ডেস্ক রিপোর্ট : বয়স প্রায় ৮০ বছরের বেশি হবে কেরামত আলীর। র্দীঘদিন এই তিস্তা দিয়ে বালু চরে হেঁটে রংপুরে গিয়েছেন। কেরামত আলী কখনো চিন্তা করতে পারেনি বালু চরে সেতু ও রাস্তা হবে। সব সময় এলাকার মানুষের পাশে থাকতেন এই বৃদ্ধ। কত মানুষকে বালু ও নদী পথ দিয়ে নিয়ে গেছে রংপুর কিংবা রাজশাহী তিনি নিজেও জানেন না। এই বালু পথে তার নানান ধরণের স্মৃতি আছে যা কিনা তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না। তিনি ভুলতে পাবেন না তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
মহিপুর-কাকিনা পয়েন্টে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের নবনির্মিত এই সেতুর উত্তরপ্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী’র ভিডিও কনফারেন্সের বক্তব্য শুনতে কেরামত আলীও এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, রংপুরের মানুষ আমাকে ভোট দেন না। সেই কথা শুনে চিন্তিত হয়ে সেতুটির এক জায়গায় বসে থাকেন তিনি। সেতু নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে কেরামত আলী প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন। রংপুর ও লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের মানুষের ‘ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া কিছু দেওয়ার নেই’- বলেও জানান।
৮০ বছরের বৃদ্ধ কেরামত আলী বলেন, এই বালু পথ এ্যালা হামার রাস্তা হইছে। বানাইলেন সেতু আর কি চাই? হামাক সব দিছেন দিবার পাই নাই হামা কিছু । এবার ভোট দিমো প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিয়ে হামা এই ঋণ পরিশোধ করমো।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্বেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা কেরামত আলী। তিনি একজন ঘোড়ার চালক।
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন হলো গঙ্গাচড়ায় তিস্তার উপর নির্মিত ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’। সবার মনে ঈদের দিনের মত আনন্দ। তবে আশঙ্কা করছেন, কতদিন টিকবে সেতুসহ এ্যাপ্রোচ সড়কটি। যেটি কিনা কয়েকদিন আগে ধসে গেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের কারণে দ্রুত মেরামত করে স্থানীয় প্রকৌশলী।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টার সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় গঙ্গাচড়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, জেলা প্রশাসক এনামুল হাবিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। উদ্বোধন উপলক্ষে সেতুর উত্তর প্রান্তে নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। তবে আসন নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তিস্তা পাড়ের মানুষরা।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দুর্ভিক্ষ ছিল বেশি। সেই অবস্থা এখন আর নেই। ব্রিজটি চালু হলে রংপুরের সঙ্গে কিংবা ঢাকার সঙ্গে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। তাছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ গুরুত্ব পাবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে বাইরে বিক্রি করতে পারবে।
ভিডিও কনফারেন্সে রংপুরবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রংপুরের জন্য তো অনেক কাজ করে দিচ্ছি। ….. মুই ক্যাং করি কমু বাহে, ভোট তো পাই না। নৌকায় ভোট পাই না। তার কী হবে? ভোট তো চলে যায় লাঙ্গলে!’
সড়ক ও সেতু নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গঙ্গাচড়ায় ভিডিও কনফারেন্সের কারণে গত রাতে যে ব্রীজটি ধসে গিয়েছিল। সেটি দ্রুত গতিতে মেরামত করা হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমরা সচল করেছি মহিপুর কাকিনা সড়কের যোগাযোগ।
তিনি আরো বলেন, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার প্রস্থ তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুতে ১৬টি পিলার,২টি এপার্টমেন্ট,১৭টি স্প্যান ও ৮৫টি গার্ডার রয়েছে। থাকছে লাইটিং ব্যবস্থা।-বার্তা২৪
আপনার মতামত লিখুন :