মুফতী আজীজুল্লাহ আশরাফ কাসেমী: পহেলা মুহাররাম। হিজরি নববর্ষ। ১৪৪০ তম হিজরীর প্রথম সপ্তাহ চলছে। সূচিত হলো নতুন বর্ষের নতুন গতি, নতুন যাত্রা। এ মাসে হৃদয়ে হৃদয়ে পুণঃস্মরিত হবে হিজরী বর্ষের ইতিহাস, হিজরতে নববী সা. এর ইতিহাস। তাগুত ও কুফরি শক্তির আগ্রাসনের শিকার হয়ে নবীয়ে আরাবি (সা.) ছেড়ে ছিলেন জন্মস্থান মক্কাভূমি। পথ ধরেছিলেন মদীনা তাইয়্যেবার। দুনিয়াতে তখন যে ক’জন মুসলমান, সবাই ছিলেন কুফরীসমাজ কর্তৃক মজলুম। সবাই হিজরত করলেন মদীনায়। ঐক্যবদ্ধ হলেন ন্যায়ের পতাকাতলে; ইসলামের সুশিতল উদারিত উন্মুক্ত ছায়ায়। এই হলো হিজরত। এ থেকেই হিজরি বর্ষের ক্যালেন্ডার। কুফরীর হাতে নিষ্পেষিতোন্মুখ নতুন ধর্ম ইসলামের জয়-সূচনার ইতিহাস।
নববী-হিজরতের এ ইতিহাসে জড়িয়ে আছে কতেক নারী ও সু-চতুর যুবক। অবদান ছিল তাদেরও। তাছাড়া কোথায় নেই তাদের অবদান? পৃথিবীর সকল সভ্যতা বা স্বপ্ন, সবের উন্নয়নেই পাওয়া যাবে এদের কীর্তি-কাজ। আজো যদি তারা সত্যের পথে সচেনতন হয়ে উদৃপ্তচিত্তে ঈমানি নিশান হাতে কদম বাড়ায়, তবে তাগুতিশক্তি আবারো থুবড়ে যাবে মক্কাবাসী জালিমানের মত। আবারো বাস্তবায়িত হবে হিজরতের শিক্ষা। হযরত আবু বকর রা. এর দু’তনয়া, হযরত আসমা ও হযরত আয়শা (রা.) তারা প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন মুহাজির হযরত নবীয়ে আরাবী (সা.) ও সিদ্দীকে আকবর রা. এর গুরুত্বপূর্ণ পথোসম্বল, খাদ্য-পানীয়। নিজের প্রিয় পোশাক ছিন্ন করে পূরণ করেছিলেন এক টুকরো রশি’র প্রয়োজন। এবং ‘যাতুন্নিতাক্বাইন’ (দুই ডোর ওয়ালী) উপাধী নিয়ে আসমা রা. ওঁতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেলেন হিজরতের ইতিহাসের সঙ্গে। সাহসী যুবক হযরত আলী রা.কে রাসূল সা. রেখে গেলেন নিজের একান্ত বিছানায়। নবী-হত্যার জন্য অপেক্ষমান অসংখ্যা তরবারী সে রাতে প্রকৃতার্থে তার প্রতিই উদ্যত ছিল। রাতের আঁধারে যদি আক্রমন হত সেদিন, তবে নির্ঘাত তিনি শহীদ হতেন। তাঁর কাছে থাকা কাফেরদের গচ্ছিত আমানত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বটাও ছিল হযরত আলী (রা.)’র স্কন্ধে। এছাড়া যুবাবয়েসী আব্দুল্লাহ ইবনে আবী বকর (রা.) তিনি নিয়মিত তথ্য সরবরাহের কাজ করেছেন। দিনজুড়ে ঘটে চলা মক্কার সমস্ত খবর সংগ্রহ করে পৌঁছাতেন ছাওর গুহার অভ্যন্তরে, রাসূল সা. এর দরবারে।
প্রিয় পাঠক! হিজরতের এ ইতিহাসে আরো জড়িয়ে আছে ভিন্নধর্মের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও দায়বদ্ধতার ইতিহাস। রাসূল সা. মদীনা পৌঁছেই সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য ইতিহাস গড়ে ছিলেন; সবার ন্যায্য অধিকার রক্ষা করতে আন্তধর্মীয় সন্ধিপত্র তৈরি করেছিলেন। ‘মদীনা সনদ’ নামে যে সংবিধান পৃথিবীর ইতিহাসে আজো চির উজ্বল! তাগুতের গুতোয় নুব্জ্য পৃথিবী আজ আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরোধী প্রমান করতে চায়। অসাম্প্রদায়িক বলে নিয়তই আমাদের উপর খড়া চালায়। অথচ আমরাই শিখিয়েছিলাম তাদেরকে উক্ত সম্প্রীতির সবক। ইতিহাস স্মরণের এই দিনে আজ, আবার আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় করতে হবে। ভিনধর্মীদের অধিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :