মহসীন কবির : জ্ঞানের আলোর ফেরিওয়ালা বইপ্রেমী পলান সরকার জন্মদিন পালিত হয়েছে গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর রোববার। পলান সরকার প্রতিদিন দু-তিন গ্রামে হেঁটে পৌঁছে দেন জ্ঞানের আলোকশিখা। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। ১৯২১ সালে নাটোর জেলার বাগাতি পাড়া গ্রামে পলান সরকারের জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র পাঁচ মাস বয়সে বাবা হায়াত উল্লাহ সরকারের মৃত্যুতে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর অর্থনৈতিক সংকটে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। এরপর তাঁর নানা ময়েন উদ্দিন সরকার মা মইফুন নেসাসহ পলান সরকারকে রাজশাহীর বাঘার থানার বাউসা গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। যুবক বয়সে যাত্রাদলে স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ করতেন পলান সরকার। মাঝে মাঝে প্রম্পটের কাজ করতেন মঞ্চের পেছনে। আর এই কাজটিই তাঁর বই পড়ার অভ্যাস ধরে রাখে।
১৯৯০ সাল থেকে বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছর যারা মেধাতালিকায় প্রথম দশটি স্থান অর্জন করত তাদের বই উপহার দিতেন পলান সরকার। এরপর অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তাঁর কাছে বইয়ের আবদার করলে, সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তাদেরও বই দিবেন তবে তা ফেরত দিতে হবে। এরপর গ্রামের মানুষও তাঁর কাছে বই চাইতে শুরু করে। এভাবেই শুরু হয় বই পড়া আন্দোলনের ভিত।
২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে আলোকিত মানুষ হিসেবে তুলে ধরা হয় বইপ্রেমী পলান সরকারকে। ইত্যাদিতে প্রচারের পর তাকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়, নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন। পলান সরকার ইত্যাদির পরবর্তী অনুষ্ঠানে বলেন, ইত্যাদি'র অনুষ্ঠান হওয়ার পরে এবং 'ইত্যাদি' থেকে বই দেওয়ার পরে পাঠক সংখ্যা অনেক বাইরা গেছে'। শুধু তাই নয় এরপর তাকে নিয়ে নির্মিত হয় বিজ্ঞাপন, রচিত হয় নাটক, অনুষ্ঠিত হয় পলান মেলা।
২০১১ সালে তিনি লাভ করেন একুশে পদক। পলান সরকারকে নিয়ে ২০১৪ সালে ২০ সেপ্টেম্বর 'ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে' উপলক্ষে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :