শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০০ দুপুর
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সময় বাড়ে গতি মন্থর

ডেস্ক রিপোর্ট:  তিন মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার আকর্ষণে চলতি বাজেটে অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দও রাখা হয়। যা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ গুরুত্বারোপও করেছেন। প্রকল্পের বাস্তবায়ন, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণের জন্য ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি’, ‘ফাস্ট ট্র্যাক টাস্কফোর্স’সহ একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে পদ্মা সেতু ও মেট্রো রেল ছাড়া সব প্রকল্পের কাজেই বিরাজ করছে স্থবিরতা। একই সঙ্গে কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। বরং সবগুলোর সময় বাড়িয়ে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে প্রথম মাসে ব্যয় করেছে ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশে। এর মধ্যে ২৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার শূন্য শতাংশ। এদিকে আইএমইডি’র তথ্যমতে, অর্থবছরের প্রথম মাসে ১৭ প্রকল্পে একটি টাকাও ব্যয় করতে পারেনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ফলে অর্থবছরের প্রথম মাসে এ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন শূন্য শতাংশ। একই অবস্থা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। ৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে অর্থবছরের প্রথম মাসে কোনো টাকা ব্যয় করতে পারেনি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বরাদ্দের শীর্ষ ১৫ তালিকায় থাকা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়েরও জুলাই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন শূন্য শতাংশ। বড় বরাদ্দ পাওয়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নও শুরু হয়নি অর্থবছরের প্রথম মাসে।
দীর্ঘদিন থেকে অর্থবছরের শুরুতেই এডিপি বাস্তবায়নের কাজে গতি আনার তাগিদ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শুরুর দিকে কাজ না করলে অর্থবছরের শেষের দিকে ৯/৬ করে দ্রুত কাজ করতে হয়। ফলে কাজের গুণগত মান বজায় থাকে না। অনেক সময় কাজ না করেও টাকা উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। ফলে অপচয় হয় সরকারি অর্থের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও বছরের শুরুতে কাজে গতি আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কারো উদ্যোগই কাজে আসছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এটা অনেক পুরনো সমস্যা। বছরের শুরু থেকে প্রকল্প ফেলে রেখে শেষ দিকে দায়সারা কাজ করা হয়। বর্তমান সরকারও এ বিষয়ে অবহিত। বছরের শুরুতে কাজ করতে প্রতিবারই নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু কোনো নির্দেশনারই বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, একসঙ্গে বেশি প্রকল্প নেয়ার কারণে বাস্তবায়নে গতি আসে না। তবে অর্থ ফেরত যাওয়ার ভয়ে শেষদিকে কিছু কাজ করে টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়। এতে জনগণের কোনো কাজে আসে না।
আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে কিছু কাজ হলেও অনেক সময় অর্থ ছাড় হতে বিলম্ব হয়ে থাকে। এর ফলে বছরের শেষের দিকে এডিপি বাস্তবায়ন কিছুটা বেশি মনে হয়। অর্থনীতির শৃঙ্খলার জন্য এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে বছর শেষে এডিপির বাস্তবায়ন শুধু টাকার অঙ্কে বিচার করলে হবে না। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তা সঠিকভাবে হয়েছে কি-না, তা দেখতে হবে। অন্যদিকে যারা বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের বাস্তবায়ন না করতে পারার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এডিপির আওতাধীন বড় প্রকল্পগুলো বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে, ব্যয় বেশি করা হচ্ছে। ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রকল্প দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প দীর্ঘায়িত হওয়ায় ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব প্রকল্পের ওপর বিশেষ তদারকির ব্যবস্থাও রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে এসব বড় প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি মানুষের দৃষ্টিগোচরের চেষ্টা চালানো হয়। পদ্মা সেতুসহ অন্য সব প্রকল্পের কাজ শুরুও করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু ও মেট্রো রেল ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। এসব প্রকল্পের অগ্রগতির গড়ার মাত্র ১৫ শতাংশ। আর পদ্মা সেতুর কাজ দৃশ্যমান হলেও সঠিক সময়ে শেষ হচ্ছে না। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বসেছে পাঁচটি। কাজ চলছে আরও ১০টি পিলারের। এদিকে সেতুর কাজ শেষ করতে আরও তিন বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। তবে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার ও সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় বাড়ানোর পক্ষে যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে।
