বিভুরঞ্জন সরকার : একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতি জমে উঠতে শুরু করেছে। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তারা এখন একদিকে তৃণমূলে গিয়ে সাধারণ মানুষকে কদমবুসি করে ‘আপনার একান্ত বাধ্যগত’ বা ‘দাসানুদাসের’ মতো আচরণ করছেন, অন্যদিকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বা অফিসে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন, দোয়া চাইছেন। কাঁদো কণ্ঠে বলছেন, ‘আপনার জন্য তো জীব-যৌবন-ধন-মান সব উৎসর্গ করেছি। এবার মার্কা না পেলে যে ইজ্জতে মাছি পড়বে’! মনে হচ্ছে, এবারের নির্বাচনটা এইসব সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর জন্যই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরা মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন হবে অর্থহীন।
কোনো কোনো গণমাধ্যমে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, অমুক দল এত আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। তাদের নামও ছাপা হচ্ছে। তবে দুটি আলাদা কাগজ যদি আপনি পড়েন তাহলে আপনার মাথা ঘুরতে শুরু করবে। কারণ ‘এ’ পত্রিকা অমুক আসনে যে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত বলে ছেপেছে, ‘বি’ কাগজে আপনি সে নামটি আর খুঁজেই পেলেন না! তাহলে দুটি কাগজের কোনো একটি ‘অবিশ্বস্ত’ সূত্রের রিপোর্ট ছেপেছে। দুটি বিশ্বস্ত নিউজ তো দুই রকম হতে পারে না!
নানা রকম জোটের খবরও চাপা হচ্ছে। এর কোনো জোট হচ্ছে নির্বাচনে কোনো বড় দলকে জেতানোর জন্য, কোনোটা হচ্ছে কোনো বড় দলকে হারানোর জন্য। এ এক মজার তৎপরতা।
দেশে নিবদ্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। অথচ একটি জোটে দলের সংখ্যা ৫৯! তার বাইরে আরো জোট আছে, দল আছে। তাহলে আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কতটি? কোনো রাজনৈতিক প-িত এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন?
আমাদের দেশে নির্বাচনের মওসুমে নির্বাচনি কোকিলদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাদের সুর বা স্বর এক নয়। কেউ কুহু ডাকে তো কেউ কেকা, কেউ আবার কা কা! কত বিচিত্র ব্যাপার!
আমাদের ‘ম্যাঙ্গোপিপল’ (আমজনতা) কাউকে অবশ্য প্রশ্ন করছেন না : ‘জনাবেরা, এতদিন কোথায় ছিলেন?’
বড় দলগুলো সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ফেলেছে বলেও কেউ কেউ খবর ছাপছে। নিজ দলে প্রার্থী মনোনয়নই যখন ঝুলে আছে, তখন আন্ডাবাচ্চাদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়ার খবর কি কোনো কাগজে ছাপা হলে তখন কারো কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে?
কোনো কোনো আসনে কোনো কোনো দল নাকি চূড়ান্ত প্রার্থীদের গ্রিন সিগনালও দিয়েছে। আগ্রহবশত একটি আসনের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানলাম, এলাকায় তিনজন গ্রিন সিগনাল পাওয়ার দাবি করছেন। এখন পাবলিক কাকে বিশ্বাস করবে?
রাজনীতিতে বিশ্বাসের সঙ্কট চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এটা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলো এ ক্ষেত্রেও তালি বাজানোর কাজ করবে। কথায় আছে, একে নাচুনি বুড়ি, তার ওপর ঢাকের বাড়ি।
লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়।
আপনার মতামত লিখুন :