শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০২:৩৬ রাত
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০২:৩৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ট্রাম্পবিরোধী বিএনপিই ট্রাম্পের পদধূলি চায়?

দীপক চৌধুরী : নির্বাচন দরজার সামনে কড়া নাড়ছে। হাটে-মাঠে-ঘাটে এখন এক শ্রেণির মানুষের আগ্রহের আলোচনা নির্বাচন। অবশ্য খেটে খাওয়া মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। নির্বাচন নিয়ে তাদের বেশি আগ্রহ নেই। এই বিষয়টি নিয়ে তারা আগ্রহভরে শুনতেও চায় না, জানতেও চায় না। আমরা সবাই জানি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব বিষয় নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে অবশ্য তার বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের জনগণ নয়, জাতিসংঘ যদি কিছু একটা করে দেয়, এটাই আশা বিএনপির। একসময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই ছিল তারা। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন পাওয়ার জন্য নানা ধরনের চেষ্টা। তিনি যদি খুশি হন। তবে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পবিরোধী বিএনপিই এখন ট্রাম্পের পদধূলি চাইছে! এছাড়া আমরা এটাও জানি, বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ এবং চিঠি আদান-প্রদান করছে বিএনপি। এসব চিঠিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, নালিশ।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক দুটি লবিয়িং ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এদের নিয়োগ দেওয়ার খবর এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য পলিটিকোর খবরে এ কথা জানানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও কংগ্রেসম্যান, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক, পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিএনপির হয়ে কাজ করবে নাকি লবিস্টরা। খুবই সুন্দর কথা। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে নয়, বিএনপি নিজের গরজেই জাতিসংঘের কাছে নালিশ করতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বিএনপির এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সমালোচনা গ্রামগঞ্জ-শহরের অনেকে জায়গাতেই। এতে বিএনপির রাজনৈতিক দৈন্যতাই প্রকাশ পায় মনে করেন সাধারণ মানুষ। অবশ্য, কেউ কেউ মনে করেন; আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বা বিশ্বেবাসীর কাছে এটি বিএনপির নিজেদের গুরুত্ব প্রকাশ করার কৌশল। আর এটি যে এবারই প্রথম তা কিন্তু নয়। দলটি জাতিসংঘের মহাসচিবের নাম ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে চাইছে এবার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, জাতিসংঘের কাছে নালিশ করে বিএনপির ইচ্ছা পূরণ হবে না। অতীত অভিজ্ঞতায় বলা যায় যে, নির্বাচন পূর্ব মুহূর্তে বিএনপি নানারকম কৌশল বেছে নিয়ে থাকে। মিথ্যা তথ্য প্রকাশের কৌশল। ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর দলটি প্রচার করলো তাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান টেলিফোনে কথা বলেছেন অমিত শাহের সঙ্গে। বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমকর্মী, টেলিভিশন সাংবাদিক এর সত্যতা যাচাইয়ে ভারতের বিজেপিপ্রধান অমিত শাহের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু অমিত শাহ জবাবে বললেন, কোনো টেলিফোন তিনি পাননি, কথাও বলেননি। তার ভাষায়, ‘টোটালি রিউমার।’

সোজা কথা, ঘুরিয়ে না বললেও বুঝতে কষ্ট হওয়ার নয় যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের একটি ভূমিকা থাকেই। তারা প্রকাশ্যে বলে থাকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারত মাথা ঘামাতে চায় না, কিন্তু গোপনে মাথা ঘামায়। বিএনপির ভারতপ্রীতি হঠাৎ চাঙ্গা হয়েছিল কয়েক মাস আগে। দলের কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র্র মোদির মন গলাতে ভারত সফর করেন ও শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের চোদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন। ওই বিএনপিই ১৯৯১, ৯৬, ২০০১ এর নির্বাচনের প্রচারণায় নির্লজ্জ উক্তি করেছিল ভারত নিয়ে। কথায় আছে না, ‘কপালে নাই ঘি, ঠকঠকালে হবে কী?’ আর ২০০১ এর নির্বাচনের আগে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী টিভিতে ‘সাবাস বাংলাদেশ’ নামের এক নিয়মিত অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছিলেন। এককথায়, এর বেনিফিশিয়ারী তিনি হয়েছিলেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছিলেন তিনি। ১১ পর্বের এই অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল বিটিভি এবং একুশে টেলিভিশনেও।

একযোগে প্রচারিত মিথ্যে, বানানো তথ্য আর প্রপাগান্ডায় ঠাসা ওই অনুষ্ঠানে বি চৌধুরী এক হাতে গীতা আর অন্য হাতে কোরান নিয়ে বলতেন, বাংলাদেশের মানুষকে ঠিক করতে হবে তারা কি গীতার (ভারত তথা আওয়ামী লীগ), নাকি কোরানের (বিএনপির) পক্ষে থাকবে। প্রকাশ্যে এত  বেশি সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দু-বিদ্বেষ বাংলাদেশে অন্য কোনো রাজনীতিবিদ কখনও ছড়াননি। যে বিএনপির জন্য তিনি এত কিছু করেছিলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছেন, নীতি-নৈতিকতা-বিবেকবোধ বিসর্জন দিয়েছিলেন, সেই তিনিই শেষ পর্যন্ত বিএনপির গলাধাক্কার শিকার হন। বি চৌধুরীর পুত্র মাহীর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দিয়েছিল বিএনপির লোকেরা। দৌড়াতে দৌড়াতে রেললাইনের ওপর উঠিয়ে দিয়েছিল বি চৌধুরী, মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, মাহী চৌধুরীসহ তাদের অনেকেকেই। বি চৌধুরীর পেছনে পিস্তল হাতে নিয়ে দৌড়াতে  দৌড়াতে গেছে। তাহলে এটাই কী রাজনৈতিক বাস্তবতা? এবার নাকি ভারতের সমর্থন আদায়ে বি চৌধুরী সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলেছেন। কারণ, প্রকাশ্য উচ্চারণ না করলেও বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা অনেকেই বিশ্বাস করেন। বর্তমান  প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের সময় খারাপ যাচ্ছে, ভারতের চলছে সুসময়। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুনমাত্রা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতই প্রমাণ হয় যে, ভারতের প্রতি তারা এখন ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণ করছে।

একসময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া নীতিকে ‘পাকিস্তান ঘেঁষা’, যাকে ‘টিল্ট’ বলে বর্ণনা করা হতো, এখন তার উল্টোটাই হচ্ছে। সোজা কথায়, ওই নীতি এখন ভারত ঘেঁষা। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতির সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হচ্ছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের অব্যবহিত আগেই পাকিস্তানকে দেওয়া ৩০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল স্থায়ীভাবে বাতিল করে দেওয়ার ঘোষণা। পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটছে, সেই পটভূমিকায় পারস্পরিক আলোচনা এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো দক্ষিণ এশিয়ার আগামী দিনগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিবেচনা করা দরকার। বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নানারকম হিসেবও করা হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি দূর থেকে দর্শক হিসেবে দৃশ্য দেখে তাহলে কারো কী কিছু বলার আছে?

লেখক : উপ-সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়