ডেস্ক রিপোর্ট : জনশক্তি রফতানিতে অশনি সঙ্কেত দেখা দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ শ্রমবাজার সউদী আরবে কর্মী নিয়োগের চাহিদা হ্র্রাস পাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাসে দশ সিন্ডিকেট চক্রের কর্মী নিয়োগের চলমান প্রক্রিয়া (এসপিপিএ) সম্প্রতি স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটির নতুন সরকার।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহথির মোহাম্মদ দেশটিতে কর্মী নিয়োগে দশ সিন্ডিকেটের মনোপলি ব্যবসা ভেঙ্গে দিয়ে সকল সোর্স কান্ট্রির একক নিয়মে প্রত্যেক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী শনিবার থেকে দশ সিন্ডিকেটের কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াধীন প্রায় ২০ হাজার কলিং ভিসার কর্মীরা দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ১৯ আগষ্ট পর্যন্ত চিহ্নিত দশ সিন্ডিকেট বর্হিগমন ছাড়পত্র নিয়ে এসপিপিএ-এর মাধ্যমে চড়া অভিবাসন ব্যয়ের বিনিময়ে ২ লাখ ১ হাজার ৮৬৬ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চলমান না থাকলে জনশক্তি রফতানিতে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারীরা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে কুয়েতে পুরুষ-মহিলা গৃহকর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। কুয়েতের কোম্পানিগুলোতে অল্প সংখ্যায় কর্মী যাচ্ছে। দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারও চালু হচ্ছে না। দেশটিতে হাতে গোনা কিছু কর্মী যাচ্ছে। বিএমইটির সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে গত ২৬ আগষ্ট পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। গত বছর বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছিল।
গত বছরের জুলাই মাসে ৭৬ হাজার ২১৫ বিদেশে গিয়েছিল। আর গত জুলাই মাসে ৫৮ হাজার ৬২৭ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছে। গত বছরের আগষ্ট মাসে ৯৩ হাজার ৩৪১ জন বিদেশে গিয়েছিল। আর চলতি আগষ্ট মাসে ৩৮ হাজার ৪৬৫ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছে। গত বছর সউদী আরবে চাকরি লাভ করেছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ জন নারী-পুরুষ। আর চলতি বছরের সাত মাসে সউদী আরবে চাকরি লাভ করেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৭৭ জন নারী-পুরুষ। গত বছর সউদী আরবে ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন নারী কর্মী চাকরি লাভ করেছিল। আর চলতি বছরের সাত মাসে সউদীতে ৪৫ হাজার ৫৩৯ জন নারী কর্মী চাকরি লাভ করেছে।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এসেছিল ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম মাসে এসেছিল ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৩৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারনে রেমিটেন্স বেড়েছে।
বিএমইটির মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা গতকাল বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়নি। শুধু দশ সিন্ডিকেটের কর্মী নিয়োগের চলমান প্রক্রিয়া (এসপিপিএ) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ এখন থেকে দেশটিতে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে।
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে কোনো হতাশার কিছুই নেই। ভ্রাতৃ-প্রতীম মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের অত্যান্ত ভালো সর্ম্পক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। মালয়েশিয়ায় কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশটির অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। দেশটিতে বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বায়রার মালয়েশিয়া সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি’র সাবেক সভাপতি ও ইর্স্টান বে-বাংলাদেশ-এর স্বত্বাধিকারী মো: গিয়াস উদ্দিন বাবুল গতকাল বলেন, বাংলাদেশ থেকে দশটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনশক্তি নেয়ার এসপিপিএ প্রক্রিয়া বন্ধ করার পর এখন নতুন একটি পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। যে নিয়ম বাংলাদেশসহ সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে এবং সব লাইসেন্সধারী এজেন্টই শ্রমিক প্রেরণের সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, বর্তমানের প্রক্রিয়াধীন কলিং ভিসার অপেক্ষমান কর্মীরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তার এজেন্সি’র ৫০ জন কলিং ভিসার কর্মী আগামী ৩ সেপ্টেম্বর এয়ার এশিয়া এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাবে। তিনি বলেন, আগামীকাল ও পরশু কলিং ভিসার শতাধিক কর্মীকে মালয়েশিয়ায় প্রেরণের জন্য টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সূত্র : ইনকিলাব
আপনার মতামত লিখুন :