সতর্ক হয়ে ‘আত্মহত্যা’র সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান
রিকু আমির : আত্মহত্যা প্রতিরোধে সতর্ক হয়ে ‘আত্মহত্যা’র সংবাদ পরিবেশন করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আয়োজিত একটি কর্মশালায়।
বৃহস্পতিবার সকালে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আলম।
‘ওয়ার্কশপ অন রেসপন্সেবল রিপোর্টিং অফ সুইসাইড ফর মিডিয়া প্রফেশনালন্স’ শীর্ষক কর্মশালায় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের ভাষা ও ধরণ আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করে। এজন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা একটি গাইড লাইন প্রণয়ন করেছে, যাতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে- কীভাবে আত্মহত্যার সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা একটি গাইড লাইনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম পৃষ্ঠা বা অন্যত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আত্মহত্যার খবর প্রকাশ করা যাবে না। শিরোনামে এমন কোনো শব্দ বা বাক্যরীতি ব্যবহার করা উচিৎ নয় যাতে পাঠক-দর্শকে উদ্দীপনার খোরাক দেয়। আবার এমনভাবেও প্রকাশ করা যাবে না, যাতে মনে হবে- আত্মহত্যা মামুলি স্বাভাবিক মৃত্যু। কীভাবে আত্মহত্যা করেছে বা করার চেষ্টা করে কেন ব্যর্থ হয়েছে, কোথায় করেছে- এসব বিস্তারিত তথ্য যেন সংবাদে না থাকে। আত্মহত্যার পর মৃতদেহের ছবি বা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ উচিৎ নয়, কোনো তারকার আত্মহত্যার খবর পরিবেশনে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক মেখলা সরকার ও হেলাল উদ্দিন আহমেদ- উভয়েই তাদের পৃথক উপস্থাপনায় বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে একটি হটলাইন নম্বর চালু করা প্রয়োজন। উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা চালু করে সুফল অর্জন হয়েছে।
হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতন একটি গাইড লাইন প্রণয়ন করা হবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য। এটি করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, আত্মহত্যার প্রবণতা এক ধরণের অসুস্থ্যতা। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এটাকে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে আইনের দৃষ্টিতে এটা অপরাধ এবং সুনির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা আছে।
মানসিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যক্তি সচেতনতার পাশাপাশি পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা অনেক জরুরি। মানুষকে বুঝতে হবে, তার মনকে বুঝতে হবে, নিজের মনকেও নিজের বুঝতে হবে।
মানসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আলম বলেন, এখন মানুষ অনেক সচেতন। তারপরও আত্মহত্যা হচ্ছে। গণমাধ্যম যদি একটু সচেতন হয়, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়, তাহলে আত্মহত্যার হার কমে আসবে। এছাড়া ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা তো আছেই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জাতীয় বিশেষজ্ঞ (মানসিক স্বাস্থ্য) হাসিনা মমতাজসহ সাংবাদিকরা বক্তৃতা প্রদান করেন।
আপনার মতামত লিখুন :