শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৩১ দুপুর
আপডেট : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৩১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধান দুদলেই মনোনয়ন নিয়ে চলছে কোন্দল

ডেস্ক রিপোর্ট : বছরের শেষপ্রান্তে জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে সারা দেশে বইছে ভোটের হাওয়া। দলগুলোতে প্রস্তুতির তোড়জোড়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ তুঙ্গে। নির্বাচনী এলাকায় ঘন ঘন ছুটছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কেমন তাদের প্রস্তুতি, মাঠের অবস্থাইবা কি? এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন।

কে এস রহমান শফি ও রোজিনা মফিজ খান, টাঙ্গাইল থেকে : টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেরই একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন মাঠে। দুদলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে কোন্দল। বসে নেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমও। নতুন প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)। তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন সখীপুর ও বাসাইল উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। জাতীয় পার্টির কাজী আশরাফ সিদ্দিকীও গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আসনটি ধরে রাখতে। আর বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে এ আসনটি দখলে নিতে জাতীয় পার্টিও মাঠে রয়েছে তৎপর।

জেলার সখীপুর ও বাসাইল উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে টাঙ্গাইল-৮ সংসদীয় আসন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ হুমায়ুন খালিদ। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী মোর্শেদ আলী খান পন্নী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পার্টির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির হুমায়ুন খান পন্নী। ১৯৯৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর বিরোধ দেখা দিলে তিনি প্রথমে দল থেকে পদত্যাগ করেন। পরে সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেন। শূন্য আসনে উপনির্বাচন দেয়া হলে তিনি তাতে অংশ নেন। বহুল আলোচিত-সমালোচিত সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকী তার নিজের প্রতিষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শওকত মোমেন শাহজাহান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজয়ী হওয়ার দুসপ্তাহের মধ্যেই শওকত মোমেন শাহজাহানের মৃত্যু হয়। শূন্য আসনে উপনির্বাচনে তার ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আগামী নির্বাচনেও অনুপম শাহজাহান জয় দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া এ আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন সরকারি সাদত কলেজের দুবারের ভিপি ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের), সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত শিকদার, সাবেক অতিরিক্তি সচিব ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আসাদুল হক তালুকদার, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউল মাহমুদ, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সব মনোনয়ন প্রত্যাশী কাদের সিদ্দিকী কোন জোটে যান সেদিকে তাকিয়ে আছেন। তারা মনে করছেন কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নেতৃত্বাধীন যে কোনো জোটে গেলে তিনিই ওই জোট থেকে মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয় আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নের জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন। অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে। তবে প্রার্থীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। তৃনমূল থেকে উঠে আসা জোয়াহেরুল ইসলাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এবং করটিয়া সা’দত বিশ^বিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের দুবার ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি শেষে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবং জনপ্রতিনিধিরা দলমত নির্বিশেষে তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয় তার বাবা শওকত মোমেন শাহজাহানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। তার বাবার ইমেজও তার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। মনোনয়ন প্রসঙ্গে অনুপম শাহজাহান জয় জানান, রাজনৈতিকভাবে নবাগত হলেও তিনি সবার কাছেই জনপ্রিয়। তিনি ইতোমধ্যে সখীপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে সবার মাঝে আলোচিত ও প্রশংসিত। এ ছাড়া তিনি সখীপুরের রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন করেছেন। তিনি সখীপুর বাসাইলের মানুষের সেবক হিসেবে এ এলাকার উন্নয়নের রূপকার হয়ে থাকতে চান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে টাঙ্গাইল ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছি। বিরোধী দলে থাকাকালে পাঁচবার কারাবরণসহ অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে তার এবং সরকারের ইমেজ পুরো টাঙ্গাইলেই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের সুফল তৃনমূলের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমি নৌকার প্রার্থী হতে চাই। সখীপুর-বাসাইলের জনগণ আমার সঙ্গে আছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত শিকদার একজন জনপ্রিয় নেতা। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে নিয়মিত গণসংযোগ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, তৃণমূল ও জনসমর্থনের দিক বিবেচনা করলে দল আমাকেই আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনীত করবেন।
সাবেক অতিরিক্তি সচিব ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আসাদুল হক তালুকদার বলেন, তিনি তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকাল থেকেই সখীপুর ও বাসাইলের উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ এবং সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সব প্রার্থীই সখীপুর উপজেলার। একমাত্র আমিই বাসাইল উপজেলার মানুষ হওয়ায় এটা আমার জন্য একটি বাড়তি সুবিধা। আমি এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেলে দলমত নির্বিশেষে বাসাইল উপজেলাবাসী আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। এ আসনের গুরুত্ব বুঝে দলীয় হাইকমান্ড তাকেই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে এ আসনে একাধিকবার হারলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুল হক নাছির, সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ হাবিব, জেলা বিএনপির সহসভাপতি জিয়াউল হক শাহীন ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক শফি শাওন। আহমেদ আযম খান ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। শুধু রাজনীতি নয়, জিয়া পরিবারের আয়কর আইনজীবী হওয়ায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই তার সমর্থকরা মনে করছেন এ আসনে তার দলীয় মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। আর মনোনয়ন নিশ্চিত এ বিষয়টি ধরে নিয়েই তিনি নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুল হক নাসিরের সমর্থকরা মনে করেন আহমেদ আযম খান এর আগে দুবার মনোনয়ন পেয়েও বিজয়ী হতে পারেননি। তাই এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেবে দল। এ ক্ষেত্রে তরুণ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে ওবায়দুল হক নাসিরেরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ আসনে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। মুক্তিযুদ্ধের সময় সখীপুরেই ছিল তার বাহিনীর হেডকোয়ার্টার। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি তেমন শক্তিশালী না হলেও কাদের সিদ্দিকীর ব্যক্তি ইমেজ ও তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে তার নিয়মিত ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকায় তিনি এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী।
জাতীয় পার্টি থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব কাজী আশরাফ সিদ্দিকী। দলীয় মনোনয়নের সংকেত নিয়ে ভোটের মাঠে গণসংযোগে নেমেছেন তিনি। দুই উপজেলা জাতীয় পার্টি তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। কাজী আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, জনসংযোগ করতে গিয়ে আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইমেজের কারণে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আসনে নতুন মুখ হিসেবে ভোটারদের কাছে পরিচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও স্থানীয় বোয়ালী কলেজের অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ। তৃণমূলের ভোটার ও নেতাকর্মীদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব সাঈদ আজাদ। তিনি বলেন, জনজরিপের মাধ্যমে মনোনয়ন দেয়া হলে আমি অবশ্যই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাব। আপামর জনতা, ভোটার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করছি। সূত্র : ভোরের কাগজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়