শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:০৫ সকাল
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৩৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর, রানওয়েতে শুকানো হচ্ছে ধান

জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘ দিনেও চালু করা সম্ভব হয়নি ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দর । ৩৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিমান বন্দরটি। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে স্টল ভবনের দরজা-জানালা এবং রানওয়ের কাপেটিং। চুরি হয়ে গেছে সীমানা পিলার সহ তারের বেড়া। গোচারণ ভূমিতে পরিণত হওয়া এ বিমান বন্দরের রানওয়ে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে খেলার মাঠ এবং ধান, গম ও ভুট্টা শুকানোর কাজে। অথচ এটি চালু করা গেলে একদিকে যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হত, অন্যদিকে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে যোগ হত নতুন মাত্রা।

জানা যায়, ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির উপর এ বিমান বন্দরটি স্থাপিত হয়। এ বিমান বন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ কি.মি.। রানওয়ের পশ্চিম প্রান্তে ১০টি সাব-রানওয়ে ছিল। এতে কয়েক ডজন যুদ্ধ বিমান লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমান বন্দরের সমস্ত জমি ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিভিল এ্যাভিয়েশন বিভাগ ১’শ ১০ একর জমি একোয়ার করে। ওই জমিতে বিমান বন্দরের স্টল ভবন, রানওয়ে রয়েছে।

বিমান বন্দরটি নির্মাণের পর বেশ কিছুদিন চালু ছিল। পাকিস্তান আমলেও ত্রাণ সামগ্রী পরিবহন সহ জরুরী কাজে এই বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল। সে সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান চলাচল করতো। তখন থেকেই ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদসমুহের সাথে ঢাকার বিমান যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৯৮০ সালে লোকসানের অজুহাতে এ বিমান বন্দরটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে এ বিমান বন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে জন্য ১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে মেরামত, টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের কাজ সহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হয়। এয়ার বেঙ্গল ও বোরাকসহ ৬টি বেসরকারি সংস্থা ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে স্টল বিমান সার্ভিস চালু করার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তিও সম্পাদন করে। কিন্তু চুক্তি আর বাস্তবায়ন হয়নি। এর কিছুদিনের মাথায় স্টল বিমান সার্ভিস চালুর প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিমান বন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়।

যথারীতি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি বিমান এ বন্দরে ল্যান্ডও করানো হয়। কিন্তু সে উদ্যোগও ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এ বিমান বন্দরের ১০৫ একর জমি তাদের আওতায় নিয়ে ৩০ একর জমি স্থানীয়দের লিজ দেয়। সিভিল এ্যাভিয়েশন তাদের ১১০ একর জমির মধ্যে ৭০ একর জমি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে লিজ প্রদান করেছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এর রানওয়ে ও স্টল ভবন। সরকারি নজরদারি না থাকায় চুরি হয়ে যায় এর সীমানা পিলার ও তারের বেড়া।

৯৪ সালে মেরামতের পর চালু না হওয়ায় আবারো নষ্ট হয়ে যায় রানওয়ের কার্পেটিং ও স্টল ভবনের দরজা-জানালা। গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয় বিমান বন্দরটি। কাপেটিং উঠে ঘাস গজায়। ময়লা আবর্জনায় ভড়ে গেছে রানওয়ে। পশ্চিম পাশ্বে তৈরী করা হয় খেলা মাঠ। ক্রিকেট খেলার পিচ হিসেবেও ব্যবহার করা হয় রানওয়ে। এর দু’পাশ অপরিষ্কার হয়ে পড়লেও মাঝ দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল থাকায় তা কিছুটা পরিষ্কার রয়েছে। সেখানে কয়েক বছর ধরে চলছে প্রতি মৌসুমে ধান, গম ও ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ। এছাড়াও রানওয়েতে সারা বছর ধান, গম ও ভুট্টা সহ গৃহস্থালি পন্য সামগ্রী শুকায় স্থানীয়রা। বর্তমানে কয়েক জন রানওয়েতে অস্থায়ী ঘড় নির্মাণ করে সেখানে ট্রাক্টর গেরেজ করে ভুট্টা মাড়াইয়ের মেশিন বসিয়ে ভুট্টা মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছেন। রানওয়েটি ব্যবহার করছেন যে যার মত করে। রানওয়ের পশ্চিম পাশ্বে রাখা হয়েছে সাড়ি সাড়ি খড় ও ভুট্টা ডাটার স্তুপ। স্টল ভবন ঘেষে শুকানো হচ্ছে ভুট্টা।

