ডেস্ক রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের ভেতরে দেখা যায়, মোটা গড়নের একজন ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে। তার দেখা মেলে দিনের অধিকাংশ সময় মর্গ (লাশ ঘর) এলাকায়। হাসপাতাল এলাকার অনেকেই তাকে চেনেন। আবার অনেকে তাকে চিনেন না। তার নাম বাদশা মিয়া। বয়স প্রায় ৬০ এর ওপরে। পিতার নাম মৃত মতি মিয়া।
পৈতৃক বাড়ি জেলা শহরের কান্দিপাড়ায়। বর্তমানে বসবাস করছেন শিমরাইলকান্দি এলাকায়। ৩ মেয়ে ও ২ ছেলের জনক তিনি। সব মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তার এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এই হাসপাতালের ডোম আব্দুল জব্বারের সাথে।
জেলা সদর হাসপাতালের ভেতরে উত্তর পাশে লাশ ঘরের সামনে, না হয় ভেতরে বসে থাকেন এই বাদশা মিয়া। প্রায় ৩০ বছর যাবত জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে আসা লাশের ময়নাতদন্তে ডোমদের সহযোগিতা করছেন। পচা, গলিত, সড়ক দুর্ঘটনাসহ সব লাশকেই টানতে হচ্ছে এই বাদশা মিয়াকে। যেখানেই লাশের খবর পাওয়া যায়, সেখানেই পুলিশের ডাকে সাড়া দিতে হয় এই বাদশা মিয়াকে।যত কঠিন লাশই হোক বাদশা মিয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু ৩০ বছর কাজ করলেও তার চাকরি সরকারি হয়নি। অন্য দুই ডোম লাশের পরিবার থেকে পাওয়া টাকার অংশ বাদশা মিয়াকে দেয়। এতেই চলে তার জীবন। এখন তার চাওয়া, ছেলেকে যেন ডোম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অদ্ভুত স্বভাবের এই মানুষটি সর্বদা থাকেন নীরব। কথা বলেন খুব কম। অনেক সময় দেখা যায়, পচা লাশের পাশে বসেই নাস্তা খাচ্ছেন। আবার সিগারেট ফুঁকছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হাসপাতালের মর্গে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বাদশা মিয়ার। তখন তিনি একটি গলিত লাশের ময়নাতদন্তের পর সেলাই করা শেষ করেছেন।
কেমন আছেন বাদশা ভাই- এমন প্রশ্ন করতেই তিনি নীরব চেয়ে রইলেন। আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, আছি ভাই মোটামুটি। বয়স তো হচ্ছে। চিন্তায় আছি, কীভাবে চলব।
বাদশা মিয়া বলেন, আগে আইসক্রিম বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এই পেশায় আসলাম ৩০ বছর হয়ে গেল। বয়স হয়ে যাওয়ায় চিন্তায় আছি, আর কয়দিন এই কাজ করতে পারব। আমি তো আর সরকারি চাকরি করছি না যে পেনশন পাব। ছেলে দুইটা বেকার। বেকার থাকলে ছেলেরা খারাপ লাইনে চলে যায়। আমি চাই, আমার পেশাটা কষ্টের হলেও বেকার থাকার চেয়ে তারা হাসপাতালে পচা লাশ সেলাই করুক, তাও ভাল।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পানিতে পরে পচে গেছে, এক মাস কি দুই মাস পর কবর থেকে লাশ উঠানো, সড়ক দুর্ঘটনায় টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক লাশ আমি উদ্ধার করেছি। নদীর মাঝ থেকেও সাঁতার কেটে লাশ উদ্ধার করেছি। যদি বেওয়ারিশ লাশ আসে হাসপাতালে, তাহলে কাঁধে করে হেঁটে নিয়ে গিয়ে কবর দিতে হয়।
জেলা সদর হাসপাতালের ডোম আশরাফুল ইসলাম সুমন বলেন, আমি এই হাসপাতালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনেক আগে থেকেই বাদশা ভাই এখানে কাজ করেন। তার স্বভাব-চরিত্রও অনেক ভাল। আজ পর্যন্ত উনার মধ্যে খারাপ কিছু দেখি নাই।
জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন বলেন, বাদশা মিয়া দীর্ঘদিন যাবত ডোমদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছেন। সে অনেক ভাল মানুষ বলে জেনেছি। কিন্তু সে সরকারি নয়। তার ছেলেদের সরকারিভাবে এই পেশায় নিযুক্ত করতে হলে সার্কুলার দেওয়ার পর যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
সূত্র : পরিবর্তন
আপনার মতামত লিখুন :