আবু তালহা তারীফ: কবি বলেছেন, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।’ আজ যারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে যাদের নাম স¦র্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তারাও একদিন শিশু ছিল। শিশু থেকেই তারা আজ বড় হয়েছে। শিশুরা মহান আল্লাহ তায়ালার বড় এক নিয়ামত এবং পিতা মাতার জন্য আমানত। শিশুর মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শিশুরা হল জান্নাতের প্রজাপতি’। (মিশকাত শরীফ)
অন্যত্র রাসুল (সা:) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানেরা যখন সাত বছরে উপনীত হয় তখন তাদেরকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স হলে তাদেরকে নামাজের জন্য শাসন কর, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ তাই রাসুল (সা.) ছোটদেরকে নামাযের জন্য মসজিদে নিয়ে যেতেন।
আমারা যদি সন্তানদের হাত ধরে মসজিদে নিয়ে না আসি তাহলে কে তাদের মসজিদে আনবে? কে শিক্ষা দিবে তাদের নৈতিকতা, শিষ্টাচার আর নামাজের নিয়মনীতি? তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়াটাকে আমরা দোষণীয় মনে করি অথচ বাংলা নববর্ষের দিন, বানিজ্যমেলায়, বইমেলাসহ জাতীয় বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের কাধে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ তাদের নিয়ে দেখানো হয় সেটা দূষনীয় মনে করি না।
আমরা বলি, শিশুদের মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হচ্ছে না কারন, তারা দুষ্টুমি করে। এটাই মূলত ধরা হয় তাদের একমাত্র দোষ। অথচ এটি খুবই স¦াভাবভিক বিষয়। শিশুদের প্রতি আমাদের ব্যবহার দেখলে মনে হয় যেন মসজিদে কোন নিকৃষ্ট প্রাণী প্রবেশ করেছে অথচ ইসলামে শিশুদের দিয়েছে ব্যপক মর্যাদা আর সম্মান। কোন অবস্থাতেই তাদের অবহেলা করা উচিত নয়। সর্বদা দয়া-মায়া দেখাতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আমাদের শিশুদের প্রতি দয়া ¯েœহ করেনা সে আমাদের মধ্যে গণ্য নয়।’ (বুখারী শরীফ)
শিশুদেরকে রাসুল (সা.) মসজিদে নিয়ে যেতেন। বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, রাসুল (সা.) তার নাতনি হজরত উমামা বিনতে যায়নাব (রা.) কে কাঁধে করে মসজিদে নিয়ে আসতেন। যখন রাসুল(সা.) সিজদায় যেতেন তখন উমামা (রা.) রাসুল (সা.) এর পিঠে উঠে যেতেন কিন্তু তিনি কখনো তাকে ধমক প্রদান করেননি। শুধু তাই নয়, রাসুল (সা.) এর প্রাণপ্রিয় হজরত হাসান ও হুসাইন যখন রাসুল (সা.) নামাজের সিজদাবস্থায় থাকতেন তখন তারা পিঠে কিংবা ঘাড়ে উঠে যেতেন। রাসুল (সা.) বুঝতে পারতেন যে তারা খেলা করছে তাই তিনি সিজদায় বিশেষ সময় ব্যয় করতেন। সুবহান আল্লাহ! কত সুন্দর ব্যবহার বিশ্বনবীর নামাজের সময় শিশুদের সাথে করা। এখানেই শেষ নয়, রাসুল (সা.) এর খুতবা দেয়ার সময় তার নাতি হাসান ও হুসাইন আসলে তিনি খুতবা দেওয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন। চুম্বন করতেন আর বলতেন, খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারন করতে পারবনা তাই আমি খুতবা দেয়া বন্ধ করেই এদের নিকট চলে এসেছি। রাসুল (সা.) এভাবেই শিক্ষা দিয়েছেন তার উম্মতদের যেন তারা শিশুদের ভালবাসে তাদের কষ্ট না দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :