শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৯:০৮ সকাল
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৯:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মিটফোর্ড হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে বাণিজ্য

ডেস্ক রিপোর্ট: মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে একটি সিন্ডিকেট। রোগীকে দেয়া হচ্ছে ভুল রিপোর্ট। এ ছাড়াও সিরিয়াল আগে দেয়ার নাম করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছে কিছু ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী।

মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার রোগী বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন। তার মধ্যে এক থেকে দেড় হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। বাকিরা দালালের হাতে পড়ে বিভিন্ন ক্লিনিক কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে ডাক্তার দেখান। আর আউটডোর ডাক্তাররা রোগ নির্ণয় করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। এ সুযোগ কাজে লাগায় রেডিওলজি বিভাগের ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান। তবে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরের রোগী বেশি এখানে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যে মাতেন কর্তব্যরতরা।

এ দিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পেটের ব্যথা নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যায় শামীম নামে ৪১ বছরের এক ব্যক্তি। তাকে দেখেন ডাক্তার। পরে আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। হাসপাতালের ১ নম্বর ভবনের ২য় তলার রেডিওলজি বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম করান শামীম। ১৫ মিনিট বসে রিপোর্ট নেয়ার কথা বলেন আলট্রাসনোগ্রামের ডাক্তার। পরে রিপোর্ট নিয়ে বহির্বিভাগের ডাক্তার আর পি অসীম চক্রবর্তীর কাছে গেলে ১০৮ নম্বর রুমে পাঠান তিনি। ওখানের ডাক্তার ভর্তি হতে বলেন। ১ নম্বর ভবনের ৮ তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ৬ নম্বর বেডে ভর্তি হন শামীম

তিনি বলেন, যেদিন ভর্তি হয়েছি, সেদিন দুপুরে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন ওয়ার্ড ডাক্তার। তার মধ্যে রক্তের তিনটি, প্রস্রাব দু’টি ও এক্সরে। তবে আলট্রাসনোগ্রাম করতে দেননি। তার মধ্যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে করতে বলেন। আর বলেন যে, আপনার মুত্রথলিতে টিউমার ও লিভারে চর্বি জমেছে। তাই আপাতত টিউমার অপারেশন করতে হবে। তাছাড়া এ রোগ থেকে নিস্তার নেই আমার। যত দিন বাঁচব তত দিন ক্যামো থেরাপি দিতে হবে। পরে ভয়ে আমার প্রেসার ১৮০/১২০ হয়ে পড়লে সাথে সাথে ওষুধ খেতে দেন। কিছুক্ষণ পরে তাদের সাথে থাকা পপুলার ও মেনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে লিখে দেন ওই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা।

হাসপাতালে এসব পরীক্ষা করানোর কথা বলা মাত্র তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন প্রায় চার থেকে পাঁচজন ডাক্তার। তিনি আরো বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা সঠিক নয়। এখানের মেশিন সবগুলো নষ্ট। তাই রোগীদের বাইরে করাতে বলা হয় বলে উপস্থিত সব ডাক্তার বলেন। পরে বাইরে করানো হয় পরীক্ষা। তবে ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া বাইরে করানো হয় আলট্রাসনোগ্রাম। ওখানের ডাক্তার আমাকে ঘুরিয়ে দেখিয়ে বলেন, কে বলছে আপনার মুত্রথলিতে টিউমার। পরে এই রিপোর্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওয়ার্ড ডাক্তাররা দেখে বলেন, তাহলে আপনাকে ছুটি দেয়া হলো এক মাস পরে আসবেন।

রহিমা (৩৫)। দীর্ঘ দিন বুকে ব্যথা তার। গ্রামের ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেলেও কোনো সুফল হয়নি। পরে গত ৯ আগস্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেন সকাল ৭টায়। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে ১২টার দিকে ডাক্তার দেখান তিনি। এক্সরে করতে বলেন ডাক্তার। পরে ১ নম্বর ভবনের ২য় তলায় এক্সরে রুমে ঢুকতে গেলে সুমন নামে একজন ধমক দিয়ে বলে, টাকা জমা দিয়ে আসেন ওই রুমে। টাকা জমা দিতে গেলে কর্তব্যরত ব্যক্তি জানান, এখানে ভালো রিপোর্ট আসে না। দুটো এক্সরে মেশিন নষ্ট। আপনি মেডিনোভা কিংবা পপুলারে এক্সরে করলে সঠিক রিপোর্ট পাবেন। আমি বলে দিলে কম টাকায় করাতে পারবেন। রহিমা রাজি না হলে, তাকে বের করে দেয়। পরে উপপরিচালকের কাছে গেলে তার এক্সরে করতে বাধ্য হন কর্তব্যরত ব্যক্তি।

৯ সেপ্টেম্বর মাহফুজা নামের এক নারী চিকিৎসা নিতে যায় মিটফোর্ড হাসপাতালে। ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাম করতে ব্যবস্থাপত্রে লেখেন। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে পেটে টিউমার রয়েছে এমন রিপোর্ট দেয় রেডিওলজি বিভাগ। ডাক্তার দ্রুত অপারেশন করতে বলেন। পরে আবার অন্য ডাক্তার মেডিসানে আরেকবার আলট্রাসনোগ্রাম করতে বললে, ওই রিপোর্টে টিউমারের বিষয় একেবারেই উল্লেখ করেনি। মাহফুজা বলেন, হেপাটাইটিস বি’র টিকা নেয়ায় তিন মাসের গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। পরে পেটে ব্যথা নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে এলে টিউমারের কথা বলে ডাক্তার। এমন মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে হয়রানি করছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, রেডিওলজি বিভাগের কোনো ডাক্তার দুপুর ১২টার পরে থাকেন না। পারিবারিক নানা অভিযোগ দেখিয়ে তারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে বাড়তি ডিউটি করতে যান তারা। আর এ জন্যই মিটফোর্ড হাসপাতালের রোগী ওই সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান রেডিওলজি বিভাগের সব ডাক্তার। এমনকি তারা ভুল রিপোর্ট ধরিয়ে দেয় রোগীদের। যাতে করে পপুলার ও মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য হন রোগী ও তার স্বজনেরা।

এ দিকে রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার রুবেল মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত বসেন। তাই ১২টার পরে মিটফোর্ডে আর ডিউটি করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিভাগের অন্য ডাক্তাররাও হাসপাতালে থাকেন না। তাদের অনুপস্থিতে ট্রেইনাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এ কারণে ভুল রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার নয়া দিগন্তকে বলেন, রেডিওলজি বিভাগে ৮ থেকে ১০ জন ডাক্তার রয়েছেন। তাছাড়া আটটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, চারটি এক্সরে মেশিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সচল মেশিন রয়েছে। তারপরও কেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে। তিনি বলেন, যদি কোনো ডাক্তার নিয়মিত ডিউটি না করা ছাড়াও কোনো রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতালে কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠান তাহলে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অবহিত করে ওই সব ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়