শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:১২ সকাল
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইভিএমে বাড়তি ব্যয় ২৮২০ কোটি

ডেস্ক রিপোর্ট: দুটি নতুন ফিচারযুক্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যয় বাড়বে ২ হাজার ৮২০ কোটি এক লাখ ৫০০ টাকা। আগের ইভিএম ক্রয়-ব্যয়ের তুলনায় প্রতিটি ইভিএমে পৌনে দুই লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে। এ নিয়ে কমিশনের বৈঠকে আপত্তি করেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এত টাকা দিয়ে ইভিএম কেনার পেছনে অন্য লক্ষ্য রয়েছে। আর সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, নতুন এই ইভিএম অত্যাধুনিক, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এ কারণেই ব্যয় বেড়েছে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে প্রতিটি মেশিন কিনতে খরচ হবে প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এই প্রকল্প প্রস্তাবের আগে কমিশন একটি ইভিএম মেশিন কিনতে খরচ করত ৪৬ হাজার টাকা। কিন্তু এখন একটি ইভিএম কিনতে খরচ করবে প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। আগের তুলনায় এখন একটি ইভিএম কিনতে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ ৮৮ হাজার টাকা খরচ করবে ইসি। এই হিসাবে দেড় লাখ মেশিন কিনতে নির্বাচন কমিশনকে খরচ করতে হবে অতিরিক্ত দুই হাজার ৮২০ কোটি এক লাখ ৫০০ টাকা।

শুধু তা-ই নয়, একই মানের ইভিএম কেনার প্রস্তাব চলতি বছরের ৮ এপ্রিল কমিশন সভায় ওঠে। সভায় ২৫৩৫টি ইভিএম কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫০ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিটি ইভিএম মেশিন কিনতে প্রায় এক লাখ ৯৭ হাজার ২৩৮ টাকা খরচ করতে হতো কমিশনকে। সেই একই মানের ইভিএম মেশিন নির্বাচন কমিশন কিনছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকায়।

‘নির্বাচনব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রকল্পে’র প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২৯ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে ইভিএম কিনতে খরচ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইভিএম বাদেও সফটওয়্যার কেনার জন্য এতে রয়েছে ৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকার বাজেট। আগামীকাল ১৮ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার প্রকল্পটি পাস হওয়ার কথা রয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। প্রকল্পটি পাস হলে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে এই মেশিন কিনবে ইসি।

ইভিএম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের ইভিএমের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমান মেশিনে যোগ হচ্ছে নতুন দুটি ফিচার। আগের ইভিএম ভোটারকে চিহ্নিত করতে পারত না, নতুন মেশিন তা পারবে। নতুম ইভিএম মেশিন নিজে থেকেই নির্দেশনা দেবে কী করতে হবে আর কী করতে হবে না। অন্যান্য যন্ত্রপাতিও উন্নত ব্যবহার হচ্ছে। তাই আগের ইভিএমের সঙ্গে প্রস্তাবিত ইভিএম মেশিনের পার্থক্য রয়েছে।

এদিকে আগের ইভিএমের সঙ্গে দুই-একটি নতুন ফিচার যোগ করে অতিরিক্ত হাজার কোটি টাকা দাম বাড়ানো কোনো বাস্তবসম্মত চিন্তা নয় বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেড় লাখ মেশিন কিনলে আগের চেয়ে ইভিএমের দাম বাড়বে না, বরং কমবে। এত দাম দিয়ে ইভিএম কেনার উদ্দেশ্য ভালো মনে করছেন না তারা।

অন্যদিকে এভাবে ইভিএম কেনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যেই রয়েছে বিরোধিতা। কমিশন সভায় ইভিএম বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি মনে করেন, ‘এতে সরকারি অর্থের অপচয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।’

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রথম ধাপের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২৯ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে মোটর যানবাহনে ব্যয় তিন কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার, ইভিএম কিনতে তিন হাজার ৫১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার (প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়বে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ দশমিক ৬৭ টাকা), অফিস সরঞ্জামাদিতে আট লাখ ৮০ হাজার, কম্পিউটার সফটওয়্যারে ৫০ কোটি ৯০ লাখ, আসবাবপত্র ক্রয়ে ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ, মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) ৫০ লাখ এবং অপ্রত্যাশিত ব্যয় ৪১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

