মতিনুজ্জামান মিটু : অসময়ে বাণিজ্যিকভাবে বেল চাষ, কমাবে ফলের আমদানি নির্ভরতা। বারি বেল-১ এর মূক্তায়ন এবং আরো কয়েকটি সম্ভাবনাময় জাত চিহ্নিত হওয়ায় চাষিরা অন্যান্য ফলের মতো বেলও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারবে। ইতোমধ্যে পাবনা জেলার সফল চাষি আলহাজ্ব মো. শাহজাহান আলী (পেঁপে বাদশা) সর্ব প্রথম বেলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন। তিনি চাপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কয়েকটি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে নিজের জমিতে লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার বেল গাছের সংখ্যা ৩৫০টি।
কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, বেলের আদি নিবাস বাংলাদেশ ও ভারতে। পছন্দের এই ফলটি ইন্দোনেশিয়ায় মাঝা ও থাইল্যান্ডে মাতুনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই ফলকে আরবিতে সাফারজাল এবং হিন্দি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় বেল নামেই ডাকা হয়। বেল বাংলাদেশে চাষযোগ্য একটি অপ্রধান দীর্ঘমেয়াদি ফল। তবে অপ্রধান ফল বিবেচিত হলেও এর বহুবিধ ব্যবহার এবং পুষ্টিগুণ কোনো অংশেই কম নয়। ছোট বড় সবাই এটিকে পছন্দ করে থাকেন। এদেশের সব জেলাতেই বেলের গাছ জন্মাতে এবং ফল দিতে দেখা যায়। সাধারণত বাড়ির আশপাশ, পুকুর পাড় ও রাস্তার ধারে অযতœ অবহেলায় জন্মে থাকে পুষ্টি এবং ঔষধিগুণের এই বেল। বীজের গাছ থেকে বেল পেতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগার কারণে বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত এদেশে বাণিজ্যিকভাবে কোনো বেলের বাগান করতে দেখা যায়নি।
সারা বছরে দেশীয় ফলের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের তাগিদ থেকে ২০০৬ সালে বাছাইকরা কয়েকটি অপ্রধান ফলের মধ্যে চাপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বেলেরও প্রদর্শনী আয়োজন করে। ২০০৭ সালে থেকে কেন্দ্রটি বেলের ২২টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং কলম করে। সংগ্রহ করা জার্মপ্লাজম থেকে দীর্ঘ ৯ বছর গবেষণার পর বারি বেল-১ নামের একটি জাত মুক্তায়ন করা হয়। এই জাতটি বাংলাদেশের সব জেলাতেই জন্মাতে এবং ফলন দিতে সক্ষম। আশা করা যায়, বেলের এই জাতটি চাষাবাদ করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এতে অসময়ে দেশীয় ফলের চাহিদা অনেকাংশেই মিটবে।
বারি বেল-১ ছাড়াও আরো কয়েকটি সম্ভাবনাময় জার্মপ্লাজম পাওয়া গেছে। এর মধ্য থেকে চলতি মৌসুমে আরো একটি জার্মপ্লাজমের মূল্যায়নের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই বেলটি ৩ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদিকে গতবছর থেকে বারি বেল-১ এর কলম বিতরন শুরু হয়েছে। এই জাতটি কলমের মাধ্যমে জন্মানো যাবে। মাতৃগাছের গুণাগুণ হুবহু অক্ষুণœ থেকে ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ফল আসবে।
মাঝারি আকারের নিয়মিত ফলদানকারি এই ফলের প্রতিটির গড় ওজন ৯০০ গ্রাম। কাঁচা বারি বেল-১ এর রঙ সবুজ। হালকা সবুজ হতে হালকা হলুদ বর্ণের পাকা ফলের খাদ্যোপযোগি অংশ ৭৮ ভাগ। সাত বছর বয়সী গাছপ্রতি গড় ফলের সংখ্যা ৩৮টি এবং গড় ফলন কেজি/গাছ/বছর। হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ১৪ মেট্রিক টনের মতো। তবে গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলনও বাড়বে। এই জাতটি সংগ্রহের সময় মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত। বর্তমানে যতগুলো ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় তার মধ্যে বেলে সবচেয়ে কম বালাইনাশকের ব্যবহার হয় এবং বেশি সময় গাছে থাকে। বেলের ফুল আসা থেকে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত ১১ মাস সময় লাগে।
দেশীয় এই ফল সবচেয়ে নিরাপদ। কাঁচা ও পাকা বেলের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। পাকা বেলের শাঁস গাছ থেকে পেড়ে সরাসরি খাওয়া যায়। এছাড়াও পাঁকা বেলের শাঁস শরবত, জ্যাম, জেলি, চাটনি, স্কযাস, বেভারেজ ও বিভিন্ন ধরণের আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর নানা দেশে বেলের পাতা ও ডগা সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :