শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৮:৩৭ সকাল
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৮:৩৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে

বিভুরঞ্জন সরকার : গত দুতিন দিনে কয়েকটি খবর আমার মনোযোগ কেড়েছে। বলা যায়, খবরগুলো পড়ে আমার ভালো লেগেছে, আমি উৎসাহ বোধ করেছি। এরমধ্যে একটি খবর জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে। তবে তেমন গুরুত্ব দিয়ে হয়নি। নেতিবাচক খবরের প্রতি আমাদের আগ্রহের কারণে ইতিবাচক খবর চাপা হয় হয় পত্রিকার প্রথম পাতার এক কোনায় অথবা ভেতরের পাতার চিপাচাপায়। আমরা চাই ভালো, আর সহযোগী হই খারাপের।

গণমাধ্যমে এসেছে সে খবরটা দিয়েই শুরু করি। স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশ সরকারের দাবি নয়। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ( ইউএনডিপি) প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতেও বাংলাদেশ সক্ষমতা দেখিয়েছে।

ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক ড. সেলিম জাহান বলেছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ সামাজিক খাতে ভালো করেছে। এর কারণ স্বল্প আয় দিয়ে অনেক সুন্দরভাবে সামাজিক খাতে খরচ করতে পারছে বাংলাদেশ। অল্প আয় দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কৌশলীভাবে দক্সতার সঙ্গে খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক সূচকগুলোতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিঃসন্দেহে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা। ইউএনডিপির এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা নাগরিক সমাজের মধ্যে যারা সরকারের সমালচনা করার জন্য মুখিয়ে থাকেন তাদের কেউ কিছু বলেননি। সরকারের প্রশংসা করা তো দূরের কথা, দেশের এমন একটি সাফল্যে গর্ব বোধ করতেও তাদের দ্বিধা।

আমাদের রাজনীতিবিদরা প্রতিপক্ষের কোনো সাফল্য দেখেন না। তাই আমাদের রাজনীতিতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। ভালো কাজের প্রশংসা করার উদারতা আমাদের রাজনীতি থেকে উধাও হয়ে গেছে। রাজনীতিতে পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে দুটি। একটি সরকার পক্ষ। আর একটি সরকারবিরোধী পক্ষ। সরকার পক্ষে আবার দুই ভাগ আছে। একভাগ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আর এক পক্ষ কিছু না পাওয়া। এই বঞ্চিত সরকার পক্ষ কার্যত বিরোধী পক্ষের সঙ্গেই একাত্ম। সে হিসেবে এটা বলা যায় যে দেশে বাস্তবে সরকারবিরোধী পক্ষটাই প্রবল। সরকারের সমর্থনে কথা বললে সমর্থন পাওয়া না গেলেও বিরুদ্ধে বললে ঠিকই সমর্থক পাওয়া যায়।

সরকারবিরোধীরা এটা স্বীকার করতে চান না যে দেশে উন্নয়ন হয়েছে। চোখের সামনে পরিবর্তন দেখেও তারা বলবেন, উন্নতি হচ্ছে না। হচ্ছে লুটপাট। লুটপাট হচ্ছে না দেশে তেমন কথা বলা যাবে না। লুটপাট না হলে উন্নয়ন আরো বেশি হতো। মানুষ আরো বেশি সুফল পেত। যেখানে রাজীতির লক্ষ্যই হচ্ছে লুটপাট, সেখানে লুটপাট তো হবেই। বিএনপিও লুটপাট করে ক্ষমতায় থাকতে, আওয়ামী লীগও। এই লুটপাটের রাজনীতির সঙ্গে গণতন্ত্রের তেমন কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। ভারত তো আমাদের দেশের চেয়ে অনেক মজবুত গণতন্ত্রের দেশ। ভারতে কি ক্ষমতাসীন বা তাদের উমেদার-সহযোগীরা দুর্নীতি-লুটপাট করে না? আমাদের দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হয়, ভারত থেকে হয় না? ভারতে সাধুসন্তর মতো প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিংহের মন্ত্রিসায় কি ‘চোরডাকাত’দের ঠাঁই দিতে হয়নি?

আমরা সাধারণত সরজার বিরোধিতায় একটু নির্দয়। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে টকশোতে গিয়ে প্রতিদিন সরকারবিরোধী কথা বলে আয়রোজগার করছেন, তারাও বলছেন সরকার বাকস্বাধীনতা খর্ব করছে। শেখ হাসিনা দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের অনুমতি দিয়ে কিছু মানুষের যে বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন, সে জন্য তো তিনি একটু প্রশংসা পেতে পারেন। নয় কি?

