মিঠু ব্যানার্জি : “পেটের দায়ে লিখছি মশাই, পেটের দায়ে! বাংলা কথা, স্বেচ্ছায় না লেখার কারণÑআমার লিখতে ভালো লাগে না। আমি লিখে আনন্দ পাই নে।
এমন কোনো গভীর, গূঢ় সত্য জানি নে যা না বললে বঙ্গভূমি কোনো এক মহাবৈভব থেকে বঞ্চিত হবেন। আমি সোসাল রিফর্মার বা প্রফেট নই যে দেশের উন্নতির জন্য বই লিখব।” ...সৈয়দ মুজতবা আলি।
তিনি চাকরি পেলে লেখেন না! চাকরী না থাকলে লেখেন। এই চাকরি তিনি বারবার কেন খুইয়েছেন, সেটাও খুব সহজ! কয়েক ডজন গ-মূর্খের সঙ্গে তিনি চাকরি করতে পারতেন না! আর অবধারিত ভাবে তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই হতেন সেই ছাগল! স্বাভাবিক ভদ্রতাবশে তিনি ঝগড়া না করে, চাকরিই ছেড়ে দিতেন!
ভাগ্যিস ছাড়তেন!
ফলে, তাঁর অনবদ্য রচনা আমরা পেয়েছি ! তাঁর দরকার ছিল পয়সা আর আমরা সেই পয়সার ষোলো আনা উসুল করতে না পারলেও, কিছুটাতো পেরেছি! ‘দরখাস্ত’ নামে একটা রচনায় তিনি লিখেছেন...
“একবার ফ্রান্সে ঢোকবার ফর্মে লেখা ছিলÑতোমার জীবিকা নির্বাহের উপায় কি?
উত্তরে লিখেছিলুমÑকিছুদিন অন্তর অন্তর চাকরি রিজাইন দেওয়া ! তা হলে চলে কি করে?
তুমি রেজিগনেশন গুলো দেখছ সাহেব, আমি চাকরিগুলো দেখছি!”
মুজতবা সাহেবের বদলীর অর্ডার এলো কটক রেডিও স্টেশন যাওয়ার! তিনি মুখ ব্যাজার করে বললেন, ১৫ দিন পরে যাব! আর ঐ ১৫টা দিন আমার নষ্ট হল জীবন থেকে! পরে জানা গেলÑমাত্র ১৫ দিনে তিনি ওড়িয়া পড়তে, লিখতে আর বলতে শিখে; কটক রেডিও স্টেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত তিনি ৯টা ভাষা শিখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯টা ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন মুজতবা আলি?
বাংলা ভাষার সব প্রচলিত বাক্যবিন্যাসকে তছনছ করে, যে অনবদ্য সাহিত্য সম্ভার সৃষ্টি করেছেন মুজতবা সাহেব, এককথায় তা অতুলনীয়? তাঁর ভাষা সাহিত্য নিয়ে যে গভীরভাবে আলোচনা করা উচিত ছিল, সেটা হয় নি?
“আমরা জেনেছি, ভাষা বহতা নদীর মত। যদি তার স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তা হলে যেখান থেকে যাই-ই সংগ্রহ করুক, কিছুতেই তার অঙ্গে মলিনতার স্পর্শ লাগে না। এই ব্যাপারটি আমাদের সবচেয়ে স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। এই দিক থেকে তিনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীর সার্থক উত্তরাধিকারী। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষাশিল্প সম্পর্কে গভীর আলোচনা হওয়া উচিত। আমার চেয়ে যোগ্যতর ব্যক্তিদের ওপর সে ভার রইলো।”...সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
আদ্যপান্ত নাস্তিক এই মহান লেখক নিজে ছিলেন, বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে’ ডক্টরেট! তিনি নিজেকে বাঙালী বলেই পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করতেন ?
লীলা মজুমদারের কথায় বলি...“আকাশ যদি কাগজ হত, সমুদ্র যদি কালি হত আর তালগাছ যদি কলম হত তাও এই মহান লেখকের কথা শেষ করা যাবে না!”
তিনি বেহেস্তে বা স্বর্গে নেই! তার কারণ, তিনি নিজেই বলে গেছেন, বেহেস্ত বা স্বর্গের বর্ণনায় কোথাও ইলিশের কথা নেই। তাই সেখানে তিনি থাকতেই পারেন না! তবে তিনি যেখানেই থাকুন আমরা তাঁর সাথেই আছি ...থাকবও?
জন্মদিনে অতল শ্রদ্ধা আর অন্তরের ভালোবাসা।
সৈয়দ মুজতবা আলির জন্ম হয় ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান ১১ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৭৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :