বিপ্লব কুমার পোদ্দার : রামমাধবের থ্রি ডি এবং অমিত শাহের বাংলাদেশি বহিষ্কারের সুস্পষ্ট ঘোষণায় বিগত দিনের শঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করলো। রামমাধব বিজেপির একজন প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী একজন ব্যাক্তি। অমিতজি এখন ভারতের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যাক্তি বললেও বোধহয় ভুল হবে না। এবার একটু থ্রি ডি সম্পর্কে খুলে বলা যাক। যা হলো, ডিটেকট, ডিলিট এবং ডির্পোট। যা, রামমাধবের তরফে বলা হয়েছে, অাসামের বাঙালি বিতাড়ণের বিষয়ে। অন্যদিকে অমিতজি সুস্পষ্টভাবেই বাঙালি বিতাড়ণের বিষয়টা শুধুমাত্র অাসামে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা ভারতব্যাপী এই প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে অামার একটু প্রশ্ন থেকেই যায় বিজেপির কাছে। অাপনারা নির্দিষ্ট করে বলেছেন, অবৈধ বাঙালির বিষয়। তার মানে কি অামি ধরে নিতে পারি বাঙালি বাদে অন্য কোন জাতি যদি ভারতে প্রবেশ করে তাহলে তাদেরকে সু-স্বাগতম। কারণ তারা অবাঙালি।
এবার একটু ফিরে যাই মোদিজীর অাশ্বাসের দিকে। যেখানে অাশ্বস্ত করা হয়েছে যে, অামাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে এনঅারসির বিষয়টি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীন। এটা নিয়ে অাপনাকে অথবা বাংলাদেশকে কোনরকম অাতঙ্কিত হবার কারণ নেই। এখানে অামার বিনীতভাবে জানবার থাকে, তাহলে কে এবিষয়ে অসত্য বলছেন? একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মাধবজি এবং শাহজি অসত্য বলেছেন অথবা মোদিজি অসত্য বলেছেন। অার যে পক্ষই অসত্য বলবেন, তাদের কিন্তু, ক্ষমতায় বা পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রসঙ্গত, কিছুদিন অাগে বুলগেরিয়ার ১৭ জন যাত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হবার কারণে তিনজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এখানে কিন্তু শুধু ১৭ জন নয়, ১৭০০ ও নয়, ১৭ হাজার নয়। সতের লক্ষও নয়। বিষয়টি হলো, কয়েক মিলিয়ন বাঙালিকে নিয়ে। অাজ না হয় এ বিচারের ভার তুলে দিলাম ভারতের বিচার বিভাগের অন্তত একজন পক্ষপাতহীন বিচারকের কাছে। যারা অন্তত কোন শিশু, যুবক যুবতী অথবা বৃদ্ধের জীবনহানির শঙ্কা থেকে একটি স্ব-প্রণোদিত রায় দিয়ে বিষয়টির ন্যায্য সুরাহা করতে পারেন। বিচার বিভাগ যদি অাগ্রহ না দেখান তাহলে ভারতের জনতার অাদালতেই অামার দরখাস্ত উপস্থাপন করছি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসী হওয়া ভারতীয়র সংখ্যা কিন্তু কম নয়। সে সংখ্যাটা কিন্তু, অাসামে রাষ্ট্রীয় বিড়াতণের পরিকল্পনায় থাকা বাঙালিদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। বিচারের পূর্বে বাঙালিদের অবদানের কথাও মাথায় রাখলে বিচার কাজ তার ন্যায্যতা পাবে বলে অামার দৃঢ় বিশ্বাস।
এনঅারসির বাদ পড়া বাঙালির অনেকেই কিন্তু, সেনা, বিমানবাহিনী অথবা সরকারের উচ্চপর্যায়ে তাদের জীবন যৌবন কাটিয়েছেন। এমনকি কর্মক্ষেত্রে শহীদের মর্যাদা লাভ করেছেন। তাই অাপনাদের বিচারের রায় শোনার অধীর অাগ্রহে রইলাম।
এবার ফিরে অাসি, বাংলাদেশের সাস্প্রতিক গরম রাজনীতিতে খালেদা হাসিনার প্রতিযোগীতা এবং তৎসঙ্গে নতুন ধারা এবং নতুন তত্ত্ব নিয়ে হাইব্রিড অংশের উদ্দেশ্যমূলক নানা উপস্থিতি। অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সরকার অথবা দেশের অাসল বিরোধীদল বা হাইব্রিড তৃতীয় ধারা থেকে ভারতে বাঙালি বিতাড়ণের বিষয়ে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।
অাপনারা সবাই রাষ্ট্র চালাতে চাইছেন, বা চালাচ্ছেন। কিন্তু, সে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অথবা তার জাতির নিরাপত্তা নিয়ে কী অবলীলায় নিরুদ্বেগ অাপনারা।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, অামার অনুরোধ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে শাহ, মাধবদের বক্তব্য সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া। কারণ, বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংহত থাকলে, অাপনাদের রাজনীতিও থাকবে। সে সরকারি দল বা বিরোধী দল হিসেবেই হোক।
দুই
হঠাৎ করেই দেশের রাজনীতির অাকাশ ঘন ঘন রং বদলাচ্ছে। যখন, বিএনপি মহাসচিব জাতিসংঘে যান, তখন সরকারি দল তটস্থ হয়ে অকারণে কিছু অরাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগ করে রাজনীতির শিষ্টাচারকে নিম্নমুখী করেন। অাবার অন্যদিকে, দেশের অাসল বিরোধীদল মনে করেন, দেশ থেকে নয়, বিদেশী সাহায্যে দেশের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করি, সবাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চান, কিন্তু, কেউ গণতান্ত্রিক হতে চান না। কারণ, বাংলাদেশের কোন দল বাস্তবিক অর্থেই দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা করেন কি-না তা দৃশ্যমান নয়। তাই শুধু সমস্যা তুলে ধরে লেখাটিকে পঠিতব্য করবার কোন ইচ্ছা অামার নেই। এই অস্থির অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার অামূল পরিবর্তন দরকার। যেটা হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের মাধ্যমে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব। যা হয়ে থাকে সংরক্ষিত অাসনের ক্ষেত্রে। অথবা ব্যালটে না ভোটের সংযোজন। যদি না ভোটের সংখ্যা বেশি হয় তাহলে সেখানে প্রার্থী পরিবর্তন বাধ্যতামূলক করে নতুন প্রার্থীর মাধ্যমে নতুন নির্বাচন করা।
সবেশেষে, প্রত্যাশা অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে দুই নেত্রীর সরাসরি অালোচনা শুরু করা। তাহলে দেখবেন কোন মেঘই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অাকাশকে ম্লান করে দিতে পারবে না।
লেখক : লন্ডনবাসী অাইনজীবী, সমাজকর্মী
আপনার মতামত লিখুন :