শনিবার দুপুরে ভুট্টা শুকানোর কাজে ব্যস্ত কয়েক জন শ্রমিক জানান, আশেপার্শ্বে কোন চাতাল না থাকায় এলাকার লোকজন এটিকেই চাতাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। কেউ কিছু বলে না এজন্য যে যার মত করে ব্যবহার করছে। ধান, গম, ভিজা পাট সহ বিভিন্ন কৃষি পন্য শুকানো হয় এখানে।
এদিকে ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বিমান বন্দর পরিদর্শন করে ১ বছরের মধ্যে চালু করা আশ্বাস দেন। এতে উত্তরের অবহেলিত সীমান্ত ঘেঁষা জেলা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার মানুষ আশায় বুক বাধে।

কিন্তু পরের বছর ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ে এসে ঐ মন্ত্রী বলেন, বিমান বন্দর চালু করা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বিমান বন্দরটি চালু করতে যে অর্থের দরকার তা মন্ত্রণালয়ের নেই। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে হতাশ হয় দু’জেলার মানুষ। তারা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ জানান। বিমান বন্দর চালুর জন্য মন্ত্রীকে ঘেড়াও করেন। কিন্তু লাভ হয়নি।

এরপর চলতি বছরের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাওয়ে আসেন। তখন অন্যান্য দাবির মধ্যে বিমানবন্দর চালু করার দাবিটিও জড়ালো হয়। কিন্তু এবারো এ বিষয়ে কোন ঘোষনা পাওয়া যায়নি।

অথচ ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে এ বিমান বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশী।কারণ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু থাকা এবং এ বন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের বিভিন্ন পন্য সামগ্রী আমদানি হওয়ায় এ অঞ্চলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে।কিন্তু রাজধানীর সাথে এর যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।এ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসা অনেকেই কষ্ট করে সৈয়দপুরে গিয়ে বিমানে উঠে ঢাকায় যান। এতে অনেকে অগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অথচ ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু থাকলে সীমান্ত পেরিয়ে তারা সহজেই ঠাকুরগাওয়ে এসে বিমানে উঠতে পারতো। এতে সময় ও কষ্ট দুটোই লাঘব হতো। তাছাড়া ডিজিটাল যুগে মানুষ এখন মহা ব্যস্ত। অল্প সময়ে দ্রুত কাজ কর্ম সাড়তে চান। এজন্য বাস বা ট্রেনের অপেক্ষায় না থেকে ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড়ের অনেক মাসুষ এখন প্রতিদিন বিমানে ঢাকায় আসা যাওয়া করছেন।
ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বিমানের টিকি বুকিং দেওয়ার জন্য রয়েছে অনেক বুকিং অফিস হয়েছে। প্রতিদিন এ অফিস গুলো তে গড়ে ৪০-৪৫ টি টিকিট বুকিং হয় ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য। এ অবস্থায় ঠাকুরগাঁও এয়ারপোর্ট চালু হলে পঞ্চগড়, দিনাজপুর সহ ঠাকুরগাঁওয়ের লোকজন সহজে এ বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে পারবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভা এয়ারলাইন্সের এর মালিক জিয়াউল ইসলাম বকুল জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকিট অনেক বিক্রি হয়। যে পরিমান চাহিদা আমারা সে পরিমান সেবা দিতে পারছি না। টিকিট না পেয়ে মানুষ ফিরে যায়। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে বিমান বন্দর চালু হলে বিমান খাত লাভজনক খাতে পরিনত হবে ও মানুষ কম সময়ে দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় পৌছুতে পারবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরটি চালু হলে ভারতের অনেক ব্যবসায়ি এটির সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ে ভাল না হওয়ায় ঢাকার ব্যবসায়িদের এই অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ নেই। যদি বিমান বন্দর পুনরায় চালু হয়। তাহলে এই এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে। কার্গো বিমান চালু হলে অন্য জেলা থেকে মালামাল পরিবহন করা যাবে এবং এ এলাকার মালামাল সহজে ও কম খরচে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে।

ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলীর মতে, ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দর চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।পড়ে আলোর মুখ দেখেনি। বিমান বন্দরটি চালু হলে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ সুবিধা ভোগ করবে না আশের পাশের কয়েকটি জেলায় কয়েক লক্ষ মানুষ এর সুবিধার আওতায় আসবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহম্মদ সাদেক কুরাইশী বলেন, সড়ক পথে ঢাকা যাওয়া ঝুকিপূর্ণ। ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি চালু হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে।

জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান বলেন, বিমান বন্দর চালু হোক এটা কে না চায়। এখানে বিমানের লোকবল নেই। তাই বন্দরের অবকাঠামো সঠিকভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা আছে। কিন্তু অনেক অর্থের দরকার। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা লাগবে। আমি এর জন্য চেষ্টা করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়