিবেদকের এক প্রতিবেদনে এ বছরের ৫ জানুয়ারি দৈনিক আমাদের অর্থনীতির প্রথম পাতায়। এমন কী তিনি যে টরন্টো ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে চলে যাচ্ছেন, সে কথাও ৮ জানুয়ারি অপর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে।

শেষটায় হঠাৎ করেই ৪০০ পৃষ্টার বইটি প্রকাশ পেল; জানলাম না, অথচ জানা গেল গণমাধ্যম থেকে। বিবিসি বাংলা রেডিও এ সংক্রান্ত তার একটি সাক্ষাতকার প্রচার করেছে। সেখানে বিচারপতি সিনহা বলেছেন, ‘জন্মাষ্টমির অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হয়েছে, হাসি-ঠাট্টা করেছি, সেখানে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তুলেননি; তুলেছেন আমার ঢাকায় অবস্থানকালে অপর পাঁচ বিচারপতিকে ডেকে’। আরও বলেছেন, ‘ডিজিএফআই চিফ এসে বললো, আপনি বিদেশে যাচ্ছেন না কেন? আমরা আপনার টাকা-পয়সা ব্যবস্থা করছি। প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে দেখা করবেন না’। অবশ্য এই ‘স্বপ্নভঙ্গ’ বিষয়টি পশ্চিমা বিশ্বে ‘শ্যাটার্ড ড্রিম’ বলে অভিহিত। তবু দেখা যাচ্ছে, ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়ার রকব্যান্ড পাইথন লি জ্যাকসনের অ্যালবাম ‘ইন এ ব্রোকেন ড্রিম’-এ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিবিহীন ব্রিটিশ সঙ্গীত তারকা রড স্টুয়ার্ড কণ্ঠ দেন এবং পরের মাসেই তা তৃতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় গানের স্থান অর্জন করে। সেই জনপ্রিয়তা রড স্টুয়ার্ডকে এখনও অবিস্মৃত রেখেছে। গানের কথা বাংলা করলে দাঁড়ায়- প্রতিদিন সময় কাটাই সুরাপানে ভালো বোধ করে, একটি সঙ্কেতের অপেক্ষায় থাকি, সেই আমি এখানে আছি। দিনের ঘণ্টাভাগে শুভ্রমিনার ও রক্তাক্ত ফুল বাতাসে মাথা তুলে দাঁড়ায়, ভ্রুক্ষেপ করি না আদৌ সেখানে যাবো কিনা। তোমার ভালোবাসাকে কাছে ঠেলে দিওনা; ক্ষত যে মুছবে না, এখানেই তুমি স্বপ্নভঙ্গে আছো। কেউ কি মাথানত করবে? কেউ কি সকালের নাস্তা খেয়েছে? ন’টার আগে ভালো মানুষেরা বিছানায় শুয়ে থাকে। চোখে পট্টি, মিথ্যে বলে কাগজ কাঁদছে। যে ভঙ্গহৃদয়ের প্রতিশ্রুতিটি তুমি কবর থেকে দিয়েছো...।

জনপ্রিয় ওই গানটি সেভাবে রচিত হলেও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা আসলে তার বইয়ে কী লিখেছেন, সে কথা মুখবন্ধেই প্রতিভাত। তিনি লিখেছেন, ‘আই ওয়াজ ফোর্সড টু লিভ দ্য কান্ট্রি অ্যান্ড রিজাইন অ্যান্ড এক্সাইল্ড বাই দ্য প্রেজেন্ট গর্ভমেন্ট। ইট ওয়াজ আনপ্রিসিডেন্টেড ইন দ্য হিস্ট্রি অব দ্য জুডিশিয়ারি’। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের কারণে দেশত্যাগ, পদত্যাগ ও নির্বাসিত হয়েছি। এই ঘটনা বিচার বিভাগের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। সেই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে তিনি বলেছেন, এই অপরিনামদর্শী ও অভূতপূর্ব ঘটনা প্রবাহের ব্যুপত্তিটি ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, যখন সংসদ সংবিধান সংশোধন করে বিচার বিভাগের উচ্চ বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতাটি দেয়। বিচারপতি অপসারনের ক্ষেত্রে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (এসজেসি)’-এর বিধানকে মুছে ফেলে। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাই কোর্ট ডিভিশনের রায়টি পুর্নবহাল রাখা হয়, যার পূর্ণাঙ্গ বিবরনী জনসমক্ষে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী এবং তার অপরাপর দলীয় সদস্য ও মন্ত্রীরা পার্লামেন্টর বিরুদ্ধে যাওয়ায় আমার উপর চড়াও হন। আমার সরকারি বাসভবনে অন্তরীণ থাকাকালীন আইনজীবি ও বিচারপতিদের আমার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি, গণমাধ্যমকে বলা হয়েছে আমি অসুস্থ ও চিকিৎসাজনিত ছুটি চেয়েছি। আমি চিকিৎসাজনিত ছুটিতে বিদেশে যাচ্ছি অনেক মন্ত্রীই বলেছেন। ১৪ অক্টোবর আমি দেশত্যাগে বাধ্য হই এবং স্বচ্ছ জ্ঞাতার্থে বক্তব্য রেখে জানাই যে, আমি অসুস্থ কিংবা একেবারে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি না। প্রত্যাশা ছিল আমার শারীরিক অনুপস্থিতি ও কোর্টের নিয়মমাফিক অবকাশযাপন একত্রে পরিস্থিতিকে প্রশমিত করবে ও শুভবুদ্ধির উদয় ঘটবে, এতে সরকার দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার রায়টিকে হৃদয়াঙ্গম করতে সক্ষম হবে। সবশেষে, আমার পরিবারের প্রতি দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা তথা ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস কর্তৃক উপর্যুপরি হুমকির মুখে বিদেশ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হই।

পরিশেষে বিচারপতি সিনহা তার এই মুখবন্ধে আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন, এই বই কেবল পাঠকের উদ্দেশ্যই পরিপূরণ করবে না, বরং তা আইনজীবি বা রাজনীতিক অথবা আইন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা অপেশাদার মানুষকে আইনের মহিমান্বিত সর্বোচ্চ সততা ও বলিষ্ঠতাকে উপলব্ধির সুযোগ করে দেবে।

পুনশ্চঃ বিচারপতি সিনহা রচিত এই বইটি থেকে আগামী ১০ দিনে ধারাবাহিকভাবে দশ অধ্যায়ের চুম্বকাংশগুলো তুলে ধরা হবে।

ই-মেইল: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়