শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৭:০৯ সকাল
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৭:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘সংকটাপন্ন’ দেশের হৃদরোগ চিকিৎসা!

ডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিচ তলায় অবস্থিত জরুরি বিভাগের সামনে বসে ছিলেন মুজাহিদ। পাশের চেয়ারে বসতেই স্বজনের সঙ্গে তার কথোপকথন কানে আসে। পরে সেই সূত্রে কথা হয় মুজাহিদের সঙ্গে। মুজাহিদ জানালেন, দিনাজপুর থেকে আসা তার চাচার কার্ডিয়াক সার্জারির কথা বলেছেন সেখানকার চিকিৎসকরা কিন্তু এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। এখন কোথায় যাবেন সে চিন্তায় অস্থির পরিবারের সদস্যরা। অথচ রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব সার্জারির কথা বলেছিলেন চিকিৎসকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত কয়েকদিন ধরেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে কোনো রোগীকে ভর্তি করানো হচ্ছে না। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানালেন, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সংস্কার কাজ চলছে। তবে এ অবস্থা কতদিন থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সবগুলো ক্যাথল্যাব মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বলে জানা গেছে। যার কারণে সেখানে সব ধরণের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে, এ দুই জায়গা থেকে ফেরত গিয়ে মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলেও সেখানে শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ অবস্থায় এক সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে দেশের গুরুতর হৃদরোগীরা।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ হাসপাতালে পাঁচটি অস্ত্রোপচার কক্ষ বা ওটি রয়েছে। যার মধ্যে প্রতিদিন তিনটিতে গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চার থেকে পাঁচটি ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ থাকায় যেসব রোগী হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন তাদের অস্ত্রোপচারও স্থগিত রাখা হয়েছে।

কেবলমাত্র ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের ক্যাজুয়ালিটি ওটি চালু রাখা হয়েছে, যেখানে কেবল পায়ের শিরার অপারেশন ছাড়া আর কোনো কাজ করা হচ্ছে না। অপরদিকে, যেসব রোগীদের ভাসকুলার সার্জারি, বাল্ব প্রতিস্থাপন, বাইপাস সার্জারির রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না, কারণ, অস্ত্রোপচার কক্ষের সংস্কার কাজ চলছে।

আবাসিক চিকিৎসক ডা. পীযুষ বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, সংস্কার কাজ চলার কারণে ওটি বন্ধ রয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতলের একজন চিকিৎসক জানান, গত ঈদ উল আযহার আগে ও পরে হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে এমন সাতজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তখন বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হওয়াতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। একইসঙ্গে এসব রোগীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের উদ্যেগে নেওয়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে জানা যায়, সার্জারির ত্রুটির জন্য নয়, বরং রোগীদের মৃত্যু হয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকা সংক্রমণ (ইনফেকশন) এর জন্যই এসব রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি যেন জানাজানি না হতে পারে সেদিন ওই প্রেজেন্টেশনে উপস্থিত হয়নি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হাসপাতালটির অস্ত্রোপচার কক্ষের বেশকিছু নমুনা মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মাধ্যমে একটি আধুনিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, জীবাণু সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমরা, তবে শতভাগ নিশ্চিতের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ভার্টিক্যাল এক্সটেনশন হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশ স্যাঁতস্যাঁত হয়ে পড়েছে, এতে করে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এদিকে, হাসাতালের ওটি কমপ্লেক্সের সংস্কার কাজ চলছে। ওটি চালু হতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে ওটি চালু করার নির্দেশ দেওয়া হলেও কিছুদিন বেশিও লাগতে পারে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের তিন ক্যাথল্যাব মেশিনের তিনটিই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। যার মধ্যে অ্যাডাল্টদের জন্য দুটি মেশিনের একটি নষ্ট প্রায় দু বছর ধরে, আরেকটি নষ্ট হয়েছে প্রায় মাস ছয়েক হয়েছে। এ দুটি মেশিন এর আগে দুইবার মেরামত করেও বেশিদিন চালানো যায়নি। অন্যদিকে, শিশুদের জন্য নির্ধারিত পেডিয়াট্রিক ক্যাথল্যাবও নষ্ট হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই, যা ঠিক করতে প্রয়োজন কোটি টাকা। তবে এই মেশিনটির ওয়ারেন্টিও প্রায় শেষের পথে বলে জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরা। যার কারণে এ হাসপাতালেও এনজিওপ্লাস্টি ও এনজিওগ্রাম বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন মেশিন নষ্টের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অ্যাডাল্ট মেশিন দুটি নষ্ট রয়েছে, যার কারণে এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি হচ্ছে না রোগীদের, আবার পুরাতন হয়ে যাওয়াতে মেরামতও করা যাচ্ছে না। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নতুন মেশিন আসা পর্যন্ত। পেডিয়াট্রিক ক্যাথল্যাবের মেশিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে এ মেশিনের মেয়াদকাল। যদিও মেশিনটির এক্স-রে টিউব নষ্ট হয়ে গিয়েছে, যা ঠিক করতে প্রায় ১ কোটি টাকার প্রয়োজন।

অপরদিকে, জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) টিতেও সংক্রমণ ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ হাসপাতালেও বেশ কয়েকজন রোগীর নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রোগীদের অস্ত্রোপচারের পর আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু সেখানে সংক্রমণ হওয়াতে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। সূত্র: সারাবাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়