শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:০৮ সকাল
আপডেট : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাদক আনছে কারা

ডেস্ক রিপোর্ট : গত ৪ মে থেকে সারা দেশে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। বিগত এই চার মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের কয়েক হাজার ডেরা তছনছ করে। গ্রেফতার হয় ৪০ হাজারের বেশি ছোটবড় মাদক ব্যবসায়ী। এ সময়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে দু’শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। মাদকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের এমন ক্রাশ প্রোগ্রাম দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেই মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। কিন্তু এতকিছুর পরও বন্ধ হয়নি মাদকের বিকিকিনি। এখনো হাত বাড়ালেই মিলে ইয়াবা। এ পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে। সর্বমহলেই প্রশ্ন, মাদক তবে আনছে কারা? অপরাধ বিশ্লেষক ও মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বিশেষ অভিযানের কারণে মাদক কারবারি ও সোর্সরা চাপের মুখে পড়লেও ৩ কারণে তাদের পুরোপুরি তৎপরতা বন্ধ হয়নি। এখনো সীমান্তের ফাঁক গলে বিভিন্ন রুট হয়ে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদক পাচারের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চলমান অভিযান চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে না। চলমান অভিযানে খুচরা মাদক কারবারিরা ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালরা থেকে গেছে অধরা। আবার ধরা পড়ার ভয়ে দেশান্তরী হয়েছেন অনেক মাদক ব্যবসায়ী। অন্যদিকে যারা মাদক নিমূলে কাজ করছে সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা মাদকের অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্যের কারণে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মাদক ব্যবসায়ীকে পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে ২৯ মে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম হোসেন এবং ঘুষ নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ৩০ মে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানার এএসআই জুয়েল হোসেনকে প্রত্যাহারের খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিটরা বলছেন, ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ করা যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের কারণে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গারাই এসব মাদক ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু তথ্য থাকা সত্যেও তাদের ক্যাম্পে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিযান শুরুর পর বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এ কারণে তাদের ধরা যাচ্ছে না। যেভাবে অভিযান চলছে, তাতে আদৌ বড় মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়বেন কি না, তা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, অভিযান আরও চলুক, তারপরে বলা যাবে। তিনি বলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এত অভিযানের পরেও নাফ নদে ও সাগরপথে এখনো ইয়াবার চালান আসছে। টেকনাফ থেকেই তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তের নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিদিন ছোট-বড় ইয়াবার চালান ধরছে। কিন্তু মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদক পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের ঘোষিত বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি সাইফুল করিম। ক্ষমতাসীন দলের নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা সবার সঙ্গেই তার মেলামেশা। কক্সবাজার জেলা পুলিশের করা ইয়াবার গডফাদারদের তালিকায়ও তার নাম এক নম্বরে। কিন্তু তিনি আছেন মুক্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমার থেকে আসা মোট ইয়াবার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে সাইফুলের মতো পাঁচ থেকে ছয়জনের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের ভাই মুজিবুর রহমান ছাড়াও আছেন নুরুল হক ওরফে ভুট্টু, শাহজাহান আনসারী, মোস্তাক আহমেদ, নুরুল হুদা, জাফর আহমেদ। তাদের মাধ্যমে ইয়াবা আসার পর সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা একমাত্র মিয়ানমার থেকে আসে এবং এর বেশির ভাগ কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। পুলিশের কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, সাইফুল করিমকে ধরতে পারলে দেশে ইয়াবা আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে।

সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা কমবেশি ৭০ লাখ। তাদের অধিকাংশই ইয়াবায় আসক্ত। গত বছর দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলে চার কোটি ইয়াবা উদ্ধার করে। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির মত অনুযায়ী, মাদক উদ্ধার হয় সাধারণত মোট ব্যবহারের ১০ শতাংশের মতো। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, এই বিপুল টাকার শক্তিতেই ইয়াবা ব্যবসা হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ বা শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা করলেও এখনো মাদকের রাশ টেনে ধরা যায়নি। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, টেকনাফ-কক্সবাজারের কিছু স্থানীয় ব্যক্তির কাছে ইয়াবা আর দশটা ব্যবসার মতোই স্বাভাবিক রোজগারের উপায়। এই ব্যবসা করে কেউ কেউ টেকনাফের বিভিন্ন পাড়ায় আলিশান বাড়ি করেছেন। ব্যবহার করছেন পাজেরো, প্রাডোর মতো দামি গাড়ি। অথচ তারা একসময় দরিদ্র জেলে কিংবা সাধারণ লবণচাষি ছিলেন।

সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া কক্সবাজারের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর তথ্যমতে, সাইফুল করিমদের মতো ব্যবসায়ীর নেটওয়ার্ক মিয়ানমারেও বিস্তৃত। তাদের কাজ কেবল ইয়াবা বড়িগুলো বাংলাদেশের ভূমিতে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া এবং ঘাটের নিরাপত্তা দেখা ও প্রশাসনকে হাতে রাখা। ইয়াবা আসার পর ‘ডিলারের’ লোকজনই চালান খালাস করে নেন। মাঝখান থেকে ইয়াবাপ্রতি পাঁচ টাকা করে কমিশন কেটে রাখেন ‘গডফাদাররা’। এ রকম গডফাদাররা সপ্তাহে চার থেকে পাঁচটি চালান নিয়ে আসেন। প্রতি চালানে ৫ থেকে ১০ লাখ ইয়াবা থাকে। ‘ঘাট খরচ’, ‘প্রশাসন খরচ’ সব বাদ দিয়ে গড়ে তাদের সাপ্তাহিক আয় কোটি টাকার ওপরে। এরপরের ধাপে আসে টেকনাফের ডিলাররা। যারা ইয়াবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ মিলিয়ে এ রকম অন্তত ১৫০ ডিলার আছেন। টেকনাফের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, টেকনাফে ৩০ টাকার ইয়াবা ঢাকায় আসতে আসতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম হয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার ও অতিরিক্ত উপকমিশনার পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়াবার টাকা পুলিশ, বিজিবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে চলে যায়। তবে মাঝেমধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে কিছু নিম্নমানের ইয়াবা জব্দ হয়। কোনো কোনো বাহিনী পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ইয়াবা উদ্ধারও দেখায়। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত, শীর্ষ ব্যবসায়ী কারা, কোথায় তাদের অবস্থান, কোন পথে ইয়াবা ঢুকছে দেশের সবই স্থানীয় প্রশাসনের জানা। ওই কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ইয়াবার ‘রাজধানী’ টেকনাফ-কক্সবাজার প্রশাসন ঠিক না হলে এর চোরাচালান বন্ধ হবে না।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়