লিহান লিমা : ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে কাতার। এই প্রেক্ষিতে দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সামনে আসে। গত কয়েক বছরে এই ইস্যুতে জোর দিয়েছে এই তেলসমৃদ্ধ দেশটি। নতুন শ্রম-আইনে অভিবাসী শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ৭৫০ রিয়েল ধার্য করাসহ একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সপ্তাহে কাতার বিদেশি শ্রমিকদের দেশে ফেরত যেতে মালিকদের অনুমতি প্রয়োজন হবে, এই আইন রদ করে। আইনটি বাদ দেয়ার জন্য শ্রমিক অধিকার গোষ্ঠি দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছিলো।
বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিক শরিফ কাতারের নতুন শ্রম আইন সম্পর্কে সন্তুষ্ট নন। তার মতো হাজারো অভিবাসী শ্রমিককে নিরাপদে রাখার জন্য নতুন শ্রম-আইন প্রবর্তন করা হলেও তিনি স্বস্তিবোধ করছেন না। তিনি মনে করেন, নতুন এই ব্যবস্থা তার মালিককে তাকে বিতাড়িত করা থেকে বিরত রাখবে না। ২২ বছরের শরিফ বলেন, আমি স্বস্তিবোধ করছি না কারণ আমার কোম্পানি যে কোনো সময় আমাকে পদচ্যুত করতে পারে। ফলে আমাকে দেশে ফেরত যেতে হবে। যদি আমাকে দেশে ফেরত যেতে হয় তবে আমার পরিবারের অর্থ যোগান দেয়ার মত কেউই থাকবে না।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর দোহা অফিসের প্রধান হৌতান হোমায়নপৌর বলেন, মুক্ত চলাচল ও দেশ ছাড়ার সুবিধা শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয় কারণ অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি পরিবর্তনের জন্য এখনো তাদের মালিকের অনুমতির প্রয়োজন হয়।
তবে কাতারে কর্মরত প্রায় ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিক মনে করছেন এটি তাদের অন্যায্য বিষয়গুলোর শিকার হতে রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। শরিফ বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হওয়া পদ্ধতির কারণে তিনি সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে তার বেতন পান। তবে তার মালিক তাকে বেতন দেয়ার বদলে শুধু অতিরিক্ত সময় কাজ করার টাকা দেন। সরকারের এটি জানার কোন উপায় নেই। তিনি বলেন, আমার পরিবার এই অর্থের ওপর নির্ভরশীল, তাই আমি অপারগ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর সময় তাকে ৯০০ রিয়েল দেয়ার প্রতিশ্রতি দেয়া হলেও এখন তাকে তার অনেক কম দেয়া হয়। এছাড়া কাতারে আসতে তাকে দিতে হয়েছিল ৭০০ ডলার। যদিও কাতারে কোনো রিক্রুটমেন্ট ফি নেই । তবে এক তদন্তে উঠে এসেছে, বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণে কাতারে চাকরির জন্য আসা এশিয়ার শ্রমিকরা প্রায় ৩ হাজার ৮০০ ডলারও রিক্রুটমেন্ট ফি দিয়েছেন। কাতারের শ্রমমন্ত্রী ইসাল আল নুইমি বলেন, অবৈধ রিক্রুটমেন্ট ফি-এর বেশিরভাগই কাতারের বাইরে থেকে নেয়া হয় এবং কাতার পাচার প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে। এ-ছাড়া সরকার মানবপাচার এবং গৃহে নির্যাতনের শিকার হওয়া শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
কাতারে কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ২০ জনের মধ্যে ১৯জনই অভিবাসী শ্রমিক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়া, ফিলিপাইন ও আফ্রিকা থেকে আসা। এর মধ্যে ৮ লাখই নির্মাণখাতের শ্রমিক। ২০১৭ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, অতিরিক্ত উষ্ণতার সময় বাইরে শ্রমিকদের কাজ করার ক্ষেত্রে কাতারের সুরক্ষা গ্রহণ করা উচিত। শত শত শ্রমিক এর জন্য মারা গেছেন। ১১ বছর ধরে কাতারে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত দিনেশ বলেন, এখন নিরাপত্তার কিছু উন্নতি হয়েছে, সেফটি প্রটোকল আছে ও চার মাস পর বেতন দেয়ার বদলে প্রতি মাসেই বেতন দেয়া হয়। তবে অনেকেই বলছেন, কিছু এলাকা আছে যেখানে কর্তৃপক্ষের নজর রাখার কোনো সুযোগ নেই। ঘানা থেকে আসা ২২ বছরের সোলাইমান বলেন, যদি ওভারটাইম না করি তবে তারা শাস্তি হিসেবে গরমের এলাকায় পাঠাবে। তিনি আরো বলেন, তাকে নিয়োগ দেয়ার সময় কোম্পানি তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়।
শ্রম-সংস্কার কনসালটেন্সি ফার্ম ইকুইদেম রিসার্চের মোস্তফা কাদরি বলেন, ‘নতুন শ্রম-আইন অন্যায্য বিষয়গুলো প্রতিরোধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি পরিবর্তনের প্রথম ধাপ মাত্র। এই সংষ্কারে শ্রমিকরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবে। আমূল পরিবর্তন আনতে আরো সময়ের প্রয়োজন।’ রয়টার্স।
আপনার মতামত লিখুন :