দুই. চাকরি মানেই ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতি। সরকারি চাকরি শুধু ভালো পরীক্ষা দিয়ে হয়, এটা এখন কেউ বিশ্বাস করে না। আমিও করি না। সম্প্রতি আমার এক আত্মীয় ঠাকুরগাও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো করেও চাকরি পায়নি। তার কাছে যে পরিমাণ টাকা চাওয়া হয়েছিল সে পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ রকম অনেক নজির আমার কাছে আছে । টাকার বিনিময়ে জামায়াত-শিবিরও চাকরি বাগিয়ে ফেলছে আওয়ামী লীগ আমলেও । শুধু অর্থাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে আওয়ামী পরিবার। এসব লিখতেও এখন লজ্জা লাগে।

তবে একটি বড় ব্যতিক্রম ঘটেছে পঞ্চগড় জেলায়। জেলায় মোট ৪৮ জন প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। কারো কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়ার অভিযোগ এখনও শোনা য়ায়নি। আমি আশা করেছিলাম, এই খবরটি জাতীয় পত্রপত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হবে। কিন্তু হয়নি। নিযোগ কমিটির অন্যতম সদস্য বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম টবির সৎ এবং দৃঢ় অবস্থানের কারণেই বিনা লেনদেনে ৪৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সারা দেশের আওয়ামী লীগের জন্য এটা একটা উদাহরণ হতে পারে। ফারুক আলম টবির মতো নির্লোভ নেতারাই পারবেন শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা দিতে। শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে এমন নতুন মুখ যেন খুঁজে বের না করেন যে নতুন মুখ ছাত্র রাজনীতি শেষে বৈধ কোনো উপার্জনের পথে না গিয়েই ব্যাংক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পরিবহন ব্যবসার মালিক বনে গেছেন।

তিন. আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে সাধারণভাবে মানুষের ধারণা খুব ভালো নয়। এরা সাধারণত সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা-অবহেলা করতে পছন্দ করেন। অনেকের দাপটে মানুষ থাকেন তটস্থ। একজন জেলা প্রশাসক আমার নজর কেড়েছেন। ফেসবুকে তিনি সক্রিয় থাকায় আমি তাকে ফলো করি। আরো একটি কারণ অবশ্য আছে। তার বাড়ি আর আমার বাড়ি শুধু একই জেলায় নয়, এক উপজেলায়ও। তার নাম হামিদুল হক। তিনি ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক। তার ফেসবুক পোস্ট থেকে একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
‘বইয়ে পড়েছি,বক্তৃতা বা প্রশিক্ষণে শুনেছি হার্ডকোর পোভারটি লাইনের নীচে বসবাস মানুষ মানে চরম দারিদ্র্যতা।আজ দিনের সকল কর্মসুচি শেষে সন্ধা ৭ টায় রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নে ভিক্ষুকের খবর নিতে গিয়ে চারটি পরিবারের চরম দুর্দশা দেখে মনটি খুব খারাপ হলো।একটি পরিবারে পৌঁছতে দুটি ঝুঁকিপুর্ণ সাকো পার হতে হয়। দুটি পরিবারের ৫/৬ জন বাচ্চার মধ্যে ৩/৪জন প্রতিবন্ধি।পরিবার প্রধানও অচল।তাদের ঘর কবিতার আসমানীদের মতো।তাই জেলা প্রশাসকের সামর্থ অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের ঘর ঠিক করা সহ জীবিকার একটা ব্যবস্থা করতে কার্যক্রম গ্রহন করা হলো।।এটি সরকারের এসডিজি'র ১ ও ২ নং Goals
No poverty and zero hunger অর্জনে সহায়তা করবে'।

কয়েকজন সংবাদকর্মীর কাছে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক এই উদ্যোগটি নিয়েছেন। চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে যদি তার জেলায় আরো কেউ থাকেন তাদের ব্যাপারেও তথ্য চেয়েছেন জেলা প্রশাসক। হামিদুলের মতো উদ্যোগী এবং দরদি মনের জেলা প্রশাসক সংখ্যায় যত বাড়বে বাংলাদেশ ততই এগিয়ে যাবে। রাজনীতির ক্ষুদ্রতা এবং বৈরিতা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে অবশ্যই বড় বাধা।
কিন্তু সব কিছু অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ।বাংলাদেশের এই অগ্রযগমন ব্যাহত করে এমন সাধ্য কার!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়