নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মান-অভিমান ভাঙাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখানে মান-অভিমানের কিছু নেই, এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন। এখানে কে মান, অভিমান করল, কার মান ভাঙাতে হবে সেটা আমি জানি না। সহানুভতি দেখাতে যেতে যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়, সেখানে আর যাবার ইচ্ছা আমার নেই।’ বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এ সংক্রান্ত এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে যে সুনাম অর্জন করেছে তা ধরে রাখতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। কোনো গোষ্ঠী বা দল যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানিমূলক পোস্ট, ভিডিও প্রচারকারীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
ফখরুল ইমাম বলেন, ‘একটা পিছিয়ে পড়া জাতিকে উন্নয়নে ভাসিয়ে দেওয়ার নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, যার রূপকার অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা নিয়ে কারোর মনে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে দেশে যে রাজনৈতিক মান-অভিমান চলছে, বাড়তে থাকা দূরতে ক্ষোভের পাহাড় জমছে। রাজনৈতিক এই সমস্যা রোহিঙ্গা ইস্যুর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা ভাঙাতে প্রধানমন্ত্রী কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে মান-অভিমানটা কোথা থেকে আসল আমি জানি না। এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রশ্ন, আর হচ্ছে আইনের প্রশ্ন। কেউ যদি অন্যায় করে, কেউ যদি অর্থ আত্মসাৎ করে, কেউ যদি চুরি করে, কেউ যদি খুনের প্রচেষ্টা করে, গ্রেনেড মারে, বোমা মারে তার বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক।’
নিজের নীতি আদর্শের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতি সবাই করে যার যার নিজস্ব আদর্শ নিয়ে, আর দেশটা সকলের, দেশটা আমাদের একার নয়। যারাই রাজনীতি করবেন দেশের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি তাদের একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই তাদের কর্মপন্থা ঠিক করবেন এবং কাজ করবেন এটা হলো বাস্তব। ‘আমি নিজের স্বার্থে রাজনীতি করি না। নিজেদের লাভ-লোকসানের জন্য রাজনীতি করি না। লাভ-লোকসানের বিচার করি না। সেই হিসাবও করি না। হিসাব করি জনগণের জন্য কী করলাম। তাদের কতটুকু করতে পারলাম জনগণের জন্য রাজনীতি করি। সেভাবে পদক্ষেপ নেই এবং বাস্তবায়ন করি। আন্তরিক ও নিঃস্বার্থভাবে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি বলেই অল্প সময়ে এত উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমার কাছে ব্যক্তির থেকে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থটাই বড়। ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ করি না। কতটুকু দিতে পারলাম, সেই হিসাবটা করি। কী পেলাম, কী পেলাম না, সেই হিসাব করি না। অতীতে তো অনেক সরকার ছিল। সেখানে দেশের থেকে ব্যক্তি-গোষ্ঠী বড় ছিল বলেই তারা উন্নতি করতে পারেনি। আমাদের কাছে সেটা কখনোই ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে অনেক সরকার ছিল। এত অল্প সময়ে এত উন্নয়ন কে করতে পেরেছে? পারেনি কেউ, কেন পারেনি? সেখানে ব্যক্তি স্বার্থকে দেশের জনগণের স্বার্থের চাইতে বড় করে দেখা হত। আমি ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ করি না। আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি বলেই দেশটাকে উন্নতি করতে পারছি। আমাদের উন্নয়ন এখন গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত হয়েছে। দেশকে উন্নয়নের ছোয়া দিতে পেরেছি সেটাই সব থেকে বড় পাওয়া। এখানে কে মান, অভিমান করল, কার মান ভাঙাতে হবে সেটা আমি জানি না। সহানুভুতি দেখাতে যেয়ে যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়, সেখানে আর যাবার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। এতটুক বলতে পারি।’
আপনার মতামত লিখুন :