শিরোনাম
◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:২২ দুপুর
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:২২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধর্শতাধিক উদ্যোগেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি

ডেস্ক রিপোর্ট: সড়ক পথের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত দুই বছরে অধর্শতাধিক উদ্যোগ নেয়া হলেও এর ১০ শতাংশও বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি বেশির ভাগ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ট্রাফিক ও থানা পুলিশ তেমন কোনো তৎপরতা চালায়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃর্পক্ষও (বিআরটিএ) এ ব্যাপারে বরাবরই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ফলে সড়ক পথের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আগের মতোই অধরা থেকে গেছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নেয়া প্রায় প্রতিটি পরিকল্পনাতেই বড় ধরনের গলদ রয়েছে। যে কারণে তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়া প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বেশির ভাগ পদক্ষেপই মাঝপথে থমকে যাচ্ছে। বেশ কিছু উদ্যোগ স্রেফ রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি বলেও মনে করেন তারা।

তবে ট্রাফিক পুলিশের দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া সব উদ্যোগ বাস্তবায়নেই তারা সবোর্চ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অজর্ন সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাকমীর্ ও প্রশাসনের প্রভাবশালীরা দায়ী বলে

মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের ঊধ্বর্তন কমর্কতার্রা।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আইন কেউ মানতে চায় না, আইন প্রয়োগ করতে গেলে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়। অনেক সময় পেছন থেকে টেনে ধরতে চায়। কখনো পুলিশ সেটা উপেক্ষা করতে পারে, কখনো বা আপস করতে হয়।’

তবে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাফিক আইনের অধিকাংশ ধারাই পুলিশ গণপরিবহনের মালিক-চালকদের ওপর প্রয়োগ করতে না পারলেও তা নিবিের্ঘœ ব্যক্তিযানের মালিক-চালকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যা দুই শ্রেণির যানের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় শুধু গণপরিবহনের জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনাও অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে।

সবের্শষ গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরপাল্লায় চালকরা যেন পঁাচ ঘণ্টার বেশি একটানা গাড়ি না চালান, তা নিশ্চিত করতে নিদের্শ দেন। বিষয়টি তদারকি করতে পরিবহন শ্রমিক নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানসহ তিন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেক পরিবহনে চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বেঁধে রাখারও নিদের্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সিটবেল্ট না থাকলে তার ব্যবস্থা নেয়ারও তাগিদ দেন তিনি।

অথচ দূরপাল্লার অধিকাংশ চালকই সিটবেল্ট না বেঁধে নিত্যদিন টানা আট-নয় ঘণ্টা গাড়ি চালাচ্ছেন। বেশির ভাগ গাড়িরই চালক ও যাত্রী আসনের সঙ্গে সিট বেল্টই নেই। যদিও এ ধরনের অভিযোগে দূরপাল্লার একটি গাড়ির বিরুদ্ধে দীঘির্দনে কোনো মামলা হয়নি। এমনকি দূরপাল্লার গাড়িতে সিটবেল্ট লাগানোর জন্যও কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা শোনা যায়নি।

এর আগে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অভিযোগ বেশ কিছু ব্যক্তিযানের চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও কোনো গণপরিবহন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই। অথচ চলন্ত গাড়িতে চালক মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় নানা দুঘর্টনা।

সবের্শষ গত ২৫ আগস্ট নাটোরের লালপুর উপজেলায় বাসের ধাক্কায় এক পরিবারের তিনজনসহ লেগুনার ১৫ যাত্রী নিহত হন, ওই দুঘর্টনার সময় লেগুনার চালক মুঠোফোনে কথা বলছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নগর সাভির্স কিংবা দূরপাল্লার পরিবহনে সরকার নিধাির্রত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করলে বাসের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নিদের্শ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সপ্তাহ দুয়েক লোক দেখানো তৎপরতা চালালেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহন শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীতে সড়ক পথে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে গত বছরের এপ্রিল মাসে গণপরিবহনে সিটিং ও গেটলক সাভির্স বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও কদিন না যেতেই তা গুটিয়ে নেয় প্রশাসন। যদিও সিটিং সাভিের্সর নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখনো বন্ধ হয়নি, বাড়েনি যাত্রীসেবার মানও। একই কোম্পানির দুটি (লোকাল ও সিটিং) আলাদা রঙের বাস চালুর কথা থাকলেও তা-ও পরিবহন মালিকরা কেউই মানেনি। বরং সিটি সাভির্স বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়ার পর গণপরিবহনের মালিকরা রাস্তা থেকে তাদের ৪০ শতাংশ বাস-মিনিবাস তুলে নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রাজধানীবাসীকে চরমভাবে ভুগিয়েছে।