বিশাল অঙ্কের এই প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয় কর্মসূচি (এডিপি)-বহির্ভূত। সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে প্রকল্পটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাস্তবায়ন করবে।

ইভিএম প্রকল্প প্রস্তাবের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পটি পাস করাতে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

যেভাবে যাত্রা দামি ইভিএমের

নির্বাচন কমিশনের প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহার করা হয়। বুয়েটের তৈরি করা এসব ইভিএম পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে, টাঙ্গাইল পৌরসভা নির্বাচনে, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র নির্বাচনের মতো কিছু নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এসব নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের পর বুয়েটের তৈরি এসব ইভিএম আর ব্যবহার করা হয়নি।

প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে ইভিএম সংযোজন/প্রচলনের জন্য আবার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে ইতোপূর্বে ব্যবহৃত ইভিএমের ত্রুটিগুলো বিবেচনায় রেখে সম্পূর্ণ নতুন কনফিগারেশনের অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য ইভিএম প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এই কারিগরি কমিটির পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নতুন কনফিগারেশনের উন্নত মানের ইভিএম প্রস্তুত করে। বিএমটিএফের তৈরি করা ইভিএম ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি কেন্দ্রের ছয়টি কক্ষে ব্যবহার করা হয়।’

২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনের পর প্রায় ৯ মাসের মাথায় প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের একেকটি ইভিএম মেশিন কেনার প্রকল্প পাস হতে যাচ্ছে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর একনেকের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে প্রকল্প পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী একনেকের বৈঠকে এই প্রকল্প উঠবে। আমরা এই প্রকল্প অনুমোদন দেবো।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা প্রথম ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দফায় যেসব ইভিএম মেশিন কেনা হয়, সেগুলোর প্রতিটির মূল্য ছিল মাত্র ১০ হাজার ৮০০ টাকা। এরপর বিভিন্ন ধাপে ইভিএম মেশিনের দাম বাড়ানো হয়েছে।

যে জন্য ‘গ্রহণযোগ্য নয় অতিরিক্ত দাম’

দুই-একটা ফিচার বেশি যোগ করে প্রতিটি ইভিএম অতিরিক্ত দাম হাঁকানো বাস্তবসম্মত চিন্তা নয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ।

মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘এটা এমন একটা কম্পিউটার (ইভিএম), যার পোস্ট প্রসেসিং কিছু নাই। কম্পিউটারে যেমন ব্যাংকের ডাটা প্রসেস করে আমরা বলতে পারি কী ফ্রিকোয়েন্সিতে টাকা তোলে, টাকা কখন তোলে, মাসের শুরুতে কী রকম, শেষে কী রকম। অনেক বিশ্লেষণ আমরা কম্পিউটারে করতে পারি। কিন্তু আমাদের ইভিএমে আর তো কোনো বিশ্লেষণ নাই। যোগ করে বলে দেওয়া, এতগুলো ভোট পড়েছে। এ রকম একটা ইভিএম মেশিন কিনতে দুই লাখ টাকার ওপরে কেন লাগবে? একটা কম্পিউটারের দাম তো এত না, তাহলে ইভিএম মেশিনের দাম এত হবে কেন?’

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ‘দাম ৪৬ হাজার টাকা ছিল, এখন সেটা দুই লাখের ওপরে। দেড় লাখ মেশিন কিনবে, আগে ৪৬ হাজার হলে এখন ২৫ হাজার পড়ার কথা। মাত্র দেড় লাখ কপি করবে, তাই না? ইলেকট্রনিক জিনিস এক হাজার কিনলেই দাম অনেকটা কমে যায়।’

অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, ‘মনে হচ্ছে, লক্ষ্য খুব ভালো না।’

বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে বিনা টেন্ডারে ইভিএম মেশিন কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ৩০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের সভায় ইভিএম প্রকল্প অনুমোদন দেয় ইসি। এই সভাতেই নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দেন মাহবুব তালুকদার।

