শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৩:১৫ রাত
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৩:১৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকার কি খেই হারিয়ে ফেলেছে?

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার

 

অনির্বাচিত বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় অতি উৎসাহী পুলিশ কর্তৃক দেশব্যাপী প্রতি থানায় একই ধারা অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের ১৫(৩) এবং বিস্ফোরক উপাদানাবলী (সংশোধন) আইন’ ২০০২ এর (৩)ক ধারায় সিরিজ মামলা রুজু করা হচ্ছে। যাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে আত্মঘাতী কার্য করাসহ দেশের সম্পদের ক্ষতি করার জন্য গোপন বৈঠকের অভিযোগসহ পুলিশ কাল্পনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিএনপি (নেতা, কর্মী, সমর্থক) পুলিশের উপর ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ আইনটি স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ একটি নির্যাতনমূলক আইন, যা পরিবর্তনের জন্য জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল দলের ম্যানুফেস্টুতে থাকলেও সরকার গঠনের পর কেউ আর তা পরিবর্তন করেনি। আইনটি কালো আইন হিসাবে বিবেচিত। এ জন্য আইনটি অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে প্রয়োগ করার জন্য উচ্চ আদালতের অবজারবেশন রয়েছে। কিন্তু সরকার ব্যবহার করে মানুষের স্বাধীনতাকে হরণ করার জন্য। এ ছাড়াও বিরোধী দলকে নিপীড়ন করার জন্য সময়ে সময়ে অবিবেচকের মতো এটা ব্যবহ্নত হয়েছে। এমনকি ১/১১ অসংবিধানিক সরকারও আইনটি প্রয়োগের মাধ্যমে ডিটেনশন প্রদান করেছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক সমূহে ০৮-৯-২০১৮ তারিখে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা নি¤œরূপ :-

‘আমরা কাউকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার নিয়ে বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা। বিএনপির যেসব ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিডিওচিত্র রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরাকে কোথায় কী করছেন তার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। গ্রেফতার নিয়ে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, তা মিথ্যা। এসবে কান দিয়ে জনগণের সময় নষ্ট করার দরকার নেই। তারা যদি কোনোটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে আমরা পরিষ্কার করে বলতে পারব কী অভিযোগে ধরা হয়েছে। নিরাপরাধ কাউকে তো গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পারলে প্রমাণ করেন যে বিএনপি নেতাকর্মীরা অপরাধী নন।’

ব্রিটেনে একটি প্রবাদ রয়েছে যে, করহম পধহ হড়ঃ ফড় ডৎড়হম. বাংলাদেশের প্রশ্নেও যদি তাই হয় তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বক্তব্য নেই, যদি তাই না হয় তবে মন্ত্রীকে তার বক্তব্য ঈমানি দায়িত্বের সাথে খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করবো। ‘আমরা কাউকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করি না’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই চ্যালেঞ্জিং বক্তৃায় পরিপ্রেক্ষিতে বলা বাহুল্য যে, দেশব্যাপী সম্প্রতি দেশের সার্বভৌমকতাকে নষ্ট করার কাল্পনিক অভিযোগে নাশকতার পরিকল্পনার মিথ্যা ও ভৌতিক অভিযোগে যে সিরিজ মোকদ্দমা পুলিশ করছে তা কি সবই সত্য? যদি তাই হয় তবে বিদেশে থাকা বা হজ্বে থাকা ব্যক্তিবর্গকে বিএনপি করার কারণে আসামী করা হচ্ছে কেন? কেনই-বা বিএনপি সমর্থক মৃত ব্যক্তিরা এই আক্রোশ থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ মর্মে কি ব্যাখ্যা দিবেন?

বালু, সিমেন্ট, ইট, কনক্রিটের উন্নয়নের চেয়ে দলমত নির্বিশেষে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তাসহ সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন করাই একটি কল্যাণমূখী গণতান্ত্রিক সরকারের স্বার্থকতা। নিরাপত্তার পরিবর্তে যদি উন্নয়ন দেখানো হয় তবে তা হবে কান্নারত শিশু বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর কল্প কাহিনী। পুলিশের আইজি (মহাপরিদর্শক) ৮-৯-১৮ তারিখে মিডিয়াতে বলেছেন যে, কোনো নাশকতা ‘বরদাস্ত’ করা হবে না (সূত্র: জাতীয় পত্রিকা) এ ধরনের ‘বরদাস্তের’ হুমকি পাকিস্তানি পুলিশের কাছ থেকেই শুনেছি। কিন্তু পুলিশ জঘন্য মিথ্য, ভৌতিক ও কাল্পনিক যে মামলা রুজু করে জনগণকে বিভিন্ন পন্থায় হয়রানি করে এই অনাচার জনগণ ‘বরদাস্ত’ করবে কীভাবে?

মানুষ যখন খেই হারিয়ে ফেলে তখনই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ৪ চার মাস পূর্বেই এত শক্তিধর সরকারের খেই হারিয়ে যাওয়ার কথা নয় (!) তবে একটি হরিলুটের নির্বাচন (২০১৪ সালের মতো) করার জন্য সরকার যতই ফন্দি-ফিকির করুক না কেন ততই দেশের রাজনীতিতে বিরোধীদের ঐক্য বহিঃপ্রকাশ পাচ্ছে। বিএনপিতে দল উপদলের যে বিভক্তি ছিল তারাও কাল্পনিক ভুতুরে মামলার কষাঘাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি সূযোগ পাচ্ছে, যে সুযোগ করে দিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ ব্যর্থ হচ্ছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের দ্বিতীয় বাসস্থান এখন আদালত প্রাঙ্গন এবং কারাগার। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীর আতঙ্কে ফেলে, দেশকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি মুক্ত করতে গিয়ে পুলিশ দিয়ে স্বপ্নে দেখা ঘটনার ভুতুড়ে মামলা দিতে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে সরকার প্রশাসন ও বিচার বিভাগের যে চেইন অব কমান্ড ভেঙে দিচ্ছে, তা শেখ হাসিনা সরকারকে বিনা ভোটে পুনঃনির্বাচিত করতে কতটুকু সহায়তা করবে?

লেখক : কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়