ডেস্ক রিপোর্ট : মিহির ও তার স্ত্রী কলাবাগানের বাসিন্দা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। গত কয়দিন থেকে অফিস যাতায়াতে গণপরিবহন সংকট অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই প্রায় এক ঘণ্টা হাতে সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন এই দম্পতি।
কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের সামনে প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাননি তারা। পরে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশায় চেপে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
মিহির বলেন, ঢাকা সিটিতে চলাচল করা এখন খুব দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখেন না, রাস্তায় বাস কম দেখে সময় নিয়েই বের হয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হলো না, বাস পেলাম না। যার কারণে রিকশায় বেশি ভাড়া দিয়েই অফিসে যেতে হচ্ছে। কোনো উপায় নাই, অফিস তো করা লাগবে।
কলাবাগান থেকে গাবতলীর বাস খুঁজছিলেন আবদুল মতিন। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় এসেছেন। সকালে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর সায়েদাবাদ থেকে কলাবাগান আসার বাস পেয়েছেন। ফিরতি পথে বাস পাচ্ছিলেন না তিনিও।
রাসেল স্কয়ারে কথা হয় কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সাভার যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছেন। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পাননি। কামাল বলেন, ‘মেয়ের বাসা সাভারে। সেখানে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছি। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে বাস পাচ্ছি না। আল্লায় জানে আরও কতক্ষণ যে বাসের জন্য দাঁড়াইয়া থাকতে হবে।’
ঈদসহ নানা ছুটির উপলক্ষে রাজধানী অনেক দিন ফাঁকা থাকার পর পুরোদমে সচল হতে শুরু করেছে অফিস-ব্যবসা বাণিজ্য। পুরোপুরি সচল ঢাকায় গণপরিবহনের সংকটে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে প্রয়োজনীয় গণপরিবহন পাচ্ছেন না।
বিশেষ করে মূল স্টপেজ ছাড়া যারা মধ্যবর্তী স্থানগুলো থেকে বাস ধরতে চাইছেন তারা পড়ছেন বিপাকে। যেগুলো রয়েছেন তাও সিটিং কিংবা গেইটলকের ভান করে রাস্তায় চলছে। এতে বেশ বিপাকেই পড়ছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে মানুষ হেঁটে বা রিকশায় করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন।
রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা গাবতলীতে দেখা গেছে, অন্য সময়ের মতো রাজধানীতে চলা গণপরিবহনের সংখ্যা তেমন নেই। অনেকটাই ফাঁকা। অন্য সময়ের মতো ভিড়ও নেই আবার হাঁকডাকও নেই।
কয়েকজন চালক ও সহকারীরা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর লাইসেন্সহীন চালক ও ফিটনেস এবং অনুমোদনহীন বাস চলাচলের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আর মামলার ভয়ে কাগজপত্রহীন গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছে না কোম্পানিগুলো।
যেসব গাড়ির ফিটনেসের সমস্যা রয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাক করতে কারখানায় পাঠানো হয়েছে। আর লাইসেন্স না থাকা চালকরা লাইসেন্সের আবেদন করেছেন। কিন্তু সেটি পাওয়ার আগে স্টিয়ারিংয়ে বসতে চাইছেন না তারা।
ধামরাই থেকে গুলিস্তান রুটে চলাচল করে ডি লিংক পরিবহন। এই রুটে সাধারণত সবচেয়ে কম ভাড়ায় চালিত গাড়িটি সাধারণ মানুষের একমাত্র অবলম্বন। তবে বর্তমানে কোম্পানিটির অনেকগুলো গাড়ি রাস্তায় নেই।
এই রুটে চলাচলকারী ডি লিংক পরিবহনের একটি বাসের চালক স্বপন বলেন, এই লাইনে আমাগো কোম্পানির গাড়ি সবচেয়ে বেশি ছিল। মানুষ পাঁচ থেইক্যা ১০ মিনিট দাঁড়াইলেই গাড়ি পাইত, এখন হেইহানে আধা ঘণ্টার মত লাইগা যায় বাস পাইতে। যেইগুলার কাগজ বা বিভিন্ন সমস্যা আছে ওইগুলা বন্ধ আছে।
আজিমপুরের ভিআইপি ২৭ নম্বরের এক চালক বলেন, ছাত্রগো আন্দোলনের পর থ্যাকইা আমাগো কোম্পানির অর্ধেকের বেশি গাড়ি এখন রাস্তায় নাই। ধরেন ৩৫টার মত ছিল, এখন রাস্তায় আছে ১২-১৩টা।
এই রুটে চলাচলকারী মিরপুর লিংক পরিবনের একটি বাসের চালকের সহকারী জাকির জানান, তাদের কোম্পানির ৩০টি গাড়ি ছিল। বর্তমানে চলছে ১২টি। বাকিগুলো ত্রুটির কারণে নামছে না।
এই রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি গাড়ির কাউন্টারের শ্রমিক, চালক ও তাদের সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল একমাত্র মেঘলা পরিবহন ছাড়া প্রায় সব কয়টি পরিবহনের অর্ধেকেরও বেশি গাড়ি ত্রুটির কারণে রাস্তায় নামানো হচ্ছে না। তবে মালিকরা বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি সারিয়ে এগুলো নামানোর চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান রুটে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলম বলেন, গত কয়েকদিন থেকে রাস্তায় বাসের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে। তবে আগের মত বাস রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। আর সেটা দেখা না যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি, যার কারণে মালিকরা বাস রাস্তায় নামাচ্ছেন না। তাছাড়া আমরা কোনো ত্রুটি থাকলে কোনো প্রকারের ছাড় দিচ্ছি না। ঢাকাটাইমস
আপনার মতামত লিখুন :