নোট অব ডিসেন্টে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘যে ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে সরকারি সংস্থার সুবাদে বিনা টেন্ডারে কেনা হচ্ছে, এর অরিজিন কী, কে উদ্ভাবন করেছে কিংবা কোথা থেকে আমদানি করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কারিগরি দিক থেকে এটি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত কি না তা আরও পরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করার পর অদ্যাবধি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে জানা যায়।’

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ইভিএম কেনা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনাযোগ্য। এতে সরকারি অর্থের অপচয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত রকিবউদ্দীন কমিশন ইভিএম ব্যবহার বাতিল করে অনেক ইভিএম ধ্বংস করে দেয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনোই কাম্য নয়।’

সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

ইভিএম নকশা যারা তৈরি করেছেন, তাদের একজন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম। তার মতে, ‘আগের ইভিএমের সঙ্গে বর্তমান ইভিএম মেশিনের আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।’

মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য দেশে এবং আমাদের আগের যে ইভিএম, সেটা সিম্পলি জাস্ট একটা ইলেকট্রনিক মেশিন। যেখানে আপনি চাপলে বাটন কাউন্ট করবে। এখন যে ইভিএম হচ্ছে সেটার আইটি ইনভলমেন্ট আছে। বায়োমেট্রিক উপায়ে এখানে প্রত্যেকটা জিনিস সফিসটিকেটেড (বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন/বাস্তবধর্মী)। আগে ইভিএম মেশিন ভোটারকে আইডেন্টিফাই (শনাক্ত) করতে পারত না, এখনকার মেশিন তা পারে এবং মেশিন ইলেকশন কন্ট্রোল করবে। আগে মানুষ মেশিন চালাত, এখন মেশিন মানুষ চালাবে। কী কী করতে হবে, না করতে হবে, সেটা মেশিন ডিরেকশন (দিকনির্দেশনা) দিয়ে দেবে। কাজেই এটা সম্পূর্ণই আলাদা।’

এত মেশিন কিনলে দাম সাধারণত কমার কথা, কিন্তু বাড়ল কেন–জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। বেশি কিনলে দাম কমে, দাম কমেই এখন এই দাম (দুই লাখ) আসছে। এটা তো বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি করতেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে পার্টস কিনে এনে তারা এটা সাপ্লাই দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। ওইভাবে তারা ডিজাইন করছে, ডিজাইনের মূল্য তারা নির্ধারণ করছে। সেটাও কিন্তু একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান টাকা দিচ্ছে, সরকারের আরেকটা প্রতিষ্ঠান টাকা নিচ্ছে।’

ভারতের নির্বাচন কমিশন দুই ধরনের ইভিএম ব্যবহার করে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উৎপাদিত প্রতিটি এম২ ইভিএমের দাম ছিল ৮ হাজার ৬৭০ রুপি, যা বাংলাদেশের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ২৩৬ টাকা। আর বর্তমানে ব্যবহৃত প্রতিটি এম৩ ইভিএম মেশিনের দাম প্রায় ১৭ হাজার রুপি (প্রায় ২০ হাজার ৬০ টাকা)। ভারতে ইভিএমের এই মূল্যই বিতর্কে রয়েছে, অতিরিক্ত দামে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে এই অভিযোগে।

ভারতের ইভিএমের প্রসঙ্গ তুললে মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের ইভিএম মেশিন ভোটারদের আইডেন্টিফাই (শনাক্ত) করতে পারে না। এটাই পৃথিবীতে প্রথম মেশিন, যেটা ভোটারকে আইডেন্টিফাই করতে পারে।’

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) অব. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আগেরটার দাম ছিল ৪৬ হাজার টাকা। বর্তমানে যে ইভিএম কেনা হচ্ছে, সেগুলোর দাম দুই লাখ টাকার ওপরে।’

এত দাম কেন, জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আগেরটাতে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার (ভোটারকে চিহ্নিত করা) ছিল না, এটাতে আছে। মাদারবোর্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস অত্যাধুনিক। পৃথিবীর যত অত্যাধুনিক ব্যবস্থা আছে, সেসব প্রযুক্তি একসঙ্গে (কম্বাইন্ড) করে এই ইভিএম তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে এই শ্রেণির ইভিএম নাই।’ সূত্র: প্রিয়.কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়