ডেস্ক রিপোর্ট: অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর হঠাৎ করেই রাজধানীতে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। বিশেষ করে রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, হাতিরপুল, আজিমপুর কলোনি, পুরাতন ঢাকা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, বাসাবো, খিলগাঁও, মানিকনগর ও যাত্রাবাড়িতে এর প্রকোপ বেশি। হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তই সর্বাধিক। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে হেমোরেজিকের সংখ্যা বেশি। এটাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। খবর: ইত্তেফাক
দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক আগে থেকে। প্রায় প্রতি বর্ষাতেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। ঘনঘন বৃষ্টিপাতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা বংশ বিস্তার করে থাকে। শীত আসার আগ পর্যন্ত এই জ্বরের প্রাদুর্ভাব থাকবে। শীতকালে এডিস মশা তেমন একটা বংশ বিস্তার করে না। এ কারণে শীত মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরে তেমন কেউ আক্রান্ত হয় না। এ বছর এ পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছে।
এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস ছড়ায়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস আছে। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। এবার সবচেয়ে ঝুঁকি বেশি হেমোরেজিক। সঠিক চিকিত্সা পদ্ধতি গ্রহণ করা না হলে এতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারের দুই মেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একটি মেয়েকে ইতিমধ্যে বিদেশে উন্নত চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে এবার চিকুনগুনিয়ার তেমন প্রাদুর্ভাব নেই। কারণ কারো একবার চিকুনগুনিয়া হলে দ্বিতীয়বার আর হয় না। গত বছর ব্যাপক হারে চিকুনগুনিয়া হয়েছিল। তবে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু হয় একই মশার কামড়ে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও চিকিত্সক অনুষদের ডিন প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, সঠিকভাবে চিকিত্সা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়। যদিও বলা হয় যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকে মৃত্যুর হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে নিজ অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে এই হার ১ শতাংশেরও কম। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক চিকিত্সকও মনে করেন যে রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ঝুকিপূর্ণ সময়। এ সময়টাতে সবারই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর থেকে রেহাই পেতে হলে বাসা বাড়িতে জমাট পানি রাখা যাবে না। বাসন-কোসন, ঘরের ভিতরে এসি, ফ্রিজের পানি যাতে জমাট না থাকে। কারণ জমাট বাধা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। তিনি বলেন, দিনের বেলায় ফুল পাতা শার্ট ও পায়ে মোজা পড়ে থাকতে হবে। দিনে ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে। কারণ এডিস মশা দিনে কামড়ায়, রাতে কামড়ায় না। শুধু প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ওষুধ সেবন না করার পরামর্শ দিয়ে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি সেবন করতে হবে। অবস্থা খারাপ হলে কিংবা অন্য কোন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খেতে হবে। অভিযোগ উঠেছে, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম রাজধানীতে তেমন একটা চোখে পড়ে না। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে এ ধরনের অভিযোগ প্রতিদিনই টেলিফোন করে ইত্তেফাককে বাসিন্দারা জানাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগও থাকতে পারে, যেমন টাইফয়েড ফিভার বা অন্য কোনো ইনফেকশন, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিত্সক প্রয়োজন মনে করলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
ডেঙ্গু চিকিত্সায় যা মনে
রাখা উচিত
১. ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। রোগী ও রোগীর লোকদের অভয় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২. ডেঙ্গু জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিত্সা না করলেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে কোনো মারা্তক জটিলতা না হয়। ৩. ডেঙ্গু রোগে কী কী করা দরকার, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; কী কী করা যাবে না, তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। যা যা করা যায়, তা প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে, অতিরিক্ত করা যাবে না। ৪. রক্ত বা প্লাটিলেট পরিসঞ্চালন অপরিহার্য-এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। ডেঙ্গু মশা ও তার বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ দুটোই আমাদের চারপাশে বিদ্যমান। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। ডেঙ্গু আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ভয় না পেয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করেই এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ করেই চলতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :