শেখ মিরাজুল ইসলাম : নারীর ক্ষমতায়ন- কথাটি এখন মাত্র দুইটি শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর ব্যাপকতা ভিন্ন ও বহুমাত্রিক। আমাদের দেশে গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সক্ষম হচ্ছেন এবং সেই সূত্রে নিজের অবস্থান উন্নীত করেছেন ব্যাপকভাবে। এই বিষয়টিও এখন পুরানো। বহুদিন ধরে এদেশে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় নারী অধিষ্ঠিত ছাড়াও দেশের প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে আসছেন।
দুঃখের বিষয়, ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রত্যক্ষ করছি এক শ্রেণির মৌলানারা ওয়াজ-মাহফিলে নারী বিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার করে যাচ্ছেন এবং ধর্মের সঙ্গে তাকে যুক্ত করে কর্মজীবী নারীদের বিপক্ষে জ্বালাময়ী ওয়াজ করছেন। ধর্মের আবহের বাইরে ওইসব ওয়াজের বাচনভঙ্গি ও বর্ণনা প্রকাশ উদ্দেশ্যমূলক তা শুনলেই বোঝা যায়। কিছুদিন আগে জনৈক মওলানা পদবী ধারী ব্যক্তি দাবি করেছিলেন, মেয়েদের জিন্স প্যান্ট পরিধানের কারণে দেশে ভূমিকম্প হচ্ছে। এমন স্থুল মানসিকতায় আক্রান্ত ইসলামের লেবাসধারী মৌলানাদের আনাগোনা হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানিং বেড়ে গেছে। তারা ক্রমাগতভাবে হাদিস-কোরআন উদ্ধৃত করে নারীদের পর্দার আড়ালে থাকতে উৎসাহ দিচ্ছেন। জীবিকার জন্য বাইরে যেতে অনুৎসাহিত দেওয়ার পাশাপাশি নারীদের অশালীন পোশাকের দোহাই দিয়ে ঘর থেকে বাইরে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন, ধর্মের ভয় দেখাচ্ছেন এবং পুরুষদের তাদের ব্যাপারে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে। শুধু তাই নয়, যা তাদের দৃষ্টিতে পছন্দ নয় সেই কাজগুলোকে সরাসরি অনৈসলামিক আখ্যা দিয়ে সাধারণ কর্মজীবী নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করার পরামর্শ প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলগুলোতে। নারীদের শরীর, চলন-বলন ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিষয়ের বর্ণনা চূড়ান্ত অপমানজনকভাবে বয়ানের মাধ্যমে উপস্থিত মুসল্লিদের বিভ্রান্ত করবার পেছনে গূঢ় উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাছাড়া ডিবিসি চ্যানেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে খোদ বায়তুল মোকাররমের খতিব এই জাতীয় ঘৃণা ছড়ানো ওয়াজ প্রদানকারী মওলানাদের ব্যাপারে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশে আইসিটি আইনের আওতায় সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও নারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচারের ব্যাপারে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। ওয়াজের নামে ধর্মের আবেগকে পুঁজি করে তালেবানী কায়দায় ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের সুদূরপ্রসারী ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে বৃহত্তর আলেম সমাজ ও আইন প্রণয়নকারী সংস্থা খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কর্মজীবী সাধারণ দরিদ্র শ্রেণির নারীদের কাজের পরিবেশ আরও বেশি মাত্রায় বিঘ্নিত হতে পারে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের পোশাক-আশাক নিয়ে অহেতুক অশ্লীল মন্তব্যকারী ওইসব মওলানাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত রহস্যজনক। তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের নিয়ে ইসলামের লেবাসধারী কতিপয় মওলানাদের হঠকারী মন্তব্য, হাসি-তামাসা এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই উচ্চ পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েও তাদের উচ্চারিত বিষবাষ্প কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। মাননীয় সরকার কি এই বিদ্বেষমূলক অপপ্রচারের মাজেজা ও শানে নুযুল বুঝতে পারছেন? লেখক : চিকিৎসক ও লেখক। সম্পাদনা: জেকী
আপনার মতামত লিখুন :