মেগা প্রকল্পের তদারকির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। অগ্রাধিকারযুক্ত বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, কাজের গতিও এসেছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি শিগগিরই নজরে আসবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্পের বেশির ভাগেরই কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রো রেল প্রকল্প) এবং পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুনধুম পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বড় প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর। অন্য প্রকল্পের মধ্যে মেট্রোরেলের মূল কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। উত্তরা থেকে মিরপুরের বেশ কয়েক জায়গায় মেট্রোরেলের খুঁটির ওপর স্প্যান বসানো হয়েছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বড় প্রকল্পের কাজের গড়হার ১৫ শতাংশ। এর বেশি নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হতে সময় লাগায় অগ্রগতি কম হয়েছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থের যেন সংকট না হয় সেজন্য এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত। এছাড়া বছরের প্রথম থেকেই অর্থছাড় করা হবে। ফলে এখন দ্রুত কাজ এগিয়ে যাবে। শিগগিরই এসব প্রকল্পের দৃশ্যমান বড় অগ্রগতি নজরে পড়বে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ফাস্ট-ট্র্যাক দশটি প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প : নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় হাজার ২৬ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। একাধিকবার সংশোধনের পর এখন এর নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকায়। সর্বশেষ অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পাঁচটি স্প্যান বসানো হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প : পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। সম্প্রতি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চায়না কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প : বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ঈশ্বরদীতে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।
টাকার অঙ্কে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। গত দুই বছরে প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে মাত্র ছয় হাজার ৪৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির জায়গা অধিগ্রহণসহ প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প শেষ হয়েছে।
রামপালে মৈত্রী থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৪০২ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র চার হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার প্রায় ১৪ শতাংশ।
এছাড়া বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পেও। রাজধানীবাসীকে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি দিতে দুটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পেও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর একটি হলো- মেট্রো রেল নির্মাণ প্রকল্প এবং অপরটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণকাজ।
মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প : এ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে। ২০১২ সালে নেয়া এ প্রকল্পের প্রথম ছয় বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৩ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে দুই হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি ঘণ্টায় ২২ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন। রাজধানীবাসীরও প্রকল্পটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আছে। ২০১৯ সালে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল চালু হওয়ার কথা। ২০২৪ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ প্রকল্প : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর যানজট ৩০ ভাগ কমে আসবে। ২০২১ সালের মধ্যেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা ভোগ করবে রাজধানীবাসী।
এটি নির্মাণে ৮০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। গাড়ি ওঠা-নামার র‌্যাম্পসহ এর দৈর্ঘ্য হবে মোট ৪৬ কিলোমিটার। তিনটি ধাপে এর নির্মাণকাজ চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে ১৬টি এবং গাড়ি নামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প বা সংযোগ সড়ক থাকছে। আর আটটি পয়েন্টে থাকছে টোল প্লাজা।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প : বাজেটে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে কর্ণফুলী সড়ক টানেল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মোট আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (সম্ভাব্য) ব্যয়ের এ টানেলের অ্যালাইনমেন্ট হবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে। বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানাসংলগ্ন ঘাট। মোট নয় হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রকল্পটির মধ্যে টানেলের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৫ মিটার (উভয় পাশের ৪৭৭ মিটার ওপেন কাট বাদ দিয়ে)।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ প্রকল্প : এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এক দফা ব্যয় বৃদ্ধির পর প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা; মেয়াদ ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে গত বাজেটের অন্যতম ও অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরকার সরে এসেছে। এবারের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। সূত্র: ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়