শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০২:৩১ রাত
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০২:৩১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দাতব্য প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসনে কপাল পুড়ল হতদরিদ্রের

ড. সা’দত হুসাইন : ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময় যখন আমাদের লাল রঙ এর কোরবানির গরুটির দাম ছিল মাত্র আশি টাকা তখন থেকে পারিবারিক পর্যায়ে ঈদ-উল-আযহার আচার অনুষ্ঠান সংক্রান্ত কার্যাবলীর সাথে আমি সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছি। বাবা বা বড় ভাই এর সাথে ব্যারাক মাঠ থেকে গরু কিনে আনা, ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত একে লালন-পালন করা, জবাই এর পর মাংস কাটা, দেখাশোনা করা, মাংস বিতরণ করা ইত্যাদি কাজে আমার উৎসাহ-আয়োজনের কমতি ছিল না। গরু কাটা শেষ হওয়ার পর এর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে বেলুন বানানো, ডুগডুগি বানানো, গরুর শুকনা হাড্ডি এবং শিং দিয়ে সমবয়সী হিন্দু ছেলেদেরকে ভয় দেখানো, বিরক্ত করা এগুলোও আমাদের আনন্দ বিনোদনের অংশ ছিল বৈকি।

বড় হওয়ার পরও কোরবানির কাজে আমার উৎসাহে ভাটা পড়েনি। বিদেশে থাকাকালীন চার বছর এ কাজ থেকে স্বাভাবিকভাবেই দূরে থাকতে হয়েছে। দেশে ফিরে এসে আবার পুরোমাত্রায় কোরবানি সংক্রান্ত কাজে সক্রিয় হয়ে পড়েছি। প্রতি বছর হাট থেকে গরু-ছাগল কেনা, ঈদের আগ পর্যন্ত গরু-ছাগলকে পরিপালন করা, যাদের নামে কোরবানি হবে তাদের নাম-পিতার নাম একটি কাগজে লিখে মৌলভী সাহেবকে দেওয়া, মাংস কাটা, সমগ্র প্রক্রিয়া তদারকি করা এবং নানা রকম প্যাকেটে সাজিয়ে গুছিয়ে  কোরবানির মাংস বিতরণ করার কাজে আমি সরাসরি জড়িত থাকি। এসব কাজ সম্পন্ন করে আমি অপার আনন্দ পাই।

কোরবানির ঈদের আর একটি বড় আনন্দ হলো হত দরিদ্রদের মাঝে চামড়ার টাকা বিতরণ। হতদরিদ্র শব্দটি ব্যবহার করছি এ কারণে যে, চামড়ার টাকা সাধারণ গরিবরা নিতে চায় না। ড্রাইভার, অফিসের পিওন, সিকিউরিটি গার্ডÑ এরা অন্যসব অনুদানের টাকা সাগ্রহে নেয়, বাড়তি কিছু টাকার জন্য অনুনয়-বিনয় করে। কিন্তু চামড়ার টাকা ওরা গ্রহণ করে না। তারা নিজেদেরকে হতদরিদ্র মনে করে না। সাধারণত ঝাড়–দার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, বাসার কাজের ছেলে-মেয়ে, কর্মহীন প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক এ শ্রেণির দরিদ্র লোকরা চামড়ার টাকা অনুদান হিসাবে গ্রহণ করে। একটি পাড়ায় কিংবা পরিবারে এ ধরণের পরিচিত দরিদ্রের সংখ্যা বেশি থাকে না। তাই চামড়ার টাকা এরা ভালোই পেয়ে থাকে। এটি এদের জন্যে উল্লেখযোগ্য বাড়তি আয়। এ আয়ের জন্য এরা উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। গত বছর পর্যন্ত আমি হতদরিদ্র গোষ্ঠীকে চামড়ার টাকা দিতে পেরেছি। বাড়তি আয় হাতে পেয়ে তারা ভয়ানক খুশি হয়েছে।

এবার ঈদেও তাদেরকে চামড়ার টাকা বাবদ কিছু বাড়তি অনুদান দিব বলে আশা করেছিলাম। পরিচিত হতদরিদ্ররাও হয়তো তেমনটি আশা করে বসেছিল। বিকেল হয়ে এল, কিন্তু কোনো চামড়ার ক্রেতা বাসায় এল না। সাধারণত আশেপাশের কিশোর তরুণরা ঈদের সময়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী বনে যায়। তারা রিকশা নিয়ে বাসার সামনে হাজির হয় এবং দরদাম করে নগদ টাকায় চামড়া কিনে নেয়। এ চামড়া কোনো বিক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করে কিছু মুনাফা করে থাকে। গত ক’বছরে চামড়ার দাম পর্যায় ক্রমে কমে যাচ্ছিল। মুনাফাও কমে যাচ্ছিল। ভাবলাম যে জন্য কিশোর ব্যবসায়ীর সংখ্যা হয়তো কমে গেছে। বিকেলের দিকে তারা আসবে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে যেতে থাকলেও তাদের দেখা পাওয়া গেল না। এর মুখে ওর মুখে শুনতে পেলাম মক্তব, এতিম খানা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের লোক এসে চামড়া নিয়ে যাবে, তবে এর কোনো দাম দিবেনা। মাগনা নিয়ে যাবে।

এমন অবস্থা আমি মেনে নিতে পরছিলাম না। যদি তারা ‘মাগনা’ চামড়া নিয়ে যায় তবে কোরবানি দেওয়া গৃহস্তের কোনো ক্ষতি হবে না। চামড়ার টাকা তো তারা ব্যবহার করে না; এ টাকা বাড়তি অনুদান হিসাবে হতদরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হতদরিদ্র জনগণ। তাদের মুখচ্ছবি বারবার আমার সামনে ভেসে উঠল। এই বাড়তি অনুদানের আশায় যারা বসেছিল তাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়ল। আমি চেষ্টা করলাম আশে পাশের রাস্তায় নিয়ে চামড়া বিক্রি করা যায় কিনা। অন্যান্য বছর রিক্সা নিয়ে রাস্তায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঘুরতে থাকে। কিন্তু এবার রাস্তায় তেমন কোনো কিশোর ব্যবসায়ী দেখা গেল না। যে সব আত্মীয় স্বজনের বাসায় গোস্ত বিতরণ করলাম, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এবার কেউ চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। মক্তব, হেফজখানা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে লোক এসে ‘মাগনা’ চামড়া নিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় মাইক্রো বাস থেকে ঘোষণা দিয়ে নির্দেশ আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোরবানির চামড়া এসব প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। বোঝা গেল, যেকোনো উপায়ে হোক না কেন, একধরণের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। কাদের প্রশ্রয়ে বা প্রভাবে এ ধরণের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে তা ভালোভাবে জানা যায়নি। তবে এ সিন্ডিকেট একপ্রকার শক্তি প্রয়োগ করে চামড়া ‘মাগনা’ নিয়েছে।

যারাই এরূপ সিন্ডিকেট তৈরি করুক না কেন তারা হতদরিদ্র লোকের ভয়ানক ক্ষতি করেছে। হতদরিদ্র গোষ্ঠীকে নিষ্ঠুরভাবে বঞ্চিত করে নিজেদের সমর্থিত প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়িয়ে তারা সমাজের কোনো উপকার করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এ পর্যায়ে বিষয়টিকে প্রগাঢ় আলোচনার জন্য সাধারণ্যে উপস্থাপন করা হলো।

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়