আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও কথাবার্তা শুরু করার অনুরোধ জানালেন নবনির্বাচিত পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীর মধ্যেও বৈঠক করা হোক। পাকিস্তান যে ‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে কথা বলতেও রাজি, সেটাও জানান ইমরান খান।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণের সময়েই ইমরান খান বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন উপযুক্ত আলোচনা ও দু’দেশের মধ্যে গঠনমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমেই সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আসবে এবং তিনি সেই ব্যাপারে আশাবাদী।
পাক প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই চিঠির জবাবে ক্রিকেটার-রাজনীতিবিদ ইমরান গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু এত দিন তা চাপাই ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জম্মুর রামগড় সেক্টরে পাক সেনা এক ভারতীয় জওয়ানের মাথা কেটে নেওয়ার পরই সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। তার পরই এই চিঠি প্রকাশ্যে আসে।
ইমরান খান চিঠিতে লিখেছেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কটি যথেষ্ট অম্লমধুর। আমরা তবুও চেষ্টা করছি যাতে আমাদের দুই দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, কাশ্মীর সমস্যাসহ দুই দেশের ভিতরে চলা বহু শীতল সম্পর্কের জায়গাগুলিকে আর অনুভব করতে না পারে; তাঁরা যেন শান্তির মধ্যে দিয়ে চালাতে পারে নিজেদের জীবন। এমনটাই প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, সিয়াচেন ও স্যার ক্রিকের ব্যাপারেও দুই দেশের একটি আশু সমাধানে আসা প্রয়োজন। নিজেদের স্বার্থেই। দু’দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য নিজেদের পারস্পরিক ইতিবাচক আদানপ্রদান খুব জরুরি। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মখদুম শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মধ্যে একটি বৈঠক করার প্রস্তাবও আমি রাখতে চাই, বলেন ইমরান।
চলতি মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের যে সাধারণ অধিবেশন শুরু হবে তারই ফাকে দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী আলোচনায় বসতে পারেন, নরেন্দ্র মোদিকে সেই আমেদনই জানিয়েছেন ইমরান খান। কিছুদিন আগে দু’টি দেশের মধ্যে অর্থবহ ও গঠনমূলক যোগাযোগ চেয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পাকিস্তানের নির্বাচনে জয়ের পর এক সমাবেশে ইমরান খান বলেছিলেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ভারত যদি এক পা এগোলে, পাকিস্তান তা হলে দু’পা এগোবে। ইমরানের এই বক্তব্যকে সম্মান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ওই চিঠি লেখেন। তারপরই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই চিঠি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পাক বিদেশমন্ত্রী মুহাম্মদ কুরেশি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে আলোচনায় বসবেন কি না তা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জোর জল্পনা চলছে। আগস্ট মাসে পাকিস্তানে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই অর্থে ইমরান খানের চিঠিই হল দু’দেশের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ শুরু করার ব্যাপারে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে যে সুসংহত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা ফের শুরু করার জন্য ইমরান খান তাঁর চিঠিতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর সেই আলোচনা প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইমরান খান তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, কাশ্মীর এবং সন্ত্রাসবাদ সহ–দু’দেশের মধ্যে যেসব প্রধান প্রধান বকেয়া ইস্যুগুলো রয়েছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। ইসলামাবাদে সার্ক সম্মলেনের সময় নরেন্দ্র মোদিকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে ইমরান আরও লিখেছেন, এই সম্মেলনেই থমকে থাকা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ফের শুরু করা যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :