মোস্তফা কামাল গাজী: রাতের নিকষ আঁধারে আকাশের এক কোণে রূপার থালার মতো যে বস্তুটি পৃথিবীতে কোমল আলো ছড়ায়, তার নাম চাঁদ। ইংরেজিতে মুন আর আরবিতে কমার নামে ডাকা হয় একে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ‘কমার’ নামে একটা সুরাও নাজিল করেছেন। মহান আল্লাহর মহান সৃষ্টি এই চাঁদের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। দিঘল রজনীর শব্দহীন প্রকৃতিকে চাঁদ যখন তার নির্মল আলোর মোহময় রূপমাধুরীতে সাজিয়ে তোলে, তখন সে রূপমাধুরীর কোমল পরশে মনের গহিনে উছলে ওঠে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। লতাপাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে চাঁদের আলোর আলতো পরশ বুলিয়া যাওয়া মনের ভেতর অন্যরকম একটা রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে। কাজল রাতের আঁধার দূর করে চাঁদ পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয় কোমল আভা। গ্রামীণ পরিবেশে সৃষ্টি করে ঝিল্লিমুখর অধ্যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোম-লে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।’ (সুরা ফোরকান: ৬১)
চাঁদের স্নিগ্ধ কিরণ রাতের অন্ধকারে প্রাণীজগতের জন্য কেবল প্রদীপের মতো আলো বিতরণ করে না, বরং তা মরু প্রান্তরে রাতের পথযাত্রীকে পথনির্দেশ করে। চাঁদ মানুষের বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) সূর্যকে করেছেন তেজস্কর এবং চন্দ্রকে করেছেন কিরণদীপ্ত আর এর জন্য মঞ্জিল (তিথি) নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার।’ (সুরা ইউনুস: ৫) চাঁদের এই অঝোর জ্যোৎস্নায় স্নাত হয় মোমিনের হৃদয়। হৃদয় মিনারে সুর বাজে প্রভুর প্রশংসার। মোমিনের আঁখিযুগল যতবার এ চাঁদের দিকে তাকায়, ততবারই মনে পড়ে প্রিয় নবীর সেই অমিয় বাণী। যে বাণীতে স্বপ্ন আছে প্রভু দর্শনের। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসুল (সা.) এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।’ (বোখারি: ৫৫৪)
পৃথিবীর বুকে চাঁদ না থাকলে পর্যুদস্ত হয়ে পড়তো সবকিছু। বদলে যেতো অনেক কিছুই। তাই বলা যায়, চাঁদ মহান আল্লাহ তায়ালার অপার একটি সৃষ্টি। চাঁদের মাধ্যমে ¯্রষ্টাকে চিনতে হবে আমাদের। অনেকে ¯্রষ্টার পরিচয় না খুঁজে স্বয়ং চাঁদেরই পূজা করে বসে। এটা নিতান্তই বোকামি। হাদিসে পাকে এসেছে, চন্দ্র-সূর্যসহ অন্য যেসব বস্তুকে লোকেরা পূজা করত, সেগুলোকেও আল্লাহ তায়ালা সেদিন জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র কেয়ামতের দিন দুইটি ষাঁড়ের আকৃতিতে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বোখারি: ৩২০০) তাই আসুন, চাঁদের পূজা বাদ দিয়ে, ¯্রষ্টার অপূর্ব নৈপুণ্য দেখে আমাদের ঈমান পাকাপোক্ত করি। চাঁদের কোমল আলোর পরশ নিয়ে আমাদের মনটাকেও কোমল করি।
আপনার মতামত লিখুন :