বিভুরঞ্জন সরকার: কারো সঙ্গে দেখা হলে প্রথমে যে প্রশ্নের মুখোমুখি হই তাহলো, আগামী নির্বাচন কেমন হবে? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা জিতবেন তো?
আমি প্রশ্নকর্তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি, আপনার কি মনে হয়? প্রশ্নকর্তা আমতা আমতা করেন। বলেন, ভাই, পরিস্থিতি তো ভালো ঠেকছে না। কি যে হবে ঠিক বুঝতে পারছি না। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে নাকি দেশে বড় পরিবর্তন হবে?
আমি সবিনয়ে জানতে চাই, আপনি কি মওদুদের ভবিষ্যৎবাণীতে আস্থা রাখছেন?
তিনি আবার আমতা আমতা করেন, বলেন, বড় দলের প্রবীণ নেতা। তিনি কি আর না বুঝে কোনো কথা বলেন? আমি স্পষ্ট করে বলি, মওদুদ আহমেদের ভবিষ্যৎবাণীর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই। অতীতে তার কোনো ভবিষ্যৎবাণী সত্য হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলি, আগামী একমাসের মধ্যে দেশে মওদুদ আহমেদদের খুশি করার মতো কিছু ঘটবে না। দেশে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ এমপি হবেন না। মানুষকে ভোট দিতেও কেউ বাধা দেবে না বা বাধ্য করবে না। শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
প্রশ্নকর্তারা সবাই আমার কথায় খুশি হন না। কেউ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি আপনি একটু বেশি দুর্বল। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা – দুর্বলতা আপনার চোখে পড়ে না। আপনি বিএনপির মধ্যে ভালো কিছু খুঁজে পান না।
আর জ্যোতিষীর মতো আওয়ামী লীগের জয়ের যে সম্ভাবনার কথা আপনি বলেন তাতেও অনেকটা পক্ষপাত আছে।
আমি তর্ক বাড়াতে চাই না। আমার বিরুদ্ধে বলা কথাগুলো আমি মেনে নেই এবং বলি, আমি জ্যোতিষী নই। তারপরও সাধারণ বোধবুদ্ধি এটাই বলে যে, দেশের মানুষ পাগল হয়ে যায়নি। শেখ হাসিনাকে ভোট না দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেবে এটা যদি সত্য হয় তাহলে আমাদের সবার আত্মহত্যা করা উচিত। কারণ আমি মনে করে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক জোট বা মহাজোট ক্ষমতায় আসতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির চূড়ান্ত পরাজয় হবে। একাত্তরে বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ মানুষ নিশ্চয়ই পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার জন্য জীবন দেননি। একাত্তরের পেছনে নেওয়ার যত কায়দাকৌশলই করা হোক না কেন, মানুষ তা মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমার অনেক সমালোচনা আছে। কিন্তু তারচেয়ে বেশি সমালোচনা আছে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে গিয়ে আমি বিএনপি-জামায়াতের শক্তিবৃদ্ধি চাইবো না। একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে আমি কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এক ভাষায় কথা বলতে পারি না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক-উদার রাজনৈতিক শক্তির উত্থান আমি চাই। আমি চাই দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বসবাসের সুযোগ পাক – তেমন একটি রাজনৈতিক পরিমন্ডল দেশে গড়ে উঠুক। আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যে সেটা চায়ই না।
আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার ফিরে আসা ভারত চাইছে বলেই আমার মনে হয়। সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে শীতলতা বাড়ছে। ভারত চাইবে না বাংলাদেশে এমন কোনো শক্তির উত্থান যেটা তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বাড়াবে। আবার ইউরোপ-আমেরিকা যে জঙ্গিভীতির মধ্যে আছে সেখানেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যকোনো শক্তির প্রতি তাদের আনুকূল্য থাকার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ আমি দেখি না।
আমার বক্তব্য কারো কারো কাছে একতরফা মনে হলেও আগামী নির্বাচনে দুইতরফা হওয়ার আশঙ্কা বা সম্ভাবনা আমি অন্তত দেখি না। আমার সঙ্গে যে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু অতীতে আপনার কোনো রাজনৈতিক অনুমান সঠিক হয়েছিল, দয়া করে সেটা একটু উল্লেখ করলে আমি নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবো।
পরিচিতি: গ্রুপ যুগ্ন-সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়
আপনার মতামত লিখুন :