অথচ চলাচলের অনুমতির (রুট পারমিট) শতর্ অনুযায়ী, কোনো কারণ ছাড়া বাস-মিনিবাস বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। কেউ তা করলে রুট পারমিট বাতিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃর্পক্ষ (বিআরটিএ) আইন প্রয়োগ না করেই সিটিং সাভির্স বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে।

রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশা চালু হওয়ার পর তা মিটার অনুযায়ী ভাড়া গ্রহণ এবং যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো দূরত্বে যাওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হলেও দীঘির্দনেও এ নিদের্শনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বরং শুরু থেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা তাদের মজির্মাফিক ভাড়া আদায় করছে। সবের্শষ গত ২০১৫ সালের নভেম্বরে অটোরিকশার নতুন ভাড়ার হার নিধার্রণ করার পর সরকারের পক্ষ থেকে মিটারে গাড়ি চালানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হলেও তাতেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পুরোপুরি ব্যথর্ হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ এক বছর ঝুলে থাকার পর গত ১ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয় নতুন সড়ক পরিবহন আইনের অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এটি তোলা হবে জাতীয় সংসদে। সেখানে আইনটি পাস হলে তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কতটা সফলতা দেখাতে পারবে তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসাচর্ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক মনে করেন কোনো আইন করে সড়কের শৃঙ্খলা ফিরবে না। গণপরিবহনে কোনো আইন দরকার নেই। এটা একটা পরিকল্পনা। বিজ্ঞান বলে পরিকল্পনাটা এমন হতে হবে যাতে সেটি হয় স্ব-নিয়ন্ত্রিত এবং বেশির ভাগই মানতে বাধ্য হবে। এবং বাকি কেউ যদি অপরচুনিস্ট (সুযোগ সন্ধানী) হয়, তাহলে আইন দিয়ে তাকে শাসন করতে হবে।’

অধ্যাপক হক বলেন, পরিকল্পনাতেই আসল ‘গলদ’ রয়েছে। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য আইন প্রণয়নের চেয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদল বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশে বতর্মান সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ‘বিশৃঙ্খল এবং উচ্ছৃঙ্খল’ অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, গণপরিবহন নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে শুধু আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।

অধ্যাপক হক প্রশ্ন তোলেন, ‘গণপরিবহনের সিস্টেমটা এত বেশি অপরিকল্পিত যে এখানে হান্ড্রেট পাসের্ন্ট যদি ভুল থাকে, তাহলে আপনি শাসন করে কতটুকু উন্নতি করতে পারবেন?’

তার ভাষ্য, সমগ্র ঢাকার বাসগুলোকে যদি একটি কোম্পানির আওতায় আনা যায় তাহলে চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব বন্ধ হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতি গুলশান এবং হাতিরঝিল এলাকায় সফল হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এজন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

এ ধরনের অপরিকল্পিত উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ব্যথর্তা প্রসঙ্গে ওয়াকর্ ফর এ বেটার বাংলাদেশ-ডবিøউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ মারুফ হোসেন বলেন, সিদ্ধান্তগুলো স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একসাথে বসে কমিটি করে বিচারবিশ্লেষণ করে নেয়া দরকার। রাস্তায় দেখে হুট করে কিছু একটা করলে তা ফেল করবে সেটাই স্বাভাবিক। এ ধরনের উদ্যোগ আসলে সাময়িক চেষ্টা; দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যার কোনো সমাধান করবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র: যায় যায় দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়