শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:৫৯ সকাল
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:৫৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৬৪ জেলার মাটি দিয়ে ‘আরেক বাংলাদেশ’ গড়লেন শুভংকর

নিউজ ডেস্ক: কবি নজরুলের দেশাত্মবোধক গান ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি’ কিংবা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয় গান ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে বাংলাদেশের মাটির জয়ধ্বনি। এবার ‘সোনার চেয়ে খাঁটি’ সেই বাংলাদেশের মাটি’র প্রেমে পড়লেন এক তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই তরুণের নাম শুভংকর পাল শুভ। তিনি ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছেন এক অভিনব মানচিত্র। গড়ে তুলেছেন যেন ‘আরেক বাংলাদেশ’।

শুভংকর পাল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ফেসবুকে যখন এক জেলার মানুষ আরেক জেলাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করে, একে অপরের প্রতি আগ্রাসী হয়। ছোট বড় তুলনা করে, তখন খুব খারাপ লাগে। আমি ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র তৈরি করে বলার চেষ্ঠা করেছি ‘৬৪ জেলা মিলেই একটি পরিবার’ পরিবারটির একটিই নাম বাংলাদেশ।

শুভংকর পালের বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায়। বাবা নিহার রঞ্জন পাল পল্লী চিকিৎসক ও মাতা অমিতা পাল গৃহিণী। বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলেকে চিকিৎসক বানাবেন। কিন্তু ছেলের যত প্রেম, যত আগ্রহ সব প্রকৃতিকে নিয়ে, সৃষ্টিশীলতা নিয়ে। তাই সৃষ্টিশীল কিছু করার আগ্রহ থেকে আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে। বর্তমানে তিনি স্টামফোর্ড ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের অর্নাস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

শুভংকর পালের সঙ্গে কথা হয় তার ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে অভিনব মানচিত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়ে। শুভংকর জানালেন, ৬৪ জেলা ঘুরে দেখার ইচ্ছে ছিল তার, কিন্তু তাতে পরিবারের সম্মতি মিলেনি, ইচ্ছেটা শুধু ইচ্ছেতেই রয়ে যায়, বাস্তবে সেই ইচ্ছে পূরণ না হলেও কম্পিউটারে বসে গুগল ম্যাপে ভার্চুয়াল স্কিনে ঘুরতেন ৬৪ জেলা। এর মাঝেই হঠাৎ করেই তার মনে হলো এক জায়গা থেকেই যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশটাকে ছুঁয়ে দেখা যেত!

তার মতো অনেকেই তো পরিবারের সম্মতি না পেয়ে ৬৪ জেলা ঘুরতে পারে না। তারাও ইচ্ছে করলে ৬৪ জেলায় না ঘুরেও একটি স্থান থেকেই বাংলাদেশটাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবে। এমন ভাবনা থেকে তার এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।

‘ভাবলাম বাংলাদেশ নামটি দিয়ে এমন কিছু করার প্রয়োজন যা হবে একদম নতুন। আগে কখনো এই নামটি নিয়ে এরকম কিছু হয়নি। হ্যাঁ, বাংলাদেশের মানচিত্র অনেক জায়গায় আছে কিন্তু ৬৪ জেলার মাটি এক ফ্রেমে কি আনা হয়েছে? দেখলাম অনলাইনে ঘেটে। নো রেজাল্ট। শুরু করলাম কাজ।’ বলছিলেন শুভংকর।

কাগজ দিয়ে টুকিটাকি শিল্পকর্ম করার হাত আগে থেকেই ছিল তার। এই যেমন কাগজের তাজমহল, কাগজের বায়োস্কোপ, ক্যামেরা ইত্যাদি। এই অভিজ্ঞতাটুকু কাজে লাগিয়ে ৩ দিন ধরে বাংলাদেশের ম্যাপের ওপর ৬৪ জেলার জন্য ৪৬ জেলার কাগজের বক্স তৈরি করলেন তিনি। এবার মাটি সংগ্রহের পালা। প্রথমত শুভংকর নিজেই কয়েক জেলার মাটি সংগ্রহ করলেন। বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতা চাইলেন। শুভংকর বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম আমার এই মানচিত্রে ৬৪ জেলার ৬৪ হাতের ভালোবাসাময় স্পর্শ লেগে থাকুক। কেউ যেন অবহেলা করে মাটি সংগ্রহ না করে। স্বেচ্ছায় আগ্রহ নিয়ে যাতে মাটি সংগ্রহ করে পাঠায় সবাই।’

প্রথমত অনেকেই তাকে গুরুত্ব দেয়নি। আবার অনেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে তাকে। এরপর সে তার আইডিয়াটা নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়ে ইউটিউব, ফেসবুক এবং বিভিন্ন ব্লগে শেয়ার করে। প্রকাশের পর থেকে সাড়া দেয় অনেকেই। অনেকে সহযোগিতায়ও এগিয়ে আসে। বিভিন্ন জেলা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাটিও আসা শুরু হয়।

শুভংকর বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আর আমার একার স্বপ্ন থাকে না। ছড়িয়ে পরে একঝাঁক মাটি সংগ্রাহকের মধ্যে। সবারই প্রত্যাশা একটিই ছুঁয়ে দেখব গোটা বাংলাদেশ। এ যেন মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী একটি প্রজন্মের নতুন করে হাতে হাতে বাংলাদেশ গড়ার মিশন।’

শুভংকর আরো বলেন, ‘আমি চাইনি এটা জোর করে হোক। সবার ভালবাসা লেগে থাকুক মাটির মানচিত্রে। এভাবেই ৩ বছর কেটে যায় প্রজেক্টটি নিয়ে। ভেবেছিলাম নিজে বাকি জেলার মাটি নিজ হাতে সংগ্রহ করব। কিন্তু তা করিনি। কারণ ফেসবুকে পোস্ট করলে অনেকেই বলত নিজে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য এসব করছি। এটাও খুব কষ্ট দিত। আর আমার মাটির মানচিত্রের অপমান হোক এটা চাইনি। তাই কার্যক্রমটি অনেকদিন স্থগিত থাকে।’

সর্বশেষ মানচিত্রের মাটি যারা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন সবাই মানচিত্র কবে উন্মুক্ত হবে এই নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে। আবার প্রচারণা শুরু করে শুভংকর। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বিষয়টি জানতে পেরে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং নিজেও তাকে সংগ্রহ করে দেন বেশ কয়েক জেলার মাটি। অবশেষে প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করার পর মাটির মানচিত্র তৈরি কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এখন আগামী ৩ অক্টোবর ফরিদপুরের জেলা উন্নয়ন মেলায় জেলা প্রশাসক এই মাটির মানচিত্রটির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বলে জানালেন শুভংকর।

শখের বসে শুভংকর সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, শুভংকরের স্বপ্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়া। তার বাসনা বাংলাদেশকে নিয়ে ভালো কিছু করে সারা পৃথিবীকে চমকে দেওয়া। সূত্র: রাইসিং বিডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়