আমিন মুনশি : কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতির আইনি বৈধতা মিলতে পারে আজ। গত ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন সোমবার বিলটি উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলার পর সাত দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যালোচনা শেষে সংসদে তোলা হয়।
জাতীয় সংসদের ওয়েব সাইটে আজকের দিনের কার্যাবলিতে দেখা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর তিনটি বিল উত্থাপন করা হবে। সেগুলোর মধ্যে কওমি মাদরাসা বিল রয়েছে সর্বশেষে। বাকি দুই বিল হলো, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ও সড়ক পরিবহন বিল। আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে সম্পাদকদের বেশ কিছু সংশোধনী থাকলেও আজই তা পাসের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি দেয় সরকার। এরপর এই স্বীকৃতি আইনি বৈধতা দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। গত ১৩ আগস্ট এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
বিলটিতে বলা হয়েছে, এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীনে ছয়টি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থাকবে। সেগুলো হলো: বেফাকুল মাদারিসিল আরবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙা, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ।
বিলে আরো বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল জারি করা এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের আলোকে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি স্থায়ী কমিটি বলে বিবেচিত হবে এবং তা দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে। এই কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বলে বিবেচিত হবে|
জাতীয় সংসদের ওয়েব সাইটে যা দেখা গেছে-
দিনের কার্যক্রমের মধ্যে আইন প্রণয়ন কার্যাবলীর ৩ (ক) তে বলা হয়েছে,
৩(ক)- জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, প্রস্তাব করিবেন যে, কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান করিবার নিমিত্ত আনীত বিলটি [‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান বিল, ২০১৮’] স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত আকারে অবিলম্বে বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা হউক।
৩(খ) তে উল্লেখ রয়েছে- জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, প্রস্তাব করিবেন যে, কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান করিবার নিমিত্ত আনীত বিলটি [‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান বিল, ২০১৮’] পাস করা হউক।
সুতরাং বহুল আলোচিত কওমি মাদরাসা আইনের বিল আজই চূড়ান্তভাবে পাসের জন্য সংসদে উঠতে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে কওমি স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে মাদরাসা-সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারীদের।
আপনার মতামত লিখুন :