রেজাউল আহসান : বয়স বাড়া নিয়ে অনেকের মনে হতাশা, আশঙ্কার মতো অনুভূতি সৃষ্টি হয়? সেই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার ও শরীরে বয়সের পরিমাপের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এক বিজ্ঞানী? লস এঞ্জেলেস শহরের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-স্ট্যাটিস্টিশিয়ান স্টিভ হর্ভাট বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষের শারীরিক বয়স পরিমাপ পদ্ধতির খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন? তিনি বলেন, ‘আমাদের বয়স কেন বাড়ে, তা জানার ইচ্ছা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়? সেটা কী এবং চিকিৎসা বা ওষুধের মাধ্যমে তাতে কীভাবে হস্তক্ষেপ করা যায়, তা অবশ্যই জানতে চাই? এভাবে বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার গতি কমাতে চাই? বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার পরিমাপ অন্যতম প্রধান বাধা ছিল? আগে অনেকে দাবি করতেন, অমুক ট্যাবলেট খেলে তারুণ্য ধরে রাখা যায়? কিন্তু তা যাচাই বা পরীক্ষা করার কোনো উপায় ছিল না?’

বেশ কিছুকাল ধরে বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষকদের ধারণা ছিল, যে ক্রোমোজোমের প্রান্তে টেলোমেরেস পরীক্ষা করেই মানুষের বয়স মাপা সম্ভব? কিন্তু দেখা গেছে, সেই পরীক্ষা মোটেই উপযুক্ত নয়? ভুলের মাত্রা ১৫ বছর কম বা বেশি থাকতো?

হর্ভাট কাকতালীয়ভাবেই ঠিক পথে অগ্রসর হয়েছিলেন? এক সহকর্মীর অনুরোধে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ডিএনএর মধ্যে সমকামিতার চিহ্ন খুঁজছিলেন? এই কাজে তিনি তথাকথিত ‘এপি মার্ক’এর প্রতি মনোযোগ দেন? এগুলো ডিএনএর নির্দিষ্ট কিছু অংশে যুক্ত বা বিযুক্ত হতে পারে? কোন কোন অংশে এপিমার্ক যুক্ত রয়েছে, কোথায় নেই; হর্ভাট হাজার হাজার কোষ পরীক্ষা করে তা নথিভুক্ত করেন? সেই তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সমকামিতার ইঙ্গিত খুঁজেছেন? কিন্তু তথ্যের মধ্যে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি? তারপর তিনি বয়সের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজতে সেই তথ্য আবার বিশ্লেষণ করেন? আচমকা তিনি সেই যোগসূত্র খুঁজে পেলেন? স্টিভ বলেন, ‘আমি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম? কারণ, এত বড় সংকেত রয়েছে, যে বিশ্বাসই হচ্ছিলো না? এই সব এপিজেনেটিক তথ্যের উপর বয়সের বিশাল প্রভাব রয়েছে?’ হর্ভাট আবিষ্কার করলেন যে, বয়স অনুযায়ী ডিএনএর মধ্যে এপিমার্ক বদলে যায়? তিনি ডিএনএর মধ্যে এমন কিছু জায়গা চিহ্নিত করলেন, যা বয়স নির্ধারণের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত? সেই সব জায়গায় ছাপ বা চিহ্নের বিন্যাস অত্যন্ত সমান থাকে? বালুর ঘড়ির মতো এ ক্ষেত্রেও তিনি এপিমার্ক বিশ্লেষণ করতে পারলেন?

হর্ভাট এমন ৩৬৩টি এপিজেনেটিক বালুর ঘড়ি খুঁজে পেয়েছেন? সেগুলির গড় নির্ণয় করে মানুষের বয়স জানা সম্ভব? ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনা পরিসর সর্বোচ্চ ৩ বছর ৫ মাস? হর্ভাট তার লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও কোনো বৈজ্ঞানিক পত্রিকা তার আবিষ্কারের খবর ছাপছিল না? সেই ঘড়ির কথা বিশ্বাস করতে তাদের সম্ভবত সমস্যা হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে বললাম, বয়স পরিমাপের মানদ- খুঁজে পেয়েছি? যে কোনো কোষের উপর তা প্রয়োগ করা সম্ভব? ফর্মূলাও হুবহু এক? মনে হলো, আমি যেন কাল্পনিক ইউনিকনের্র বর্ণনা দিয়েছি এবং প্রাণিবিদ বলছেন, এমন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, চলে যান?’ হর্ভাট দমে যাবার পাত্র নন? অবশেষে তিনি প্রকাশককে বোঝাতে পেরেছিলেন? পত্রিকায় তার গবেষণামূলক লেখাটি প্রকাশিত হয়? ফলে বৈজ্ঞানিক জগতে আলোড়ন পড়ে যায়? স্টিভ হর্ভাট বলেন, ‘ঘড়ি দিয়ে শুরু হলো? কোনো অণু, কোনো জিন এই মুহূর্তে প্রভাব খাটাচ্ছে কিনা, এই ঘড়ি ব্যবহার করে তা বিচার করাই আমাদের লক্ষ্য?’ আমাদের বয়স বাড়ার রহস্যের এখনো কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি বটে, কিন্তু তার উপর থেকে প্রথম যবনিকা উঠে গেছে?