প্রকৌশলী প্রাঞ্জল আচার্য্য: পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সর্ব শ্রেষ্ঠ আরাধনাকারী বা আরাধনাকারিণী যিনি, তিনিই আরাধিকা বা রাধিকা বা রাধারাণী। তিনি একজন স্ত্রীদেহধারিনী হবেন এমন নয়। তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনীশক্তি। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনন্ত কোটি শক্তির মধ্যে প্রধান তিন শক্তি হচ্ছেন হ্লাদিনীশক্তি, অন্তরঙ্গাশক্তি ও বহিরঙ্গাশক্তি। এই তিন শক্তি থেকেই অনন্তকোটি শক্তির বিস্তার হয়েছে। আর রাধারাণী হচ্ছেন ভগবানের হ্লাদিনীশক্তি। সৃষ্টির আদিতে পরমেশ্বর ভগবান যখন মাধূর্য রস আস্বাদনের জন্য তিনি তাঁর বাম অঙ্গ থেকে এই হ্লাদিনীশক্তির প্রকাশ করেন। রাধারাণী মায়ের কৃপা ছাড়া ভগবানের কৃপালাভ করা কখনোই সম্ভব নয়।তাই ভগবানকে প্রসন্ন করতে হলে প্রথমেই রাধারাণী মাকে প্রসন্ন করতে হবে।
রাধারানী মাকে প্রণাম করার মন্ত্র হলো-
“ তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গী রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী,
বৃষভানু সুতে দেবী প্রণমামী হরিপ্রিয়ে”
পদ্মপুরাণে দেবর্ষি নারদমুনির প্রতি দেবাদিদেব মহাদেব বলেছিলেন,“হে দেবর্ষি ব্রহ্মা প্রমুখ মহান দেবতাগনের নিত্য মহারাধ্যা যিনি, দেবতাগণ দূর থেকে যার সেবা করতে ইচ্ছা করেন, সেই শ্রীশ্রীরাধিকাদেবীকে সতত ভজনা করা উচিত।এই ‘রাধা’ নাম যে ব্যাক্তি শ্রীকৃষ্ণনামের সঙ্গে কীর্তন করেন, তাঁর মাহাত্ম্য আমি কীর্তন করতে এখনও সক্ষম হইনি, এমনকি শ্রী অনন্তদেবও নন।” প্রপঞ্চ লীলাসঙ্গী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের
হ্লাদিনীস্বরূপশক্তি গোলোকেশ্বরী রাধারাণী ভাদ্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে অনুরাধা নক্ষত্রে সোমবারে মধ্যাহ্ন কালে ব্রজম-লে শ্রীগোকুলের নাতিদূরে রাভেল নামক গ্রামে শ্রীবৃষভানু রাজা ও কীর্তিদা মায়ের ভবনে সকলের হৃদয়ে আনন্দ দান করে আবির্ভূত হন।শ্রী রাধারাণী প্রাননাথ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যাতীত এই রাধাষ্টমী তিথীর সম্যক মাহাত্ম্য কেউই বনর্ণা করতে পারেনা।শ্রী পদ্মপুরাণে(ব্রহ্মখ- ৭/৮) বলা হয়েছে-
“একাদশ্যাঃ সহস্রেন যং ফলং লভতে নরঃ।
রাধা জন্মাষ্টমী পুণ্যং তস্মাং শত গুণাধিকম্।।”
অর্থাৎ একহাজার একাদশী ব্রত পালন করলে যে ফললাভ হয়, শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার চেয়ে শতগুন অধিক ফল লাভ হয়ে থাকে।" আরও বলা হয়েছে, কোটি জন্মের অর্জিত পাপরাশি ভক্তিপূর্ণ রাধাষ্টমী ব্রত ফলেবিনষ্ট হয়। সুমেরু পর্বত প্রমাণ সোনা দান করলে যে ফল লাভ হয় একটি মাত্র রাধাষ্টমী ব্রত উদ্যাপন করে তার শতগুন অধিক ফল লাভ হয়। গঙ্গা ইত্যাদি সমস্ত পবিত্র তীর্থে সবনান করে যে ফল লাভ হয় একমাত্র বৃষভানুকন্যার জন্মাষ্টমী পালন করে সেই ফল লাভ হয়।”
পদ্মপুরাণে আরো বলা হয়েছে-
“রাধাষ্টমী ব্রতং তাতযোন কুর্য্যাচ্চ মূঢ়ধী।
নরকান্ নিষ্কৃতি নাস্তি কোটিকল্পশতৈরপি।।”
অর্থাৎ যে মূঢ় ব্যক্তি রাধাষ্টমী ব্রত করে না, সে শতকোটি কল্পেও নরক থেকে নিস্তার পেতে পারে না।
“স্ত্রীয়শ্চ যা না কৃবন্তি ব্রতমেতদ্ সুভপ্রদম।
রাধাকৃষ্ণপ্রীতিকরং সর্বপাপপ্রণাশম্।।
অন্তে যমপুরীং গত্বা পতন্তি নরকে চিরম্।
কদাচিদ্ জন্মচাসাদা পৃথিব্যাং বিধবাধ্রুবম্।।”
অর্থাৎ যে নারী শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রীতিকর সর্ব পাপনাশক এই শুভপ্রদ মহাব্রত পালন করেনা, সে নরকে গিয়ে অনন্তকাল সেখানে যাতনা ভোগ করে। পৃথিবীতে থাকাকালীনও সে দুর্ভাগিনী হয়।
এই মহাব্রত উয্যাপন করলে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের অভয় পাদপদ্মে অচলা ভক্তি লাভ হয়ে থাকে। রাধে রাধে।
লেখক: উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড।
আপনার মতামত লিখুন :