ডেস্ক রিপোর্ট : দানবীয় পানির স্রোত-দেয়াল-আবহাওয়াবিদ-ঘূর্ণিঝড় প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টিতে তীব্র বন্যা যখন দানবীয় আকার ধারণ করল, সেই পানিকে আর স্বাভাবিক পর্যায়ের কিছু মনে হচ্ছিল না।
সমুদ্র থেকে টেনে আনা ঘোলা সেই জলরাশিকে মনে হচ্ছিল ভয়ানক অশুভ, অনতিক্রম্য একটি দেয়াল, যা ১৫-১৬শ’ কেজি ওজনের বড় বড় গাড়ি তুলে ফেলার, চলার পথে এলাকার পর এলাকা এক আঘাতে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
অথচ মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার আবহাওয়াবিদ এরিকা নাভারো পেছনে এই ৯ ফুট উঁচু কলজে কাঁপানো পানির স্রোতের দেয়াল নিয়েও একেবারে শান্ত ভঙ্গিতে ক্যামেরার সামনে কথা বলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু ছাড়া আর বিন্দুমাত্র উৎকণ্ঠা নেই তার মাঝে।
যদিও দেখে মনে হচ্ছে, অদৃশ্য একটি কাচের দেয়াল দিয়ে কোনোমতে আটকে রাখা হয়েছে পানির এই বিপুল স্রোতকে। যে কোনো সময় দেয়াল ভেঙে এরিকার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে বন্যার পানি।
এর মাঝে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক স্বরে জোর দিয়ে বলছেন এরিকা: ‘পানি যদি এই ৯ ফুট সীমা পর্যন্ত চলে আসে, তাহলে বুঝতে হবে এটি একেবারেই প্রাণঘাতী পরিস্থিতি। আপনি যদি এমন অবস্থায় পড়েন, দয়া করে তক্ষুণি সেই এলাকা থেকে সরে পড়ুন!’
যে কেউ দৃশ্যটি দেখলে আঁতকে উঠবে। কিন্তু এরিকার এই শান্ত থাকতে পারার পেছনে রহস্য একটাই: তিনি নিজেকে প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়েছেন, পেছনে থাকা ভয়ঙ্কর পানির দেয়ালটি আসল নয়, ভার্চুয়াল!
আসলেই তাই। ‘ইমারসিভ মিক্সড রিয়েলিটি’ (Immersive Mixed Reality IMR) হিসেবে পরিচিত নতুন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিষয়ক টিভি স্টেশন দ্য ওয়েদার চ্যানেল তৈরি করেছে এমন একটি স্টুডিও সেট।
এই সেটে অ্যাংকরের পেছনে এবং আশপাশে সবুজ স্ক্রিন বা ক্রোমা ব্যবহার করে অত্যাধুনিক গ্রাফিক্সের সাহায্য নেয়া হয়। ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার থেকে পাওয়া প্রতি মুহূর্তের পূর্বাভাসমূলক তথ্য-উপাত্তকে কাজে লাগিয়ে সেই গ্রাফিক্সকে এমন ভার্চুয়াল দৃশ্যে পরিণত করা হয়, যা দেখলে যে কেউ তাকে বাস্তব ভাবতে বাধ্য।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনায় হারিকেন ফ্লোরেন্সের আঘাতে তীব্র বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় পরিস্থিতি সর্বোচ্চ কতটা খারাপ হতে পারে এবং ওই সময় আক্রান্তদের কী করণীয়, তা বোঝাতে এরিকা নাভারোর জন্য ওই গ্রাফিক্সটি তৈরি করা হয়েছিল।
যদিও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পানি ৯ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর মতো ভয়ঙ্কর অবস্থা হওয়ার কথা না। কিন্তু তারপরও সাবধানতার জন্য এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল।
আবহাওয়াজনিত জরুরি কোনো পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য অবস্থা বোঝাতে এই প্রযুক্তি এখন ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা আবহাওয়ার খবরকে একদিকে যেমন আকর্ষণীয় করবে, তেমনি দর্শকদের জন্য পূর্বাভাসগুলো বোঝাটাও সহজ হবে।
সূত্র : চ্যানেল আই অনলাইন
আপনার মতামত লিখুন :