শিরোনাম
◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর

প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:১১ সকাল
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেগার খাটছেন ৫২০০ শিক্ষক

ডেস্ক রিপোর্ট : টানা আট মাস বিনা বেতনে ক্লাস নিচ্ছেন সারাদেশের ৫ হাজার ২০০ শিক্ষক। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের অভিজ্ঞ এবং দক্ষ শিক্ষক তারা। এ কারণেই দুর্গম এলাকার দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের জন্য তাদের নিয়োগ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের 'টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট' (টিকিউআই)।

গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্প শেষ হয়ে যায়। কথা ছিল, নতুন প্রকল্প নেওয়া হলে ফের নিয়োগ দেওয়া হবে এই শিক্ষকদের। তাই গত জানুয়ারি থেকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয় তাদের। সে হিসেবে তারা বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরণের কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদে বেতন-বোনাস কোনো কিছুই পাননি। মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশে বিনা বেতনে খাটছেন। তবে এখন নতুন প্রকল্পের সব কিছু প্রস্তুত করা হলেও এই শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে রাজি নন সংশ্নিষ্টরা। তারা চান নতুন করে নিয়োগ দিতে। এতে এই শিক্ষকদের তীব্র আপত্তি। তাদের বক্তব্য, নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্যই নতুন নিয়োগ দিতে চান প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা। নইলে তারা একবার নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েই এ প্রকল্পে কাজ করছেন। অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবেও তারা সুনাম কুড়িয়েছেন। তাদের কারণেই দুর্গম, প্রত্যন্ত গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও এখন অঙ্ক, ইংরেজি ও বিজ্ঞানে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল করছে। তাহলে কেন তাদের আবারও নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে হবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক সংকট রয়েছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক থাকলেও তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলের নিজস্ব বিভিন্ন পরীক্ষাসহ পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ভালো ফল করতে পারছিল না। মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সরকার সেকায়েপ নামে একটি প্রকল্প চালু করে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি চালু করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার চারশ' ৮০ কোটি টাকা।

সেকায়েপ প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের অতি দুর্গম ৬৪টি উপজেলার দুই হাজার ১১টি স্কুলে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রায় ছয় হাজার অতিরিক্ত শিক্ষক (এসিটি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই প্রকল্প শেষ হওয়া পর্যন্ত পাঁচ হাজার ১৮৭ জন শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে শিক্ষকরা স্কুলে পাঠদান শুরু করেন। যাদের স্নাতকে প্রাপ্ত নম্বর ৫০ শতাংশের বেশি ছিল, কেবল তাদেরই আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। শেষ হওয়া প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়াসহ শিক্ষকদের মাসিক বেতন ছিল ১৪ হাজার টাকা। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী সর্বশেষ ২২ হাজার ২০০ থেকে ২৭ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত এই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়।

প্রকল্প-সংশ্নিষ্টদের দাবি, উপজেলা পর্যায়ে আকর্ষণীয় বেতন দেওয়ায় এসব শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করছেন। নিয়মিত ক্লাসের বাইরে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মাসে অন্তত ১৬টি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজিভীতি কমেছে। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মান এবং প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া কমেছে। অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়া ও কোচিং করার প্রবণতা কমেছে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রকল্পভুক্ত প্রায় সব স্কুলেরই শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পাঠাগার স্থাপন, মেধাবৃত্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এ প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়। এসব সুবিধা নিয়ে পিছিয়ে পড়া এলাকার শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে মাধ্যমিকে অতিরিক্ত শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন হোসেন বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পর মৌখিকভাবে তাদের ক্লাস চালিয়ে নিতে বলা হয়। আবার তাদের এমপিওভুক্ত করারও আশ্বাস দেওয়া হয়। এই শিক্ষক নেতা বলেন, তারা এখন নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দুর্গম এলাকার স্কুলগুলো এসিটি নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। আমরা স্কুলে না থাকলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে স্কুলে আর পড়াবেন না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন। একাধিক এসিটি শিক্ষক অভিযোগ করেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক গ্রুপ চাচ্ছে এসিটি শিক্ষকদের নতুন প্রকল্পে নিয়োগ দিতে। অন্য গ্রুপ শিক্ষকদের বিদায় করতে চান। নতুন প্রকল্পে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিলে বাণিজ্য করার সুযোগ তৈরি হবে। তারা আরও বলেন, তাদের নিয়োগ দেওয়ার সময়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত করা অথবা প্রকল্প শেষে নতুন প্রকল্পে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। প্রতি মাসে বেতন বাড়ানোর শর্ত ছিল। নিয়োগের প্রথম বছর শুধু বেতন বেড়েছে। তারপর আর বাড়েনি। প্রকল্পের মেয়াদ যত শেষ হতে থাকে, সুযোগ-সুবিধা ততই কমছিল।

একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সেকায়েপ প্রকল্পের একটি সফল উদ্যোগের মধ্যে ছিল এসিটি শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হয়েছে। এসিটি শিক্ষকরা অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছেন। তারা ভালো মানের দক্ষ শিক্ষক। তাদের পাঠদানের কারণে শিক্ষার্থীদের কোচিং ও প্রাইভেট নির্ভরতা অনেক কমেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এসিটি শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৌশিক চন্দ্র বর্মণ বলেন, ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত শিক্ষকদের অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর বা স্থায়ী করা হয়নি। যদিও সেকায়েপের প্রকল্প ম্যানুয়ালে স্পষ্ট লেখা আছে, জনবল স্থায়ী বা পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তর হবে। প্রকল্প ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মৌখিক আশ্বাস ও ২০ লাখ শিক্ষার্থীর কথা ভেবে আট মাস ধরে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, নতুন নিয়োগের প্রস্তাব ৫ হাজার ২০০ শিক্ষক মানতে রাজি নন।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, এসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। সেই সিদ্ধান্তে তারা এখনও বহাল আছেন।

তবে এসিটি শিক্ষকদের বক্তব্য, এমপিওভুক্ত করা হলে তাদের পাঁচ হাজার শিক্ষকের মধ্যে অন্তত তিন হাজারই নীতিমালার কারণে বাদ পড়বেন। তাহলে এতে তাদের কী লাভ হবে? শিক্ষকদের চাওয়া, তাদের নতুন প্রকল্পে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা হোক।সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়