মো.এনামুল হক এনা : আমাদের দেশে আইনের ভিত্তিতে কম জিনিষই হয়। আমার মনে হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাথে রাজনৈতিক বিষয় জড়িত আছে। আমাদের দেশে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত খুব কম মানুষই করে। খুব কম মানুষেরই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করার ইচ্ছা করে। বিশিষ্ট সাংবাদিক আফসান চৌধুরী আমাদের অর্থনীতির সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
এখন আমি যদি বলি শেখ সাহেব ৭১ এর সময় এটা করেননি এটা ঠিক হয়নি। তখন ইমিডিয়েটলি ছাত্রলীগ আমার নামে মামলা করবে যে আমি এটা কেন বললাম? আমাকে জেলে নিয়ে যাবে। আমার ভোগান্তি হবে। এটা পরিস্কার করে দেওয়া উচিত ছিলো। একটা মানুষকে বিশ্লেষণ করা আর একটা মানুষকে অপমান করা দুটো এক জিনিষ না। কেউ যদি বলে বাংলাদেশ অনেক ব্যর্থতার দেশ। তাহলে এটা কি মানহানিকর হয়ে গেলো?
নতুন ডিজিটাল আইন ২০১৮ এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে বিশিষ্ট এই সাংবাদিক আরও বলেন, নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাখ্যা কি হবে? এটা নিয়ে সমস্যা হবে। আমার দুঃচিন্তা হচ্ছে ব্যাপক হারে মামলা বেড়ে যাবে। যে কাউকে অসুবিধা করতে হলে মামলা করে দিবে। যে কাউকে ঝামেলা করতে হলে মামলা করে দিবে। সরকার অনেকভাবে এটাকে সামাল দিতে পারতো। যেহেতু সরকার রাজনীতির বাইরে কোনোকিছু দেখে না। যে সরকারই হোক আমাদের দেশের। রজনীতিবিদরা তাদের দলের বাইরে কাউকে চোখে দেখে না। এটা আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতার চিত্র। এটা আমাদের কপালে আছে, এটা নিয়ে ভুগতে হবে। কিন্তু তার মানে এই না সরকার আইন করতে পারবে না। সরকারের অবশ্যই আইন করার অধিকার আছে। যেহেতু ডিজিটাল জগৎ অনেক বড়। কিন্তু সরকার কি আদৌ যারা আইন লংঙ্ঘন করছে পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের কি সরকার সামলাতে পেরেছে? সরকার কি সামলাতে পেরেছে যে অন্যায় করে তাকে সমালোচনা করে সামাল দিতে?
আফসান চৌধুরী আরো বলেন, আইনের কাঠামোটা এত দূর্বল আমাদের দেশে যে একটি দলীয় প্রধানের উপর হামলা করেছে তার বিচার পেতেও সময় লাগে ১৪ বছর। অথচ তারা ১০ বছর যাবৎ ক্ষমতায় আছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমাদের দেশে দক্ষ বিচারিক ব্যাবস্থা আছে এটা বলা যায় না। যখন একটি দেশে দক্ষ বিচার ব্যবস্থা থাকে না। তখন সেই দেশে যে কোন নতুন আইন অপব্যবহারের সুযোগ বেশি থাকে।
তিনি বলেন, সমস্যা যেটা হতে পারে যে কোনটাকে মানুষ বিশ্লেষণ আর গবেষণা বলছে আর কোনটাকে অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার কথা বলছে সেটা তো আর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। এটিই হয়ে গেছে বড় সমস্যা। এখন যদি ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে তাহলে তো যে কেউ মামলা করে দিতে পারে। যে কেউ ভাবতে পারে আমার ধর্মের অনুভুতিতে আঘাত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তাহলে কতো মামলা হবে ভাবা যায়? এবং যখন ৫৭ ধারা ছিলো তখন সরকারই বা কয়টি মামলা করেছে? সরকার তো ৫৭ ধারায় মামলা করছে শেষের দিকে এসে অর্থাৎ এই কয়দিন আগে কয়েকটি মামলা করেছে শহিদুল আলমসহ।
আসলে মামলা তো পাবলিকে করে। মানুষকে হেনস্তা করার জন্য তো মামলাই সবচেয়ে ভালো। এই মামলা করার পদ্ধতিটা যে কি হবে? সেটা গুরুত্বপূর্ন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো হয়েছেই। তবে যারা এই আইনের সবচেয়ে বেশি আপত্তি করেছে তারা হচ্ছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিক বলতে আমি দুটোই বুঝাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রফেশনাল মিডিয়া। সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে যে পরিমান অসহিষ্ণুতা আছে এবং সেটার ব্যাপারে আমাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। সেখানে গিয়ে অসুবিধা হবে অনেক মামলা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :