শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:৩৯ সকাল
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:৩৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি নুসরাতকে

ডেস্ক রিপোর্ট : লোকে দুই হাতে অনেক সময় যা করতে পারে না, আমি এক হাতেই তা করে যাচ্ছি। এক হাতেই মাউস ও কি-বোর্ড টিপে আমি ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছি স্বপ্নের পথে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিছু নয়, মনে করতে হবে এটি একটি শক্তি। এই শক্তি নিয়ে সামনে এগোতে হবে। আমি অন্তত তা-ই করছি।

প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলছিলেন নারী উদ্যোক্তা, ইন্টারেক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা নুসরাত জাহান।

জন্ম থেকেই নুসরাত জাহানের ডান হাতটি অচল। তবে তাঁর মানসিক দৃঢ়তার কাছে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধাই হতে পারেনি। তাই তো নুসরাত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সফটওয়্যার তৈরির সেরা ইনোভেটিভ আইডিয়ার জন্য হয়েছেন পুরস্কৃত, গড়ে তুলেছেন ‘ইন্টারঅ্যাক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট’ নামে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপিং প্রতিষ্ঠান।

নুসরাতের জন্ম শেরপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বরাবরই স্কুলে ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতেন। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর গ্রামের স্কুল ছেড়ে তিনি ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি স্কুলে ভর্তি হন। এসএসসিতে ময়মনসিংহ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অর্জন করেন সর্বোচ্চ জিপিএ। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে। এইচএসসিতেও অর্জন করেন জিপিএ ৫।

তাঁর বাবা নূর ইসলাম সব সময় তাঁকে পড়ালেখা বিষয়ে প্রেরণা দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নুসরাত বলেন, বাবা সব সময় আমাকে বলতেন, 'এই একটি হাতই আমার মেয়ের ডান হাত, এই একটি হাতই বাঁ হাত। এই মেয়ে আমার মেয়ে ও ছেলে উভয়ই।' বাবার প্রেরণাই আমার সারা জীবনের পাথেয়, যদিও খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছি।

উচ্চশিক্ষার জন্য নুসরাত ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে বিবিএ শেষ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর উপার্জনের একমাত্র উপায় ছিল টিউশনি। টিউশনি করে নিজের দায়িত্ব তিনি নিজেই নেন। পড়াশোনা শেষে চাকরি নেন বেসরকারি এক ব্যাংকে। দুই বছর চাকরি শেষে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে মাস্টার্স করেন জার্মানির রাইনওয়াল ইউনিভার্সিটি থেকে। দেশে ফিরে চাকরি নেন একটি সফটওয়্যার কম্পানিতে।

এরপর চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গড়ে তোলেন সফটওয়্যার ডেভেলপিং প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ আর্টিফ্যাক্ট’। কাজ করছেন এ আর (অগমেন্টেড রিয়ালিটি), ভি আর (ভার্চুয়াল রিয়ালিটি), সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতি নিয়ে।

উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, জার্মানিতে থাকার সময় সময় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন আইডিয়া চেয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমি অনলাইনে ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। সেখানে ৪৩৭টি আইডিয়া জমা পড়ে। আমার আইডিয়াটি সেরা ১০ তালিকায় স্থান পায়। এর ফলে আমি আইসিটি ডিভিশনের কাছ থেকে একটা ফান্ড পাই। সেরা ১০ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ জনতা টাওয়ার, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দেড় বছরের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। আমিও এই সুবিধা লাভ করি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তহবিল সহায়তার মাধ্যমেই উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

সেই আইডিয়া কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্ম থেকেই আমার হাত বিকলাঙ্গ। সমাজের লোকজন এসব বিকলাঙ্গতাকে বোঝা মনে করে। নানারকম জিজ্ঞাসা, নানা রকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বড় হয়েছি। তাই, ছোটবেলা থেকে চেয়েছি, তাদের জন্য কিছু একটা করতে। আমার আইডিয়াটিও ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধীদের শরীরচর্চা কী রকম হবে, সে বিষয়ে সিস্টেম তৈরি করা। আমাদের এই সিস্টেমের নাম ‘ফিজিওট্র্যাক’। এর মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি, কিভাবে তারা সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম করতে পারবে। এটি উন্নত ডিজিটাল পদ্ধতিতে শারীরিক ব্যায়াম পর্যবেক্ষণ করবে ও অঙ্গসঞ্চালনের সঠিক হিসাব করে একটি প্রতিবেদন দেবে। রোগীরা ঘরে বসেই এর সেবা নিতে পারবেন এবং প্রতিবেদনটি ডাক্তারকে দেখাতে পারবেন।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে নানান বাধাবিপত্তি পেরিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নুসরাত। এই অল্প সময়ে প্রাপ্তি সম্পর্কে নুসরাত বলেন, ইন্টারেক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট লি. বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড-এর বিনিয়োগ পেয়েছে। অনেক অর্জনের মাঝে এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন।

নুসরাতের ভাষায়, আমরা যা-ই করি না কেন, দেশকে সামনে রাখতে চাই। সবার আগে দেশ। আমরা এরই মধ্যে ‘কিলোফ্লাইট’ নামে বাংলাদেশের প্রথম অগমেন্টেড রিয়ালিটি গেম তৈরি করেছি। এটিতে ১৯৭১ সালে বিমানবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ দেখানো হয়েছে। আমরা চাই নানাভাবে একাত্তরের শুদ্ধ ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানুক। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা গেমিংয়ের মাধ্যমে এটি জানুক।

তিল তিল যত্ন আর ভালোবাসায় নিজের হাতে গড়া কম্পানিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চান নুসরাত। নানা বাধাবিপত্তি আসছে প্রতিনিয়িত। সবকিছুকে উপেক্ষা করে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন স্বপ্ন পূরণের দিকে। একদিন সারাদেশে তার ফিজিওট্র্যাক ও এর সেবা ছড়িয়ে পড়বে, এমনটাই স্বপ্ন দেখেন প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এই অদম্য উদ্যোক্তা।
সূত্র : বিবার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়