শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:০৯ রাত
আপডেট : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার শিল্প হুমকির মুখে

হাবিবুর রহমান সোহেল : দাম নেই সাদা সোনা খ্যাত রাবারের। যার কারণে বর্তমানে এ শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা উৎপাদিত রাবার ল্যাটেক্সকে তরল সাদা সোনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কয়েক বছর পূর্বে দেশের মাটিতে সাদা সোনার বিপ্লব ঘটলেও এখন সাদা সোনার দর নেই বললেই চলে। বিদেশ থেকে রাবার আমদানির ফলে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের এখন বাজার দর কমে গেছে। বিগত ২ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে রাবার সেক্টরে। এই অবস্থায় ছাঁটাইয়ের শংকায় আছেন শ্রমিকরা। রপ্তানির সুযোগ থাকলেও রাবার আমদানির ফলে বাগান মালিকরা কম দামে রাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ থাকায় ১০ হাজার রাবার শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে রাবার বাগান রয়েছে। তবে দেশের সবচেয়ে বেশি রাবার চাষ হয় পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে। বাণিজ্যিক রাবার চাষে পার্বত্য বান্দরবান জেলার দুর্গম নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এখন দ্বিতীয় মালেশিয়া। এছাড়াও উপজেলা সদর, ঘুমধুম, দৌছড়িতেও রাবার উৎপাদন হচ্ছে। ১৯৮৪ সাল থেকে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে তোলা রাবার বাগান থেকে তরল “সাদা সোনা” আহরণ করে ব্যবসায়িকভাবে লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে দর পতনে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

সরজমিনে উপজেলার বাইশারীতেক কর্মরত শ্রমিকদের সাথে রাবার বাগানের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, চারা লাগানোর ৭ বছর পরই রাবার উৎপাদন শুরু করা যায়। প্রতিটি গাছে উৎপাদনের প্রথম থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে রাবার উৎপাদন হয়। আর প্রতি গাছ থেকে গড়ে বার্ষিক ১৫ কেজি ল্যাটেক্স (তরল সাদা কষ) পাওয়া যায়। প্রথমে নতুন কোনো রাবার বাগান করতে উচ্চফলনশীল জাতের ১১ কিংবা ২১ মাস পদ্ধতির নার্সারি সৃজন করতে হয়। বাংলাদেশের ভূমিতে ২১ মাস পদ্ধতির চারা লাগানো সবচেয়ে নিরাপদ। ৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তরল কষ আহরণ করতে পারবে মালিকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানায়, বিগত দুই বছর পূর্বেও বাগানে কাজ করে আনন্দঘন মূহুর্ত পার করত তারা। বর্তমানে রাবারের দাম কমে যাওয়ায় তরল কষের পরিমাণ বাড়াতে মালিকদের প্রচুর চাপ সহ্য করে ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কষ্ট হলেও পেটের তাগিদে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কাজে কোন ধরনের গরমিল হলেই চাকুরী হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

আরিফ রাবার বাগান ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ জানান, বাইশারী ও আলীক্ষ্যং মৌজায় প্রায় ২’শ একরের বাগানে বর্তমানে ৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যা আয়, তা দিয়ে শ্রমিকদের মাসিক বেতন প্রদান করা হয়েছে। নিরুপায় হয়ে বাগানের জঙ্গল কাটা ও সার প্রদানের টাকা মালিকের নিজ থেকেই দিতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিগত ২ বছর ধরে রাবারের দাম নেই। হঠাৎ দর পতনে মালিকসহ শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়েছে, এই অবস্থায় রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের মাসিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বাগান মালিকরা।

ন্যাম রাবার বাগান ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ ইরফান জানান, রাবারের মূল্য না থাকায় গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা মালিকের লোকসান গুনতে হয়েছে। বিগত কয়েক বছর পূর্বে রাবারের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে বাজার দর পতনে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে।

স্থানীয় ক্ষুদ্র রাবার বাগান মালিক মৌলানা আব্দুর রহিম আমাদের সময় ডট কমকে জানান, আলীক্ষ্যং মৌজার দূর্গম পাহাড়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ১০ একরের একটি রাবার বাগান গড়ে তুলেছিল। কিন্তু পরপর তিনবার বন্য হাতি তান্ডব চালিয়ে সম্পূর্ণ বাগান ধ্বংস করে দেয়। রাবারের মূল্য না থাকায় পূনরায় বাগান সৃজন করতে আগ্রহ নেই বলে জানান তিনি।

সুত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মোট ৫১ হাজার ২৩০ একর বনভূমির মধ্যে ১৩টি মৌজায় ৫১২ জন মালিক প্রায় ১৬ হাজার ৭৫০ একরের বেশি পাহাড়ি এলাকাজুড়ে রাবার বাগান গড়ে তুলেছেন। প্রতিজন মালিকের ২৫ একর জমির জন্য তিন হাজার ৭৫০ টাকা লিজের কিস্তি হার নির্ধারণপূর্বক বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৪০ বছর মেয়াদে এসব বাগান লিজ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের লিজের বাইরেও এ উপজেলার বাইশারী ছাড়াও ঘুমধুম, দৌছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ী ভূমিতে খন্ড খন্ড ভাবে আরও প্রায় ২০ হাজার একর পাহাড়ি এলাকায় রাবার চাষ করছে স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একটি মহল নিজেদের স্বার্থে বিদেশি রাবার আমদানি করে দেশীয় রাবার শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ রাবারের দর কম হলেও রাবার থেকে উৎপাদিত কোনো পণ্য সামগ্রীর দাম কমেনি। বর্তমানে রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্যের দামও চড়া।

স্থানীয়দের দাবি, রাবার সেক্টর বন্ধ হলে শ্রমিকদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কমনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়