শিরোনাম
◈ ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:১৯ সকাল
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিনিয়র চিকিৎসকরা তাহলে কী করেন!

ডেস্ক রিপো্র্ট : সদ্য এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকদের হাসপাতালে যুক্ত করা হয় মূলত প্রশিক্ষিত করে তুলতে। নিয়ম অনুযায়ী এ সময় তাদের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের কাছ থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা। এভাবে অর্জিত অভিজ্ঞতা তারা কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার পর বাস্তবে প্রয়োগ করেন। অথচ শিক্ষানবিশ এই চিকিৎসকরাই পর্যায়ক্রমে চব্বিশ ঘণ্টা রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করছেন। আর যাদের কাছ থেকে তাদের হাতে-কলমে শিক্ষা নেওয়ার কথা, সেই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা কার্যত ব্যস্ত থাকছেন প্রাইভেট প্র্যাকটিসে।

এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা- এই ছয় ঘণ্টার পর জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা হাসপাতালে থাকেন না। অনেকে নির্ধারিত সময়ের পর হাসপাতালে আসেন। আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্মস্থল ছেড়ে যান। অনেকে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের অজুহাতে হাসপাতালে আসেন না। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষানবিশ ও অবৈতনিক চিকিৎসকদেরই রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে রোগীদের শুধু উৎকণ্ঠিত, হয়রান ও অবসাদগ্রস্তই হতে হচ্ছে না, চিকিৎসাসেবা পেতেও দেরি হচ্ছে। অনেকে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। সুচিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে- এমন অভিযোগ ওঠার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নেতৃত্বে সান্ধ্যকালীন রাউন্ড চালুর নির্দেশ দেন। কিন্তু এ নির্দেশের পরও অবস্থা পাল্টায়নি। দুপুর আড়াইটার পরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন তারা। এ সময় যত ঝুঁকিপূর্ণ রোগীই আসুক না কেন, তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হচ্ছে মেডিকেল অফিসার, অবৈতনিক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের। খুব প্রয়োজন হলেও দেখা মিলছে না কোনো অধ্যাপক, সহযোগী বা সহকারী অধ্যাপকের। ছুটির দিনে পরিস্থিতি হচ্ছে আরও খারাপ।

রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ ও অবৈতনিক অন্তত ১০ জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে তাদের শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হয়। রোগীর কথা শুনতে হয়, তথ্য লিখতে হয়। পরদিন সকালে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক আসার পর তাকে রোগীর সার্বিক বিষয় জানানোর জন্য প্রয়োজনীয় নোট নিতে হয়। এর আগ পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। এত দায়িত্ব পালন করলেও তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় খুব কম। বছরে ছুটি মেলে মাত্র ১৫ দিন। বেতন দেওয়া হয় মাসে মাত্র ১৫ হাজার টাকা।

শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের এই অবস্থা অনেক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকও জানেন। চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কাজের চাপ বেশি। তারা সরকারি চাকরি করেন না। তাদের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের কাছ থেকে হাতে-কলমে শিক্ষা নেওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে তারা কাজ করছেন পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে। যদিও এ জন্য তাদের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।

কার কী কাজ :এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা এক বছরের জন্য হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেবেন। এর মধ্যে তারা ১১ মাস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে, ১৫ দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করবেন। এ সময় তারা ছুটি পাবেন ১৫ দিন।

চিকিৎসকদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী, শিক্ষানবিশ সময়কাল শেষে চিকিৎসকরা রোগীর সমস্যা সঠিকভাবে অনুধাবন করে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রার ডা. জাহিদুল হক বাসুনিয়া বলেন, এমবিবিএস ও বিডিএস পাসের পর শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য সাময়িক সনদ দেওয়া হয়। সফলভাবে শিক্ষানবিশকাল শেষ করার পর সাময়িক সনদ ফেরত নিয়ে পেশা চর্চার স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এবং বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কোনো লিখিত ও অলিখিত নির্দেশনা নেই। কনভেনশনাল পদ্ধতিতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতি পরিচালিত হয়ে আসছে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালে ছুটির দিন বাদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর হাসপাতালে অভ্যন্তরীণভাবে রোস্টার পদ্ধতিতে বাকি ১৮ ঘণ্টা রোগীর চিকিৎসা চলে। এ সময় ওয়ার্ডগুলো সংশ্নিষ্ট বিভাগের একজন সহকারী রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকে। তার সহযোগী হিসেবে কয়েকজন মেডিকেল অফিসার কাজ করেন। আর হাতে-কলমে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিতে অবৈতনিক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকেন। এই সময়ের মধ্যে কোনো রোগী কঠিন বিপর্যয়ে পড়লে সংশ্নিষ্টরা সহকারী রেজিস্ট্রারকে জানাবেন। তিনি কোনো সমাধান করতে না পারলে বিষয়টি পর্যায়ক্রমে রেজিস্ট্রার ও অধ্যাপককে জানানো হবে। তবে রাতে বিভাগীয় প্রধান ও ইউনিটের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক অবৈতনিক ও ইন্টার্নি চিকিৎসকদের নিয়ে রাউন্ড দেবেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে ঈদের আগে প্রায় তিন দিন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। অবৈতনিক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা দিতে দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো হাসপাতালের ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসকই পাওয়া যায়নি।

বাড়তি অর্থ আয়ের পথ হিসেবে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ঝুঁকে পড়া, দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণের প্রভাবকে এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই মাহবুব। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরির পেছনে চিকিৎসকরা নিজেরাই দায়ী। জ্যেষ্ঠদের অনুসরণ করে নতুন চিকিৎসকরাও একই ধরনের চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

এ ধরনের চর্চা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে ডা. রশিদ-ই মাহবুব আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রাউন্ডের বিষয়ে অতীতে কোনো মন্ত্রীকে এমন নির্দেশনা দিতে হয়নি। তারা নিজ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই কাজ করতেন। তিনি যখন তরুণ চিকিৎসক ছিলেন তখন এ রকমই দেখেছেন। নিজে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক থাকার সময়ও তিনি এ কাজ করেছেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবস্থাপনার কাজ এগিয়ে চলছে। তবে রোগীর সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসকদের আরও আন্তরিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে- তারা মানবসেবার ব্রত নিয়ে এই মহান পেশায় এসেছেন। সূত্র :সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়